২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বেরিয়ে আসছে কুবি’র আওয়ামী ভিসি মঈনের অনিয়ম-দুর্নীতি বলয়ের ফিরিস্তি

-


ভিসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে গত আড়াই বছরে নিয়োগবাণিজ্য, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মকে প্রতিষ্ঠিত করতে শিক্ষকদের একটি পক্ষকে অবাধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যক্তিগত বলয় তৈরি করেছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন।
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে অমান্য করে গত বছর আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির মেম্বার হন তিনি।
এছাড়াও গত বছর ‘দুর্নীতি হচ্ছে বলে দেশে উন্নতি হচ্ছে’ বক্তব্য দিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েন এই ভিসি। সবশেষ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১৯ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন প্রশাসন নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ভিসি আবদুল মঈনের অনিয়ম-দুর্নীতির সুফলভোগীদের আলোচনা নতুনভাবে সামনে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভিসির বলয়ে থেকে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন সাবেক প্রক্টর ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক কাজী ওমর সিদ্দিকী। ভূমিবাণিজ্য, ছাত্ররাজনীতিতে অছাত্র-বহিরাগতদের দিয়ে হস্তক্ষেপ ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদ, সিনিয়র শিক্ষককে লাঞ্ছনা ও মারধর এবং অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পিএইচডি গ্রহণসহ নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন তিনি। তবে আবদুল মঈনের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এসব ঘটনার কোনো বিচার বা তদন্ত হয়নি। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি আবদুল মঈন ভিসি হিসেবে যোগদানের পর থেকে কাজী ওমর সিদ্দিকী নতুন ভিসিকে নিজের সরাসরি শিক্ষক বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচার করে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের মধ্য থেকে প্রক্টর নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তবে সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৭২ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ২০ জন অধ্যাপক থাকলেও সহকারী অধ্যাপক কাজী ওমর সিদ্দিকীকে প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ দেন ভিসি মঈন।
এসব বিষয়ে সাবেক প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমি যেহেতু বর্তমানে প্রশাসনিক কোনো দায়িত্বে নেই, তাই এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
ভিসি মঈনের আরেক সুফলভোগী লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক রশিদুল ইসলাম শেখ। ইউজিসির নিয়ম অমান্য করে তাকে আইকিএউসির পরিচালক বানান ভিসি মঈন। এরপর থেকেই প্রশাসনকে খুশি করতে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। সিনিয়র শিক্ষককে মারতে তেড়ে যাওয়া এবং বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলায় অংশ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

একইভাবে ইউজিসির নিয়ম লঙ্ঘন করে আইকিউএসির সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পান ইংরেজি বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস। তিনিও মঈনের আস্থাভাজন হিসেবে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, শিক্ষার্থী দিয়ে বাজার করানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। তবে এর কোনটির বিচার হয়নি।
ভিসি মঈনের আস্থাভাজন হওয়ায় নিয়মবহির্ভূতভাবে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ড. মোসা: শামসুন্নাহার। বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি সুপারিশ না করা এবং সহযোগী অধ্যাপক পদে স্থায়ী না হয়েই তিনি এ পদোন্নতি পান। অভিযোগ রয়েছে তার স্বামী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হওয়ায় নিয়মিত প্রধানমন্ত্রীর দফতরের লোগো সংবলিত গাড়ি নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন এবং অনৈতিক সুবিধা নিতেন। বিভাগীয় প্রধান হওয়া সত্ত্বেও সপ্তাহে দুই-তিন দিনের বেশি উপস্থিত থাকেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরেক আস্থাভাজন মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদ। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল ন্যূনতম ৩ দশমিক ৭০ হতে হবে। তবে আবু ওবায়দা রাহিদকে মার্কেটিং বিভাগে নিয়োগ দিতে অভিনব উপায়ে অননুমোদিত একটি বিধি যোগ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন তৎকালীন ভিসি আবদুল মঈন। রাহিদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের ফলাফল যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫৬ ও ৩ দশমিক ৫৪। ওই বিধিটি রাহিদের যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এরপরও নিয়োগ বিধিমালার শর্ত পূরণ না করায় বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি রাহিদকে বাদ দিয়ে আবেদনকৃত বাকি ২২ জনের তালিকা রেজিস্ট্রার দফতরে পাঠায়। কিন্তু ভিসির নির্দেশে রেজিস্ট্রার আইন লঙ্ঘন করে বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ করা তালিকায় নিজ থেকে রাহিদসহ দু’জনের নাম যুক্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে চিঠি ও আইনি নোটিশ দেয়া হলেও তা আমলে নেননি ভিসি।
আবদুল মঈন প্রশাসনের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন ইংরেজি বিভাগের ড. মোহা: হাবিবুর রহমান। এ পদের প্রভাব খাটিয়ে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের গবেষণার ৭০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ পদে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকলেও তোষামোদির কারণে দ্বিতীয় মেয়াদে আবার নিয়োগ পান তিনি।

ভিসির আরেক আস্থাভাজন ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলাম। গত ৩০ জানুয়ারি সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের প্লানিং কমিটির সভায় তৎকালীন বিতর্কিত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দীকির এক আত্মীয়কে সুপারিশ করা নিয়ে বাগি¦তণ্ডা হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কুত্তা’ বলে পোস্ট দেন তিনি। পোস্টের বিষয়টি তিনি কমিটির সভায় স্বীকারও করেন। এর আগে ক্রীড়া কমিটির এক সভায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ছাড়াও মতের অমিল হলেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেন তিনি। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠলেও তার কোনোটিই আমলে নেননি সাবেক ভিসি আবদুল মঈন।
এসব বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের একজন গণিত বিভাগের ড. আবদুল হাকিম। তিনি বলেন, অতীতে যারা অনিয়ম দুর্নীতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে এগুলো সমাধান করা জরুরি।
নতুন প্রশাসন সব কাজ আইনানুযায়ী করতে বদ্ধপরিকর বলে জানান প্রোভিসি অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল। তিনি বলেন, আমরা সব কিছু আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো পদ্ধতিগত অনেক অনিয়ম আছে। আমরা এগুলো গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছি। কিছুটা সময় হয়তো লাগবে। তবে সবকিছু আইন অনুযায়ীই হবে।
বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, যদি কেউ স্পেসিফিক অনিয়ম করে থাকে, তাহলে তদন্তসাপেক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে সাবেক অধ্যাপক ভিসি আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement
ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জবি শিক্ষার্থীদের রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি চাঁদাবাজি মামলায় তারেক রহমানসহ ৮ জনের অব্যাহতি ভিজিডির চাউল নিতে এসে ট্রলির ধাক্কায় ২ নারী নিহত মার্কিন দূতাবাসের উদ্দেশে খালেদা জিয়া আইনজীবী সাইফুল হত্যা : আটক ৩০, দুই মামলার প্রস্তুতি সমস্ত সভ্যতার জন্য ন্যায়বিচার, সমতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাবেক কৃষিমন্ত্রী ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের রেকর্ড সংগ্রহ স্ত্রী হত্যা মামলায় সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের জামিন

সকল