শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা নিয়ে জটিলতা
আইন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ চেয়েছে এনটিআরসিএ- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০১:১৬
দেশব্যাপী কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিবাদের মুখে চকরিতে প্রবেশে কোটা পদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার এসেছে। আগে যেখানে ৫৬ শতাংশ পদই কোটায় পূরণ করা হতো সেখানে গত জুলাইয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এই কোটা ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। নতুন এই কোটায় রাখা হয়নি নারীদের কোনো স্থান। ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের কোটা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
এ দিকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালায় নারীদের কোটা পদ, জেলা বা অঞ্চল ভেদে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ সংরক্ষিত। কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা বলা নেই। ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের কোটার বিষয়ে নারীদের কোটা থাকবে কি না সেটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতেই গ্রহণ করতে চায় এনটিআরসিএ।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এনটিআরসিএ’র সচিব রিজওয়ানুল হক নয়া দিগন্তকে জানান, এনটিআরসিএ’র নিজস্ব নিয়োগ বিধিতে নারীদের জন্য কোটা রয়েছে। কিন্তু এখন তো সব চাকরিতেই কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এসেছে। তাই আমাদের নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও কোটা পদ্ধতি কেমন হবে তা নিয়ে যাতে কোনো জটিলতার সৃষ্টি না হয় সে জন্য আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছি। তিনি আরো জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী কোটা বহাল থাকবে নাকি নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী নিয়োগ সুপারিশ করা হবে।
এনটিআরসিএ’র অপর একটি সূত্র জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর নারী কোটার বিষয়ে মতামত চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ চিঠি এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি শাখায় যাবে। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ এ বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দেবেন। সূত্র মতে, ১৯৯৯ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ নারী কোটা চালু আছে। কিন্তু দেশের কোনো কোনো এলাকায় নারী কোটা পূরণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি পদে শিক্ষক নিয়োগের প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশ করার একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএ।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিগত সরকার। এতে ৯৩ শতাংশ মেধা এবং বাকি ৭ শতাংশ কোটা রাখা হয়। এই ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা এবং বাকি ১ ভাগ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা। এখানে নারী ও পোষ্য কোটা রাখা হয়নি।
অপর দিকে দেশে সরকারি চাকরির সব গ্রেডের নিয়োগে ৭ শতাংশ কোটার নতুন সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। তবে কিছু দফতরে আলাদা নিয়োগবিধির কারণে এখনো কার্যকর রয়েছে বিভিন্ন বিশেষ কোটা। এনটিআরসিএ’র নিজস্ব নিয়োগবিধি থাকায় সেখানে কোটা বলবৎ রয়েছে। ফলে আগামীতে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা নিয়ে জটিলতা হতে পারে সেই আশঙ্কায় আগেভাগেই সংস্থাটি আইনের নানা দিক খতিয়ে দেখছে।