২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
৬ ঘণ্টার অবরোধে দুর্ভোগ চরমে

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের জন্য দুই দিন মহাসড়ক অবরোধ শ্রমিকদের

-

দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে দুইবার মহাসড়ক অবরোধ করেছে টঙ্গী পশ্চিম থানার খাঁপাড়া রোডের সিজন ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তারা টানা ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করায় তীব্র তাপদাহে চরম ভোগান্তির শিকার হন হাজার হাজার মানুষ। অবরোধে আটকা পড়ে যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে রোদের মধ্যেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। এর আগে গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রায় ৪ ঘণ্টা মহাসড়কের একই স্থান অবরোধ করেছিলেন ওই কারখানার শ্রমিকরা।
সোমবার সকাল পৌনে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরোধ চলাকালে মহাসড়কের উভয়মুখী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এসময় উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ এড়িয়ে নগরীর শাখা রোডগুলো দিয়ে বাইপাস করার কারণে মহাসড়কের আশপাশের প্রায় সব শাখা রোডে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এতে আবাসিক এলাকার লোকজনকেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেনা, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট তাদের একযোগে লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। অবরোধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, পরিবহনযাত্রী ও পথচারীরাও এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করে।
স্থানীয় আউচপাড়ার বাসিন্দা মুল্লুক হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই মাসের বকেয়া বেতনের জন্য একটি জাতীয় সড়ক বন্ধ করে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগে ফেলতে হবে কেন? মহাসড়কে যারা চলাচল করেন তারা কি শ্রমিকদের বকেয়া বেতন শোধ করবেন? হাজার/১২শ’ শ্রমিকের দুই মাসের বকেয়া বেতনের জন্য হাজার হাজার মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকার কর্মঘণ্টা নষ্ট করা হয়েছে এ ক্ষতিপূরণ কে দেবে? শ্রমিকরা রাস্তায় না এসে কারখানা ঘেরাও দিয়ে তাদের কর্মকর্তাদের জিম্মি করে বকেয়া বেতন আদায় করুক, আমাদের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কেন ? এটা এক ধরনের দস্যুতা।’
তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকে আমরা শ্রমিক আন্দোলন দেখেছি। রাষ্ট্রায়ত্ত মিলগুলোতে টানা ৬ মাস বেতন বকেয়া পড়লেও শ্রমিকরা কখনই এমন ধ্বংসাত্মক আগ্রাসী ছিল না।

এদিকে শ্রমিকরা জানান, এর আগেও আন্দোলন করে তারা গত জুন মাসের বকেয়া বেতন আদায় করেছেন। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন এবং ওভার টাইমের টাকার জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তখন প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ওই দিনই জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করা হয়। ওই দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কথা দিয়েছিলেন রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) অবশিষ্ট বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ সেই কথা রাখেননি। এখন শ্রমিকদের দাবি, ২ মাস ১৫ দিনের বকেয়া বেতন, ওভার টাইমের (অতিরিক্ত শ্রমের) মজুরি, তিন বছরের ছুটির টাকা ও প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ ইত্যাদি।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী সুপার (টঙ্গী জোন) মোশারফ হোসেন বলেন, কারখানার মালিক সময়মতো বেতন পরিশোধ না করায় গত কয়েক দিন ধরে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। সোমবার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। এ কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হন। শ্রমিকদেরকে বহু বুঝিয়েও সড়ক থেকে সরানো যায়নি। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে লাঠিচার্জ করে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল শুরু হয়। তিনি আরো বলেন, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পৃথক দুটি দল শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement