২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাকের ভাই ও মুনার চোখে বদি

বাকের ভাই ও মুনার চোখে বদি - ছবি : সংগৃহীত

শেষ পর্যন্ত হারতে হলো ক্যান্সারের কাছে। অভিনেতা আবদুল কাদের চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ২৬ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আশির দশকের বদি ভাই বর্তমান সময়ে ‘ইত্যাদি’র কল্যাণে পরিচিত ছিলেন সচেতন মামা হিসেবে। শত বাধা দিয়েও তিনি আর ভাগিনার স্বভাব ঠিক করতে পারেননি। যা মূলত ফুটিয়ে তুলে ছিল সমাজের বিবেকহীন মানুষের কাছে ভালো মানুষের অসহায়ত্বের বাস্তব চিত্র।

ইদানীংকালে সমাজের অসঙ্গতিগুলো অভিনয়ের মাধ্যমে এভাবে আঙুল দিয়ে আর কেউ দেখাতে পারেননি। একজন অভিনেতার প্রকৃত সার্থকতা বোধ হয় এখানেই। মামার মৃত্যুতে কান্নাভেজা কণ্ঠে আফজাল শরীফ বলেন, ‘ভালো লাগছে না ভাই। ২০ বছর একসাথে কাজ করেছি। তিনি আমার আপনের চেয়ে আপন একজন। নিয়মিত যোগাযোগ হতো। যে অল্প ক’জনের সাথে আমার যোগাযোগ তাদের মধ্যে তিনি একজন।’

তিনি আরো বলেন, শেষপর্ব ইত্যাদিতে আমার সংলাপ ছিল, ‘আমি না জেনে বুঝে খারাপ করেই যাই, আর তুমি আমারে বাঁচায়া দাও মামা।’ তার সংলাপ ছিল, ‘ভাইগ্না, আমি বারবার বাঁচাই সত্য, কিন্তু কত দিন এভাবে বাঁচাতে পারব?’ এই সংলাপ আজ বারবার মনে পড়ছে। তার চলে যাওয়াটা একটু তাড়াতাড়িই হয়ে গেল। সবার কাছে আবদুল কাদেরের জন্য দোয়া চেয়েছেন আফজাল শরীফ।

পর্দার ‘বদি’ এভাবে চলে যাবেন বিশ্বাস করতে পারেনি বাকের ভাই। এ সম্পর্কে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের মাধ্যমে বাকের ভাই, মুনা, বদি, মজনু নামগুলো দর্শক সমাদ্রিত হয়েছিল। তবে কাদেরের সাথে আমার যোগাযোগ আরো আগে থেকে। নিয়মিত যোগাযোগ হতো আমাদের। চিকিৎসার জন্য যখন ভারতে যায় তখনো কথা হয়েছে। বলেছে ব্যাক পেইন। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে এত অসুস্থ হয়ে পড়ছিল ভাবতেও পারিনি। অসুস্থতা ধরা পড়ার পর এত দ্রুত চলে যাবে, সেটাও ভাবতে পারিনি। অনেকে অনেক দিন ধরে অসুস্থ থাকেন, রোগে ভোগেন, তারপর একদিন চলে যান। এটা ঠিক, একদিন না একদিন সবাইকে যেতেই হয়, তাই মানসিক প্রস্তুতি থাকে। কিন্তু কাদেরের ব্যাপারে আমাদের কারোরই কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ভেলোরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও সে আমার সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলেছিল। ঢাকায় এসে হাসপাতালে ভর্তির পরও কথা বলেছে। হঠাৎ করে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল।

কাদেরের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সত্তরের দশকের শুরুতে গ্রুপ থিয়েটার ফেস্টিভাল হয়েছিল। ওই বছরে আমি, বাচ্চু (নাসির উদ্দীন ইউসুফ), আর কাদের (আবদুল কাদের) ছিলাম একদম গায়ে খাটা লোক। কাদের শুধু অভিনয়শিল্পী হিসেবে নয়, সাংগঠনিকভাবেও বেশ দক্ষ ছিল। একটা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করত বলেই হয়তো অনেক সময় আমাদের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে আসতে পারত না, বিধিনিষেধও ছিল। কিন্তু সব সময় সে আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। অনুষ্ঠান চলাকালে, মিলনায়তনের সামনে না বসে একদম পেছনের সারিতে থাকত। সব সময় আমাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গেই ছিল। সব মিলিয়ে প্রাণবন্ত ছিল। যেখানেই যেত, সবাইকে নিয়ে হইচই করে মাতিয়ে রাখত।

কোথাও কেউ নাটকের স্মৃতিচারণ করলে তিনি বলেন, এই নাটকটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল। তবে আমাদের দু’জনের কাজের আরো ভালো স্মৃতি আছে। এমনিতে সে খুব হেল্পফুল ছিল। সে বলত, নূর ভাই এভাবে করলে কেমন হয়, ওভাবে করলে কেমন হয়? শুধু আমাদের না, সে হুমায়ূনকেও বলত, ‘হুমায়ূন ভাই, এই দৃশ্যটা এভাবে করি?’ আমরা যেমন হুমায়ূনকে কিছু বলতাম না, কাদের কিন্তু বলে ফেলত। হুনও কিন্তু খুব সহজভাবে তার কথা শুনত। কাদের সব সময় স্পষ্ট কথা বলত। কোনো দিন কারো বিরুদ্ধে তাকে অভিযোগ করতে শুনিনি। এটা করতে পারলাম, এটা তো পেলাম না বলেও আক্ষেপ ছিল না। তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়া খুব কঠিন।

অন্য দিকে মুনার চোখে বদি ছিলেন দায়িত্বশীল একজন মানুষ। যার উপস্থিতি কাজের গতি বাড়িয়ে দিত। এ সম্পর্কে সুবর্ণ মুস্তাফা বলেন, সেটে একসাথে কাজের সময় কখনো যদি কনফিউসিং হতো কাদের ভাই থাকলে সাথে সাথে একটা সমাধান বের করে ফেলতেন। একটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একজন আবদুল কাদের খুব বেশি প্রয়োজন। কাদের কাছে থেকে পাওয়া একটি উপহারের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৮৬, ফরিদি এবং আমি ভারতে যাচ্ছিলাম। ফ্লাইট ছিল পরের দিন। আমাদের দরজায় কেউ একজন কড়া নাড়লেন, ইনস্ট্যান্ট ক্যামেরা হাতে কাদের ভাই দাঁড়িয়ে। তিনি সেটি আমাদের দিলেন, ‘ইন্ডিয়া যাবা, সুন্দর সুন্দর জায়গা দেখবা আর ছবি তুলবা। এমনই ছিলেন কাদের ভাই। আমাদের তখন কোনো ক্যামেরা ছিল না। সেটা কাদের ভাই কিভাবে জানলেন সেই ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই এখন পর্যন্ত এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর একটি। শান্তিতে থাকুন কাদের ভাই। আমরা আপনাকে ভালোবাসি।’

অভিনেতা আবদুল কাদের ১৯৫১ সালে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষকতা দিয়ে। অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’য় চাকরি করেন। সেখানে ছিলেন প্রায় ৩৫ বছর।

আবদুল কাদের প্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম সম্পাদক ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সালে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তার। টেলিভিশনে আবদুল কাদের অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’। নব্বই দশকের হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় কোথাও কেউ নেই নাটকের বদি একটি জনপ্রিয় চরিত্র তার।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদের (টেনাশিনাস) সহসভাপতি ছিলেন আবদুল কাদের। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী ছিলেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement
‘দিনে দাওয়াতি কাজ করতে হবে আর রাতে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে’ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রাণি ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি নতুন পর্যটন গন্তব্যের সন্ধান করছে সরকার : হাসান আরিফ বানারীপাড়ায় হত্যা ও প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার ২ রাবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম ‘ট্রাম্পের সাথে অভিন্ন ক্ষেত্র খুঁজে পাবেন অধ্যাপক ইউনূস’ তাজিকিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ ছাত্র-জনতা বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে : মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ফেরতের দাবি জানালেন আলাল টানা দুই ওভারে ২ উইকেট শিকার তাসকিনের ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন’

সকল