০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
ফোরামের সভায় অভিযোগ

শ্রমিক অসন্তোষ মোকাবেলায় বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ব্যর্থ

-


চলমান শ্রমিক আন্দোলন মোকাবেলা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বোঝাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বর্তমান পরিচালনা বোর্ড। এ শিল্পকে ধ্বংস করতে একটি গোষ্ঠী কলকাঠি নাড়ছে। ইতোমধ্যে বিদেশী ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও সরকারের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরা হচ্ছে না। বিদেশী ক্রেতাদের আস্থায় আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে মনে করছে পোশাক রফতানিকারকেরা।

গত শনিবার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে আয়োজিত এক সভায় সাধারণ গার্মেন্ট মালিকরা এসব অভিযোগ করেন। পোশাক শিল্পের চলমান অস্থিরতা দূরীকরণে করণীয় খুঁজতে এই সভার আয়োজন করে ফোরাম। বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নেয়া ফোরাম হচ্ছে একটি গ্রুপ।
স্বাগত বক্তব্যে ফোরাম সাধারণ সম্পাদক এবং নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রশিদ হোসাইনী বলেন, গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা আগেও ছিল। অতীতের অস্থিরতা এত দীর্ঘায়িত হয়নি। এর পেছনে কারো ইন্দন থাকতে পারে। এরা শ্রমিক অসন্তোষের নামে দেশের অর্থনীতিকে ধূলিস্মাৎ করতে চায়। গার্মেন্ট করে অনেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেনি, বিদেশে টাকা পাচার করেছে। তাদের কারণে বেকায়দায় থাকেন সত্যিকারের মালিকরা। এখন গোয়েন্দা সংস্থা পাসপোর্টের তথ্য চাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, এটাই কী গার্মেন্ট মালিকদের অপরাধ। বিজিএমইএ বোর্ড সরকারকে গার্মেন্ট শিল্পের প্রকৃত অবস্থা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সীমা ফ্যাশনের প্রোপ্রাইটর আবুল হোসেন বলেন, সরকারের উপদেষ্টাদের গার্মেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান বা জানাশোনা নিয়ে সন্দেহ আছে। একই সাথে বিজিএমইএ বোর্ডও দায়িত্বজ্ঞান হীনভাবে সরকারের কাছে সেক্টরের সমস্যা তুলে ধরতে পারছে না। তারা শুধু ব্যস্ত নিজেদের স্বার্থ নিয়ে। আশুলিয়া এলাকায় আগস্টের বেতন ব্যাংক থেকে ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে দিতে হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে অনেক কারখানায় এক দিনও কাজ হয়নি। সেসব কারখানা বেতন দেবে কিভাবে। সেই চিন্তা কারো আছে বলে মনে হয় না।

ডুকাটি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়ের মিয়া বলেন, গত নভেম্বরে বেতন বাড়ানোর পর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এখন আবার বেতন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে। ১০ টাকা বেতন বাড়ানোর সক্ষমতা নেই অনেক মালিকের। তিনি আরো বলেন, বর্তমান বিজিএমইএ বোর্ড শ্রমিক অসন্তোষ মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাদের সেই যোগ্যতা নেই। কারণ জোর করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে।
চলমান সঙ্কট মোকাবেলায় বিজিএমইএ বোর্ডকে চারটি পরামর্শ দিয়ে সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, আশুলিয়া এলাকায় ২৫-৩০টি কারখানা এখনো বন্ধ আছে। একটি টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে কারখানার সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত; আশুলিয়ায় রেসকিউ (উদ্ধার) প্যাকেজ ঘোষণা করা যেতে পারে। এর আওতায় গার্মেন্ট মালিকদের ব্যাংক ঋণসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া উচিত। তৃতীয়ত, তৈরী পোশাক খাতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। চতুর্থত, বিজিএমইএ সদস্যদের কারখানার সক্ষমতার ভিত্তিতে ক্যাটাগরি করে পৃথক পলিসি প্রণয়ন করা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে না পারলে শ্রীলঙ্কা থেকে তামিল বিদ্রোহীদের কারণে নব্বইয়ের দশকে যেভাবে গার্মেন্ট শিল্প বাংলাদেশে এসেছিল, সেভাবে ব্যবসা বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে।
রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, এই মুহূর্তে আশুলিয়ায় যা হচ্ছে, সেটা শ্রম আইনবিষয়ক সমস্যা না, এটা আইনশৃঙ্খলা সমস্যা। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না বা করতে পারছেন না। আইন ভঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা গেলে এতদিনে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে সুশীলসমাজের পক্ষ থেকে অনেক কথা বলা হয়। কিন্তু গার্মেন্টই একমাত্র খাত যেখানে অদক্ষ শ্রমিকদের বেতন ওভারটাইমসহ ১৫ হাজার টাকা পড়ে। দেশে কি আর কোনো সেক্টর আছে যেখানে অদক্ষ শ্রমিকরা ১৫ হাজার টাকা বেতন পায়।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, সরকার চায় গার্মেন্ট মালিকরা শান্তিতে ব্যবসা করুক। প্রধান উপদেষ্টা পোশাক খাত নিয়ে অত্যন্ত বিচলিত, সমাধান খুঁজছেন। কিন্তু সরকারের সাথে দর কষাকষি বা নিজেদের দাবি আদায় করার মতো মুখ খুঁজে পাচ্ছি না।
রুবানা হক আরো বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে বায়ারদের আস্থায় আনা ভীষণ জরুরি। প্রধান উপদেষ্টা বিদেশী বায়ারদের সাথেও আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। ওনার মতো বিশ্ববরেণ্য মানুষকে ব্যবহার করতে না পারলে আমাদের (বিজিএমইএ) ব্যর্থতা। এ ছাড়া এক্সিট পলিসি নিয়ে কাজ করারও এখন উপযুক্ত সময়।


আরো সংবাদ



premium cement