টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষের দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড়
- গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি
- ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৫
টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সংবাদ প্রকাশের পর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি টঙ্গীর সর্বত্রই প্রধান আলোচনা হিসেবে স্থান পায়। প্রকাশিত সংবাদে আলোচিত দুর্নীতিসহ অধ্যক্ষের আরো বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়েও সমালোচনার ঝড় বইছে। তাকে অপসারণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
এ দিকে সাধারণ শিক্ষকরা জানান, অধ্যক্ষ মো: আলাউদ্দিন মিয়া অবৈধ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য থাকা অবস্থায় নিজস্ব ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের পদ বাগিয়ে নেন। অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের আগে গভর্নিং বডির সদস্য পদ বাগিয়ে নিতে নিজের সন্তানকে প্রতিষ্ঠানটিতে সাময়িক সময়ের জন্য ভর্তি করেন। পরে বিনা নির্বাচনে দলীয় বিবেচনায় গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য মনোনীত হন। এভাবে অধ্যক্ষের পদে আসীন হওয়ার চূড়ান্ত লক্ষ্য হাসিলের পর প্রতিষ্ঠানটি থেকে সন্তানকে উত্তরার একটি নামী-দামি প্রাইভেট স্কুলে স্থানান্তর (ভর্তি) করেন।
অভিভাবকরা জানান, আলাউদ্দিন মিয়া আরো আগে থেকেই নামে বেনামে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সাথে জড়িত। বর্তমানে নিজের ভাইকে দিয়ে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বিগত ২০১৩ সালের ২৮ মে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেয়ার পর এ প্রতিষ্ঠানটিকেও বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করে আসছেন।
তারা আরো জানান, আওয়ামী লীগ দলীয় গাজীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি ও ক্রীড়ামন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের মদদপুষ্ট আলাউদ্দিন মিয়া কোনো নিয়মকানুন মানেন না। তিনি ৭ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে স্বৈরাচারী কায়কায় টঙ্গীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। টানা ১১ বছর অ্যাডহক কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানের মার্কেট, টিউশন ফি ও পরীক্ষার ফিসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করছেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানের পশ্চিম পাশের একটি রাস্তার জায়গা পাশের বাড়ির মালিকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া এ পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সুযোগ দেয়ার নামে অধ্যক্ষের সহযোগী পরিদর্শক আবু জাফর আহমদের মাধ্যমে বিগত বছরগুলোতে অভিভাবকদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি আবু জাফরসহ দুই শিক্ষকের সনদ জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে মাউশির একটি তদন্ত কমিটি।
নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের কাছ থেকে কথিত কোচিং ফির নামে ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, কলেজ ড্রেসের জন্য প্রতি বছর ছাত্রী প্রতি ৩৯৫০ টাকা নেয়া হলেও নিম্নমানের কাপড় দিয়ে তা তৈরি করা হয়। এই ড্রেস তৈরিতে প্রতিষ্ঠানের খরচ হয় মাত্র ১৮০০ টাকা। বাকি টাকা অধ্যক্ষ সিন্ডিকেট সদস্যদের নিয়ে ভাগাভাগি করে নেন। প্রতিষ্ঠানের মাঠের চার পাশে একটি ডেভেলপার কোম্পানির উদ্যোগে গাছের চারা লাগানো হয়। অথচ এই খাতে প্রতিষ্ঠানের ২৫ লাখ টাকা খরচ দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। উচ্চ আদালত একবার অধ্যক্ষকে রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপ ফি বাবদ অতিরিক্ত ১৬ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার আদেশ দিলেও তিনি এ পর্যন্ত কোনো টাকা ফেরত দেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া সব অভিযোগ অস্বীকার করে বরাবরের মতোই বলেছেন, আমি গভর্নিং বডি দ্বারা পরিচালিত। এ ক্ষেত্রে আমার একার পক্ষে দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।