২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সড়কে প্রতিকূলতার মধ্যেই কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ

প্রতিদিন আটক হচ্ছে ৩ হাজার অবৈধ রিকশা
-


নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। বিশেষ করে বর্তমানে রাজপথের সবচেয়ে বড় সমস্যা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করাই চ্যালেঞ্জের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহানগরীর বেশির ভাগ বাসিন্দার দাবি, প্রধান সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দিতে হবে। কিন্তু অতি উৎসাহী কিছু যাত্রী অটোরিকশায় বসেই ট্রাফিক পুলিশের সাথে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন। চালকরা কিছু না বললেও মনগড়া যুক্তি দেখিয়ে তর্কে জড়াচ্ছেন যাত্রীরা।

তবে বেশির ভাগ জনগণের দাবি, আইন রক্ষা করতে গেলে কঠোর হতে হবে। পেছনে থাকা ভয়ের কোনো শঙ্কা নিয়ে কাজ করা যায় না। পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, কোনো ভয় বা সঙ্কোচ নয়, ন্যায়ের সাথে দায়িত্ব পালনকারী প্রতিটি পুলিশ সদস্যকেই পূর্ণ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে এবং হবে।
গত ৫ অক্টোবর স্বৈরাচার হাসিনার সরকারের পতনের পর ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। বিশেষ করে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। তখন ট্রাফিকের দায়িত্ব হাতে তুলে নেয় ছাত্র-জনতা। তারাই রাজপথে নেমে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। কিছু দিন পর চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যেই রাস্তায় নামে ট্রাফিক পুলিশ। তখনো এলোমেলোভাবে চলছিল গণপরিবহন। রাস্তায় নেমেছিল লাখ লাখ অটোরিকশা। যে যেভাবে পারে সেভাবেই চালাতে থাকে যানবাহন। এতে করে রাস্তায় দেখা দেয় তীব্র বিশৃঙ্খলা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে থাকেন যাত্রীরা। এরই মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ট্রাফিকের উপস্থিতি। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হতে শুরু করেন তারা। প্রধান সড়কে রিকশা বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রবেশে বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি অটোরিকশা চালাচল। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান। কিন্তু সেখানে পুলিশকে পড়তে হচ্ছে নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশ টিম করে অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। বিশেষ করে আগারগাঁও, বিজয়সরণি, ধানমন্ডির কয়েক স্পটে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে চলতে থাকে একটি অভিযান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় একজন ভদ্রমহিলা আসছিলেন। ওই রিকশাটি দাঁড় করায় ট্রাফিক পুলিশ। চালক কিছু না বললেও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন রিকশার যাত্রী ওই নারী। যে আইনে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা হচ্ছে, তার বই দেখতে চান তিনি। শুরু করেন তুমুল কথা কাটাকাটি। ছুটে আসেন ট্রাফিকের ইন্সপেক্টর (টিআই)। তিনি নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন ওই নারীকে। কিন্তু ওই নারী বলেন, ‘আপনাদের পুলিশ তো এখনো মানুষই হয় নাই। এখনো মিথ্যা কথা বলে।’ তখন টিআই বলেন, ‘জি আমরা মানুষ হই নাই, আমরা এখনো মানুষের অনেক নিচে।’ প্রায় সাত মিনিট ওই নারী বিভিন্ন তর্ক করতে থাকার পর টিআই তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এই পুরো সময়ের মধ্যে রিকশাচালক একটি কথাও বলেনি। পাশে দাঁড়িয়ে এসব তর্ক শোনা পথচারী আল আমিন বলেন, এদেশে নরমের জায়গা নেই। পুলিশকে আরো কঠোর হতে হবে। তা না হলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনগণ পুলিশকে পেয়ে বসবে।

এদিকে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের ফেসবুক পেজে থাকা ট্রাফিক আপটেডের বিভিন্ন পোস্টে জনগণ শত শত কমেন্ট করে থাকেন। ওই কমেন্টসের বেশির ভাগের মতামত, প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করতে হবে। অনেকেই বলছেন, মনে হয় রাজধানীতে মানুষের চেয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাই বেশি। তারা অটোরিকশার উৎপাত নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও জায়গার নামও উল্লেখ করেছে।
ট্রাফিকের এক কর্মকর্তা বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে। জনগণই সমস্যার সৃষ্টি করছেন, আবার তারাই পুলিশের কাছে প্রতিকার চাচ্ছেন। তিনি বলেন, আইনের আওতায় থেকে কোনো পদক্ষেপ নিতে গেলেই লোকজন জড়ো হয়। যে পরিস্থিতি তাতে দেখা যাবে, আমাদের ভুল না হলেও ঊর্ধ্বতনরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমাদেরই শাস্তি দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির অ্যাডিশনাল কমিশনার (ট্রাফিক) নজমুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার অবৈধ রিকশা আটক করা হচ্ছে। সহকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ভয়ের কোনো প্রয়োজন নেই, আইনের মধ্যে থেকে করা যেকোনো কাজকে পূর্ণ সমর্থন দেয়া হবে। তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement