২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
সাংবাদিক তুরাব হত্যা

খুনিদের গ্রেফতার দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট প্রেস ক্লাব

সাংবাদিক এটিএম তুরাবের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার দাবিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে দেয়া স্মারকলিপির কপি সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো: মুশফিকুর রহমানকে দেয়া হয় : নয়া দিগন্ত -

সিলেট প্রেস ক্লাবের সদস্য, দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি ও দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এ টি এম তুরাব হত্যামামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট প্রেস ক্লাব।
গতকাল দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। পরে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মুশফেকুর রহমানের কাছেও অনুরূপ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপি গ্রহণের সময় সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি জানান, তুরাব হত্যার ঘটনাটি তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। মামলাটি তদন্তের বিষয়ে পুলিশ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। তদন্তে যাদের নাম আসবে-তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সাংবাদিকরা ওসি মঈনকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে ডিআইজির কাছে প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এমনটি হয়েছে। তবে আগামীতে এসব বিষয়ে তারা সতর্ক থাকবেন।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে সাংবাদিক নেতারা তুরাব হত্যার ঘটনায় তার ভাইয়ের দায়ের করা মামলার আসামিরা এখনো গ্রেফতার না হওয়া এবং সম্প্রতি কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে আটকের পর ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ জানান। একইসাথে দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। তিনি ওই দিন জুমার নামাজ শেষে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলের স্থিরচিত্র ও ভিডিওগ্রাফি ধারণ করছিলেন। মিছিলটি পুরান লেন গলির মুখে পৌঁছার পর সশস্ত্র পুলিশ পেছন দিক থেকে তাকে গুলিবর্ষণ করে।
সিলেট প্রেস ক্লাব নেতারা অভিযোগ করেন, তুরাবের গায়ে ইংরেজিতে বড় অরে ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরিহিত থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তার দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। গুলিবিদ্ধ তুরাব চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অন্য সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
শুক্রবার ছুটির দিনে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট থাকায় এবং চিকিৎসায় বিলম্ব হওয়ায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং সহকর্মীদের পরামর্শে তাকে নগরের সোবহানীঘাট এলাকায় অবস্থিত ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে ময়নাতদন্তে তার শরীরে ৯৮টি ছররা গুলির আঘাতের চিহ্ন ছিল, যা ফরেনসিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৪ জুলাই সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই আবুল হাসান মো: আযরফ (জাবুর) এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় ৮-১০ জন পুলিশকে অভিযুক্ত করে এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু কোতোয়ালি থানা পুলিশ সেটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করে।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মোমেনের আদালতে এ টি এম তুরাব হত্যার ঘটনায় ফের মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো: আযরফ (জাবুর)। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো: সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান।
অন্য আসামিরা হলেন, সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানার বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন, ওসি (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজি রিপন সরকার, এসএমপির কনস্টেবল/২১৬৮ সেলিম মিয়া, কনস্টেবল/১৯৫৭ আজহার, কনস্টেবল/২২৫৫ ফিরোজ, কনস্টেবল/১৬০৩ উজ্জ্বল। কিন্তু মামলা দায়েরের এক মাসে ছয় দিনেও কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি।
সিলেট প্রেস ক্লাব সদস্য সহকর্মী এ টি এম তুরাব হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সুদৃষ্টি ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন প্রেস ক্লাব নেতারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, সহসভাপতি খালেদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি আবদুল কাদের তাপাদার, সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর, এম এ হান্নান সাবেক দফতর সম্পাদক কামকামুর রাজ্জাক রুনু, সাবেক কোষাধ্য কবীর আহমদ সোহেল ও কাউসার চৌধুরী, সাবেক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক নূর আহমদ, ক্লাব সদস্য মো: আমিরুল ইসলাম চৌধুরী এহিয়া, ফয়সাল আমীন, মো: দুলাল হোসেন, নাজমুল কবীর পাভেল, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, ক্লাব সদস্য এনামুল হক রেনু, মো: মারুফ হাসান, এ কে কাউছার, সহযোগী সদস্য হুমায়ুন কবির লিটন প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement