১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

যেভাবে হত্যা করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে

যেভাবে হত্যা করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে - সংগৃহীত

বাংলাদেশে ২৫ বছর আগে খুন হওয়া চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এ রায় দিয়েছেন। বাকি ছয় আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী।‌ পাশাপাশি তাদের দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আসামিরা সবাই পলাতক থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

এছাড়া মামলার আসামি আশীষ রায় চৌধুরী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ বাকি ছয় আসামিকে খালাস করে রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

হত্যার ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

বনানীর ১৭ নম্বর রোডে অবস্থিত আবেদিন টাওয়ারের সাত তলায় ছিল এই ট্রাম্পস ক্লাবের অবস্থান। ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্লাবের নিচের দরজার সামনে উপুড় হয়ে পড়া ছিল নায়ক সোহেল চৌধুরীর লাশ।

সোহেল চৌধুরী খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। পরের বছর আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আরো নয়জনকে এ মামলার আসামি করা হয়।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে চার্জশিটে বলা হয়েছে, ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই ট্রাম্পস ক্লাবে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে সোহেল চৌধুরীর একটি ঘটনায় বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশীষ রায় চৌধুরীর সাথে সোহেল চৌধুরীর বিরোধ শুরু হয়। সেদিন রাতে সোহেল চৌধুরীকে ক্লাব থেকে বের করে দেন আশীষ রায় চৌধুরী। ক্লাবে আর না আসার জন্যও হুমকি দেয়া হয়। প্রতিশোধ নিতে হত্যা করা হয় নায়ক সোহেল চৌধুরীকে।

২৪ জুলাই ছাড়াও কয়েকবারই সোহেল চৌধুরীর সাথে ট্রাম্পস ক্লাবের অতিথি এবং কর্মীদের ‘গোলমাল’ হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ক্লাবটিতে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্যপান’ করা হতো। এই ক্লাবের পশ্চিম পাশে ছিল একটি জামে মসজিদ। ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধে মসজিদের মুসল্লিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন সোহেল চৌধুরী।

মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে তিনি ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলে মামলাটির অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। ওই সময় ক্লাবের কাজ ব্যাহত হলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন আসামিরা।

যেভাবে হত্যা করা হয়
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের দিন সোহেল চৌধুরী ক্লাবে ঢুকতে গেলে বাধা দেয়া হয়। পরে রাত ৩টার দিকে আবার সাত-আটজন লোকসহ ক্লাবের সামনে আসেন তিনি। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান। পেশাদার খুনিদের দিয়ে গুলি করানো হয় তাকে।

মামলার এক সাক্ষী জবানবন্দিতে বলেন, এ সময় তার পেটে গুলি লাগে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান তিনি। তার সাথে থাকা আরো দু’জন গুলিবিদ্ধ হন।

মামলার কার্যক্রম স্থবির ছিল দীর্ঘদিন
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর এ মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এক আসামি ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। পরের বছর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয় হাইকোর্ট।

২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রুল খারিজ করে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার আদেশ দেয়। ফলে মামলাটির বিচার চলতে আইনি বাধা দূর হয়। কিন্তু হাইকোর্টের এ আদেশ বিচারিক আদালতে আর পৌঁছায়নি। গায়েব হয়ে যায় আদেশের নথি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নথি খুঁজে বের করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আরেকটি রিট করা হয়। ওই রিটে আদালত মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিলে নতুন করে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে এ বছরের মার্চে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়।

এ মামলায় ৩৩ জন সাক্ষী থাকলেও মাত্র ১০ জনের সাক্ষ্য নেয়া গেছে। সাক্ষীদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। ১২ জন সাক্ষী এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসেননি।

আসামিদের অবস্থা
এ মামলার নয় আসামির মধ্যে পাঁচজন পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন এবং আদনান সিদ্দিকী।

আসামিদের মধ্যে আশীষ রায় চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী জামিনে রয়েছেন। কারাগারে রয়েছেন আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমন।

আসামি আশীষ রায় চৌধুরীকে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখিত বক্তব্য দেন এই আসামি। এছাড়া আরেক আসামি সানজিদুল ইসলাম ইমনও এ মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন সোহেল চৌধুরী। একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন পারভিন সুলতানা দিতিও। পরে দুই তারকা বিয়ে করেন, দুটি সন্তানও রয়েছে তাদের।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement