কেরানীগঞ্জে আব্বা বাহিনী এখনো সক্রিয়
- রাকিব হোসেন
- ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সন্ত্রাসের জনপদ ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বা বাহিনীর প্রধান ইকবালের দখলে এখনো শুভাঢ্যা ও কোন্ডা ইউনিয়ন ডক ইয়ার্ডসহ বসুন্ধরা গ্রুপের ফ্যাক্টরিী। গত ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থেকে চালাচ্ছেন সব অনৈতিক কার্যক্রম। তার বাহিনীর সদস্যরা মাদক বিক্রি, অস্ত্র চোরাচালান, গার্মেন্টকর্মীদের অশান্ত করা, চুরি, সরাইখানা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সব অনৈতিক কর্মকাণ্ড এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। এমন কোনো অপরাধ নাই যা ইকবাল চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সংগঠিত হয় না।
ইউনিয়ন পরিষদে যত ধরনের সরকারি অনুদান এলজিইডি ফান্ড, কাবিখা, টিআর, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা থেকে শুরু করে সব কিছুর আত্মসাতের অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ইকবাল চেয়ারম্যান সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জকে অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। জমি, মার্কেট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদের আত্মীয় হওয়ায় এলাকায় প্রভাবশালী তিনি। তার কথার বাইরে যায় এমন লোক এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তার চাচা মজিবর ওরফে জিনের বাদশার পক্ষে কেরানীগঞ্জে মমতাজ মার্কেট দখল করার সময় ইকবালের আব্বা বাহিনীর সংঘর্ষে আমবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সোহেল (৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এই হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে শিশু সোহেলের পরিবারকে পুলিশ দিয়ে এলাকা ছাড়া করেন। ২০২০ সালে ধর্ষিতা এক নারীকে অপহরণ করেন ইকবাল চেয়ারম্যান। এ খবর বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হলে তিনি আব্বা বাহিনী নিয়ে ভিকটিমকে ভয় দেখিয়ে উল্টো তার বিরুদ্ধেই সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। তার এই সন্ত্রাসী বাহিনী আব্বা গ্রুপের অন্যতম সেনাপতি তার চাচাতো ভাতিজা আফতাব উদ্দিন রাব্বী নির্যাতনের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে রাসেল নামের এক যুবককে। নিহত রাসেলের স্ত্রী সাথী আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমার পরিবারকে নানাভাবে নির্যাতন করে এলাকা করছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে ইকবাল চেয়ারম্যানের নামের সাথে যে সব সম্পদের তালিকা যোগ হয়েছে তার মধ্যে কেরানীগঞ্জের কবুতরপাড়ায় আটতলা ভবন রয়েছে তিনটি, বলরামের দোকানের সামনে সাততলা মার্কেট আছে দু’টি, কালিগঞ্জ বয়েজ ক্লাব রোডে নয়তলা একটি মার্কেট, চেয়ারম্যান বাড়ি রোডে সাততলা বাড়ি দু’টি, খেজুরবাগে পাঁচতলা বাড়ি চারটি, তেলঘাটে পাঁচতলা বাড়ি ও মার্কেট দু’টি, পারগেণ্ডারিয়া বড়ইতলা ডকইয়ার্ডে দু’টি প্লটে ৩৬০ শতাংশ জমি, বইতড়লায় দু’টি টিনশেড বাড়ি, ওয়াশিং মিল, খেজুরবাগে ওয়াশমিল, বয়েজ ক্লাবের পাশে ওয়াশ মিল, ক’টি জিন্স কাপড়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ৯টি জাহাজ ও বাল্কহেড, একাধিক বিলাস বহুল গাড়ি, জাহাজ কাটা ব্যবসা, ঘাট ইজারা, জাহাজ মালিক সমিতিসহ নামে-বেনামে ব্যাংক ডিপোজিট রয়েছে। শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরির সামনে হিন্দু সম্পত্তি দখল করে ইকবাল চেয়ারম্যানের রয়েছে একটি বিশাল আবাসন প্রকল্প। বিএনপি নেতা ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিনের হাসনাবাদ হাউজিং থেকে জোর করে ৫০ ভাগ টাকা আদায় করে ইকবালের আব্বা গ্রুপের সদস্য হাসনাবাদ এলাকার শাজাহান বাদশা। এ ছাড়া দেশের বাইরেও তার বাড়ি রয়েছে। তার অবৈধ সম্পদের উৎস খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর ও দুদকের অনুসন্ধান দাবি করেছে এলাকাবাসী।
শুভাঢ্যা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিম বলেন, ইকবালের হেরেমখানা রয়েছে রাজধানীর ইস্কাটনের একটি অফিসে। কয়েক জায়গায় আছে রক্ষিতা। কেরানীগঞ্জের বাগান বাড়িতে রয়েছে রঙ্গশালা। এই রঙ্গশালায় নারী সাপ্লাই দিতেন আব্বা সিন্ডিকেটের সদস্য সাজাহান বাদশা। এত অপরাধের পরও ইকবাল চেয়ারম্যান বহাল-তবিয়তে আছেন। তার খুঁটির জোর কোথায়? এই প্রশ্ন করেন আরেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ওয়াহিদ মেম্বার ।
নাম না বলা শর্তে এক জাহাজ মালিক বলেন, আব্বা বাহিনীর প্রধান ইকবাল চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে চিত্র নায়িকা সোনিয়া কবীরকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তিন বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে চিত্র নায়িকা সোনিয়া কবীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার বলেন, ইকবাল চেয়ারম্যানের ঘরে আমার বয়সী তার একটি মেয়ে রয়েছে। তার পরও আমি তার আক্রোশ থেকে রক্ষা পাইনি। আমি তার বিচার চাই ।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুয়ীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন অপরাধী প্রভাবশালী হলেও তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা