৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ টঙ্গী পাইলট গার্লস কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে
- শেখ আজিজুল হক গাজীপুর মহানগর
- ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বিদ্যালয়ের মাঠে মার্কেট নির্মাণ করে পজিশন বিক্রিসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির আশ্রয়ে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে এ ব্যাপারে পৃথক অভিযোগ করেছেন অভিভাবক এবং শিক্ষক ও কর্মচারীরা। আলোচিত ওই অধ্যক্ষের নাম মো: আলাউদ্দিন মিয়া। তিনি আওয়ামী লীগ পন্থী স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাচিপ) গাজীপুর শাখার সভাপতি। টঙ্গীর প্রাণকেন্দ্র ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের আউচপাড়ায় সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। এ ওয়ার্ডেই অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার বাড়ি।
অভিযোগকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া দলীয় প্রভাবে বিগত ২০১৩ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের পরই বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এলাকাবাসীর আপত্তি উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ের মাঠ ও পাশের সরকারি রাস্তা সংকোচিত করে ২০১৯ সালে তিনি মার্কেট নির্মাণ করেন। বিদ্যালয়ের মাঠটি যুগ যুগ ধরে টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতি বছর স্থানীয় সরকার বিভাগ ওই ময়দানে সরকারি অর্থায়নে পবিত্র ঈদের প্যান্ডেল নির্মাণ করে। এলাকার ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে অধ্যক্ষ নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হতেই স্কুল মাঠের দক্ষিণ পাশের বিশাল এলাকাজুড়ে মার্কেট নির্মাণ করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। একই সাথে মাঠের উত্তর পাশের পুরনো একতলা মার্কেটের ছাদে প্ল্যান বহির্ভূতভাবে দ্বিতলা মার্কেটও নির্মাণ করেন। এ দু’টি মার্কেটের দোকানপজিশন বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা তছরুফ করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের কিছু দিন পরই তিনি স্কুল মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের বিশাল জায়গা দখল করে নিজস্ব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। এনএফসি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট নামে ওই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করেন অধ্যক্ষের সহোদর আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিনের নামে।
টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর বিনা ভাড়ায় লাভজনকভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্টুরেন্টটি পরিচালনা করেন। একই সাথে এ রেস্টুরেন্টের নামে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবার খরচের ভুয়া ভাউচার বানিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা কুক্ষিগত করেন। পরবর্তীতে রেস্টুরেন্টটি ভেঙে সেখানে ৭টি পৃথক দোকানসহ স্কুলমাঠের পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি বিশাল এলাকায় আলোচিত মার্কেট নির্মাণ করেন। মার্কেটের প্রতি স্কয়ার ফিট জায়গা প্রায় ১৫ হাজার টাকা দরে মোট ২৫টি দোকান অন্যত্র বিক্রি করা হলেও এক-তৃতীয়াংশ টাকাও প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা দেননি। অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার শ্যালিকা সেলিনা খাতুন, সহোদর এম এম হেলাল উদ্দিন, বন্ধু উন্মুুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান মোড়লসহ বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনের নামে প্রথমে দলিল করে পরবর্তীতে তিন থেকে চার গুণ মূল্যে এসব দোকান অন্যত্র হস্তান্তর করেন। অধ্যক্ষের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, তিনিসহ চারজন মিলে মার্কেটের ১০৫৯ স্কয়ার ফিট জায়গা বরাদ্দের জন্য অধ্যক্ষকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু তাদের পরিবর্তে রেজুলেশনে অধ্যক্ষের শ্যালিকা সেলিনার নামে বরাদ্দ দেখানো হয়। পরে তারা জানতে পারেন প্রকৃত হস্তান্তরমূল্য গোপন রেখে বাকি টাকা আত্মসাতের জন্যই অধ্যক্ষ নিজের শ্যালিকার নামে বরাদ্দ দেখিয়েছেন।
অপর দিকে সিটি করপোরেশনের আপত্তি উপেক্ষা করে স্কুলমাঠের উত্তর পাশের পুরনো একতলা মার্কেটের ছাদের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে প্ল্যান বহির্ভূত দ্বিতলা মার্কেট নির্মাণ করেন। সেখানেও ২১টি দোকান ২৭ থেকে ৩৫ লাখ টাকা দরে বিক্রি করা হলেও প্রতিষ্ঠানের তহবিলে এর অর্ধেক টাকাও জমা দেননি। এভাবে অধ্যক্ষ কলেজের মাঠের দুই পাশের মার্কেটে দোকান পজিশন বিক্রিসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এমনকি সর্বশেষ দ্বিতলা মার্কেটের একটি সিঁড়িও (পশ্চিম পাশের) বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ওই সিঁড়ি বন্ধ করে সেখানে দোকান নির্মাণ করে স্কুলের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক প্রতিনিধি জাফর আহমেদের নামে মাত্র ৩ লাখ টাকায় বরাদ্দ দেখানো হয়। পরবর্তীতে সেই দোকান ৩৩ লাখ টাকায় অন্যত্র বিক্রি করে দেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোাগ করা হলে অধ্যক্ষ মো: আলাউদ্দিন মিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি, যা করেছি গভর্নিং বডির অনুমতি নিয়েই করেছি, কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়নি।