হিন্দি সিনেমা আমদানির সিদ্ধান্ত কতটা ইতিবাচক!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ এপ্রিল ২০২৩, ২২:৩২, আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৩, ২২:৪১
সম্প্রতি বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে শর্ত দেয়া হয়েছে যে হিন্দি সিনেমা আমদানি করার বিপরীতে সমানসংখ্যক বাংলাদেশী সিনেমা রফতানি করতে হবে।
বুধবার (১২ এপ্রিল) এর ধারাবাহিকতায় ‘গণ্ডি’ নামে একটি বাংলাদেশী সিনেমা ভারতে রফতানির অনুমতি দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের সদস্য সচিব ও পরিচালক শাহ আলম কিরণ।
তিনি বলেন, ‘এখন এর অ্যাগেইনস্টে তারা একটি ছবি আমদানি করতে পারবে ।’ এর আগে সোমবার বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে পাঁচটি শর্তে ভারতীয় ছবি আমদানির অনুমতি দেয়।
অনুমতিতে বলা হয়, নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে এ বছর ১০টি হিন্দি সিনেমা আমদানি করা যাবে। আগামী বছর আরো আটটি সিনেমা আমদানির সুযোগ থাকবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালের উপসচিব সাইফুল ইসলাম জানান, চলচ্চিত্র বিষয়ক ১৯টি সংগঠন মিলে উপমহাদেশের সিনেমা আমদানি করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সিনেমাসংশ্লিষ্ট শিল্পী, কলাকুশলী, ক্যামেরাম্যান, তারপর পরিচালক, প্রযোজকদের যত সংগঠন আছে, সবাই মিলে একসাথে আবেদন করছে যে, আমরা চাই। আগে তো একপক্ষ আবদেন করলে আরেক পক্ষ আন্দোলন করত, মানববন্ধন করত।’
সার্কভূক্ত দেশগুলোর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি যা সাফটা চুক্তি হিসেবে পরিচিত। ওই নীতিমালা অনুযায়ী এই চুক্তিভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি সিনেমা রফতানি করলে আরকেটি সিনেমা আমদানির নিয়ম রয়েছে বলে জানায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
এছাড়াও বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যৌথ নীতিমালা অনুযায়ী চলচ্চিত্র আমদানি-রফতানি করার সুযোগ আছে। এই নিয়ম অনুযায়ী সিনেমা আমদানির এই অনুমোদন এলো, যা আগামী দু'বছর কার্যকর থাকবে। বাংলাদেশে এর আগে হলিউডের বা ইংরেজি চলচ্চিত্র নিয়মিত আমদানি হলেও, হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি বন্ধ ছিল।
চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের হলে দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। তবে বাংলাদেশের সিনেমা ভারতের বাজারে কতটা চাহিদা তৈরি করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই গেছে।
যেভাবে আমদানি-রফতানি হয়
সিনেমা আমদানির ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, শুধু বৈধ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশকরাই সিনেমা আমদানি করতে পারবে। বাংলাদেশী সিনেমা রফতানির বিপরীতে উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত সিনেমা শুধু দু’বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে আমদানি করা যাবে। ১০টি সিনেমা আমদানি করতে হলে ১০টি রফতানি করতে হবে। আমদানির পর সেগুলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন থাকতে হবে। আমদানি করা সিনেমা ঈদ ও দূর্গাপূজার সময় প্রদর্শন করা যাবে না।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম, যিনি চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য, তিনি বলেন, বেসরকারি পরিবেশক বা আমদানিকারকরা যেসব সিনেমা আমদানি করতে চান, তার একটি তালিকাসহ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে অনুমোদন চাইবেন।
মন্ত্রণালয়ে চলচ্চিত্র আমদানি-রফতানিবিষয়ক একটি কমিটি আছে যার প্রধান একজন অতিরিক্ত সচিব। এছাড়া চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অর্থাৎ নির্মাতা, প্রযোজক এবং চলচ্চিত্র গবেষকরা এই কমিটির সদস্য থাকেন।
পরিবেশকদের আবেদন করা চলচ্চিত্রের তালিকা থেকে এই কমিটি আমদানির জন্য চলচ্চিত্র বাছাই করেন। বাছাই করার পর আমদানিকারকরা সেগুলো আমদানি করতে পারেন। আলম বলেন,‘আমদানি করে সেন্সর করবে, সেন্সর করার পর মুক্তি দেয়া হবে।’
আর বাংলাদেশ থেকে কোন কোন চলচ্চিত্র রফতানি করা হবে সেটিও নির্ধারণ করে এই কমিটি। তবে তার আগে যে নির্মাতারা তাদের সিনেমা রফতানি করতে চান তারা তার একটি তালিকা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে জমা দেন।
কতটা সফল হবে
সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের সদস্য সচিব শাহ আলম কিরণ বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশে ভারতীয় ও পাকিস্তানি চলচ্চিত্র আমদানি করা হতো। পরে দেশীয় চলচ্চিত্রের বিকাশ ও উন্নয়নের স্বার্থে এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্পে দুর্দিন চলছে উল্লেখ করে এমন সময়ে দর্শকদের হলমুখী করতে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান কিরণ।
তিনি বলেন, গত বছর দেশে ‘পরাণ’ ছাড়া হলে দর্শক টানার মতো সিনেমা খুব একটা আসেনি। আর ভারতীয় সিনেমার প্রতি যেহেতু এদেশের মানুষের একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে তাই সিনেমা আমদানির এই আবেদন করা হয়েছিল। এই অবস্থায় ভারতীয় সিনেমা যদি হলে দর্শক টানতে পারে তাহলে হলের সংখ্যা বাড়বে।
ভারতীয় সিনেমা আমদানির সরকারি এই সিদ্ধান্তকে আপাতত ইতিবাচকভাবেই দেখছেন প্রযোজক ও পরিবেশকরা। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ হয়তো বাংলাদেশের দর্শকদেরকে হলমুখী করবে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ’৭২ সালের পর থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের রুপালি পর্দার সোনালী যুগ ছিল। ওই সময়ে দেশে এক হাজার ৩৩৫টি সিনেমা হল ছিল। পরে এই সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে মাত্র ৪৫টি সিনেমা হলে সিনেমা মুক্তি পায়।
তিনি বলেন, ‘আজকে যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, এরকম ক্রমাগত চলতে থাকলে হয়তো বা আর এক দুই বছর পরে সিনেমা হল শূণ্য হয়ে যাবে, সিনেমা হল থাকবে না।’
তিনি আরো বলেন দেশীয় চলচ্চিত্রের সাথে হিন্দি বা ভারতীয় চলচ্চিত্র চালিয়ে যদি দর্শকদের সিনেমা হলে টানা যায় তাহলে সেটি ইতিবাচকই হবে। একই সাথে এটি বাংলাদেশের প্রযোজকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেবে।
আপাতত যেহেতু এই আমদানি রফতানি পরীক্ষামূলকভাবে চলবে, তাই এর ভাল-মন্দ দুই বছর পর নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকছে।
খসরু বলেন,‘যদি ভাল কিছু না হয়, আমাদের ডেভেলপমেন্ট না হয়, তাহলে সেটা হয়তো আবার বন্ধ হয়ে যাবে।’
ভারতে বাংলাদেশী সিনেমার বাজার কেমন হবে?
বাংলাদেশ থেকে যেসব সিনেমা ভারতে যায় তা এলে কলকাতাতেই মুক্তি পায় বলে জানান শাহ আলম কিরণ।
বাংলা সিনেমা ভারতে যাওয়ার পর মুম্বাই থেকে সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন নেয়া হয়। তারপর সেগুলো কলকাতার সিনেমা হলে মুক্তি দেয়া হয়।
কিরণ জানান, ‘সত্যি কথা বলতে ওদের দেশের মতো এতো হল তো আর পায় না, সীমিতসংখ্যক হলে সেটা প্রদর্শিত হয়।’
২০২২ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশের সিনেমা ‘হাওয়া’ পশ্চিমবঙ্গের ৩৪টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এটি পুরো ভারতজুড়ে মুক্তি পায় বলে চলচ্চিত্রটির নির্মাতা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম কোনো সিনেমা যেটি ভারতজুড়ে মুক্তি পায়।
পূর্ব ভারতে বাংলা চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিবেশকদের সংগঠন ইস্টার্ন ইণ্ডিয়া মোশন পিকচার্স এসোসিয়েশন বা ইম্পার কর্মসমিতির সদস্য শ্যামল দত্ত বিবিসি বাংলার সাংবাদিক অমিতাভ ভট্টশালীকে বলেন, ‘১০টা করে ছবি আদানপ্রদানের যে চুক্তি বাংলাদেশের সাথে হয়েছে, সেই অনুযায়ী ছবি আনা নেয়া এখনো তো শুরু হয়নি। কিন্তু এর আগে যে ব্যবস্থাপনাটা ছিল, তাতে ভারতের একটা ছবি বাংলাদেশে পাঠালে সেখানকার একটা ছবিও ভারতে আনতে হতো। এই দায়িত্ব ছিল ভারত থেকে যে প্রযোজক বা পরিবেশক ছবি পাঠাচ্ছেন, তার ওপরেই। কিন্তু নতুন নিয়মে একটা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে যে কোন কোন ছবি বাংলাদেশে যাবে।’
তিনি বলেন, আগের নিয়মে প্রযোজক বা পরিবেশকরা নিজের ছবি বাংলাদেশে পাঠাতেই বেশি উদগ্রীব থাকতেন। আর বাংলাদেশ থেকে যে ছবি নেয়া হতো, সেটা যাতে ভাল ব্যবসা করে, প্রচার পায়, তার উদ্যোগ নেয়া হতো না। তাই সাম্প্রতিককালে 'হাওয়া' ছবি ছাড়া, আর কোনো বাংলাদেশী ছবিই দর্শকের কাছে বিশেষ একটা পৌঁছায়নি। নতুন ব্যবস্থাপনায় ছবি বাছাইটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হবে।
শ্যামল দত্ত আরো বলেন, ‘কোন কোন মাপকাঠির ওপরে ভিত্তি করে আমরা ছবি বাছব, সেটা একটা বড় বিষয়। তারমধ্যে হয়তো এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে বাণিজ্য-সফল ছবি আর প্যারালাল ছবির সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হবে। আর বিদেশে ছবি পাঠানোর সময়ে এটাও দেখতে হবে যে সেটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করার মতো মানের কী না।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা