অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ১৩ প্রস্তাবনা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৫
দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত এবং সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৩টি প্রস্তাব দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নাটমণ্ডল মিলনায়তনে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস : পর্যালোচনা, প্রস্তাব ও মতবিনিময়’ শীর্ষক সভায় এসব প্রস্তাব জানানো হয়। এতে সংগঠনটির পক্ষে ১৩টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন গবেষক মাহা মির্জা।
সভায় উত্থাপিত ১৩ প্রস্তাবনা হলো : ১. জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের তালিকা প্রকাশ ও পরিবারের দায়িত্ব নেয়া। ২. হত্যাকারীদের বিচার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। ৩. সংবিধান কমিশনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা প্রকাশ করা এবং জনমতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা। ৪. অবিলম্বে মব ভায়োলেন্স বা দলগত সহিংসতা, খুন, ভাঙচুর, ত্রাস সৃষ্টি; মন্দির, মাজার, মসজিদ, কবরস্থান, শিল্পকর্ম, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্নজনের বাড়িঘরে হামলা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জড়িতদের বিচার করা। ৫. সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, ৭৪ এর বিশেষ ক্ষমতা আইন ও শ্রমিক পরিষেবা বিলসহ মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী নিবর্তনমূলক সব আইন বাতিল করা। ৬. খাদ্যদ্রব্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৭. শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ঘোষণা, শ্রমিক হত্যার বিচার করা এবং শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ সব ন্যায্য দাবি পূরণে মালিকদের বাধ্য করা। ৮. প্রকৃতি ও কৃষকবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন করা। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল চুক্তি নবায়ন না করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। ৯. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, সন্ত্রাসী দখলদারী তৎপরতা বন্ধ করা, ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। ১০. স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসাকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং পাবলিক হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ শুরু করা। ১১. পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেনাশাসন প্রত্যাহারের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। ১২ উত্তরাধিকার সূত্রে জমি-সম্পত্তিতে নারীদের সমানাধিকার নিশ্চিত করা। ১৩. মানবপাচার ও প্রবাসে বাংলাদেশী নারী-পুরুষের নিপীড়ন প্রতিরোধে বিশেষায়িত সেল গঠন করা। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ইইউ, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি প্রকাশ এবং জনস্বার্থবিরোধী চুক্তিগুলো বাতিলের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এই ১৩ প্রস্তাবনা শিগগিরই কিছুটা পরিমার্জন করে সরকারের কাছে উত্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে ছয় মাসের মধ্যে তা পর্যালোচনা করা হবে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটুকু করল, সেটা সভা প্রধানের বক্তব্যে উল্লেখ করে জাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, আমাদের ১৩টি দাবি অনেক দাবি মনে হতে পারে কিন্তু এগুলো আসলে অনেক বেশি কিছু নয়। সরকার যদি জনগণের দিকে ঘাড় ফেরান তাহলেই এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন সহজ। এসব বিষয়ের জন্য সরকারের অনেকগুলো মন্ত্রণালয় রয়েছে। সরকারের এত সোর্স থাকার পরও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তালিকা বের করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে, এত সময় কেন লাগছে, এটা এত কঠিক কিছু নয়! নিহতদের পরিবারকে কেবল এক লাখ টাকা ধরিয়ে না দিয়ে তাদের পুরো পারিবারের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
আনু মোহাম্মদ আরও বলেন, সরকার পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাদর্শের উপর যে হামলা হচ্ছে সেটা দমন করার বিষয়ে সরকারের কণ্ঠে জোর নেই। এই যে সময়গুলো চলে যাচ্ছে এটা দেশের জন্য বিপজ্জনক। এর ফলে সুবিধা হচ্ছে স্বৈরশাসকদের, ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের। অবিলম্বে এসব বন্ধে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। তবে ছাত্র সংসদ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন থাকবে সেটা রাজনৈতিক হতে হবে তেমন কথা নয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবেও থাকতে পারে, তবে সংগঠন থাকতে হবে।
সভায় অংশ নেয়া ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস হতে চলল কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্দোলনে আহতদের সঠিক ও সুষ্ঠু চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি। এখনও প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আমরা আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসা না হওয়ার সংবাদ পাচ্ছি। এটি আন্দোলনের মূল যে কারিগর ছাত্র-জনতা তাদের প্রতি চরম অবহেলা। আমাদের দাবি থাকবে অতি শিগগিরই যেন আহত, নিহতের পরিবার ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক পুনর্বাসন করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা সিদ্দিক স্নিগ্ধা বলেন, ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানের এ সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার না। এই সরকার আমাদের আকাক্সক্ষার সরকার। দুই মাস পেরিয়েছে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই, এখন পর্যন্ত আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি। সরকারকে এটি নিশ্চিত করতে হবে তারা কী সংস্কার করবে, কাদের জন্য করবেন সেটি আমাদের জানাতে হবে।