সাইফের ওপর হামলার সিসিটিভি ফুটেজের ব্যক্তি শরিফুল নয়, দাবি বাবার
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৯
ভারতের মুম্বাইতে বলিউড তারকা সাইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা বাংলাদেশের শরিফুল ইসলাম শেহজাদের বাবা বলেছেন, গ্রেফতার ব্যক্তি তার ছেলে হলেও সিসিটিভি ফুটেজে যাকে দেখা যাচ্ছে সে তার ছেলে নয়। অর্থাৎ ফুটেজের ব্যক্তি ও গ্রেফতার হওয়া ভিন্ন ব্যক্তি বলে দাবি করেছেন তিনি।
ঝালকাঠিতে তিন ছেলে ও ও স্ত্রীকে নিয়ে রুহুল আমিন ফকিরের পরিবার। শরিফুল ইসলাম তার দ্বিতীয় সন্তান।
সবশেষ গত শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ছেলের সাথে শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল বলে বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।
সেসময় পরস্পর কুশল বিনিময় হয় জানিয়ে রুহুল আমিন ফকির বলেন, ‘আমি বেশি কথা বলি না...। ছেলেপেলে যখন কথা বলে কেমন আছো, কী? ভালো থাকো, এই সমস্ত কথা।’
টিভি চ্যানেল ও ফেসবুকের মাধ্যমে ছেলের ভারতে গ্রেফতারের খবর জানতে পারেন বলেও তিনি দাবি করেন।
‘ফুটেজে যে ছবি দেখলাম, তারপরে মনে হইলো একই ধরনের না। আমার ছেলেকে অ্যারেস্ট করসে। আর ছবিতে ওই ছেলে একই না, একটু তফাৎ,’ বলেন রুহুল আমিন ফকির।
তিনি নিজের ৩০ বছর বয়সী ছেলে সম্পর্কে বিবরণ দেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই চুল ছোট রাখে এবং ব্যাকব্রাশ করে। মানে চুলটা একটু উপরের দিকে থাকে। আর ওই ফুটেজের যে ছবি সে চোখের ভ্রু পর্যন্ত চুল নামানো। এরপর দেখলাম চেহারা ছবিতে মেলে না।’
অন্য কারো সাথে মিলিয়ে ফেলে তার সন্তানের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছে দাবি করছেন তিনি। একই সাথে মাত্র ছয় সাত মাস আগে ভারতে গিয়ে এই ধরনের কঠিন কাজ করা তার গ্রামের কোনো ছেলের পক্ষেই সম্ভব না বলে মনে করেন তিনি।
‘সে কোন মাপের লোক সাইফ আলী খান, শাহরুখ খান, সালমান খান! এরা কি প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের মতো। এরা সুপারস্টার। এদের কাছে যাওয়া তো কঠিন,’ এমন বিস্ময়ও প্রকাশ করেন তিনি।
কেন ভারতে গিয়েছিলেন শরিফুল?
রুহুল আমিন ফকির জানান, ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ভারতে যান শরিফুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা ছিল।
‘আমাদের এলাকায় আমি ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি এবং আমার এ ছেলেও সদস্য। বড় ছেলেও রাজনীতি করে।’
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ আমল থেকেই তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেয়া হয়েছিল। এসব কারণেই তার ছেলে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
তার দেয়া তথ্যমতে, শরিফুল ভারতে যে যাচ্ছেন সেটা পরিবার জানতো। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি ফিরতে চেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে ‘না’ বলে উল্লেখ করেন রুহুল আমিন।
‘ওখানেই কাগজপত্র করাইয়া থাকবে, এই ছিল কথা,’ বলেন তিনি।
ভারতে শরিফুল একটি ‘বার ধরনের হোটেলে’ কাজ নিয়েছিলেন এবং প্রতি মাসের ১০ তারিখের পর বেতনের কিছু টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠাতেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হোটেলের কাজের কথা অবশ্য মুম্বাই পুলিশের ভাষ্য থেকেও জানা যায়। মুম্বাইতে একটি পাবে ওয়েটারের কাজ নেয়ার পর কাজ টেকেনি বলে জানানো হয় ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি ভোর রাতের দিকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় সাইফ আলি খানের বাসভবনে ঢুকে তার ওপর হামলা চালায় এক আততায়ী। তার ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হন সাইফ।
এরপর ১৯ জানুয়ারি ভোরে মুম্বাইয়ের কাছে একটি গভীর ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের ভেতর থেকে শরিফুল ইসলাম শেহজাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাইফের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতারের তথ্য জানানোর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশী বলে উল্লেখ করা হয় মুম্বাই পুলিশের পক্ষ থেকে।
যদিও আদালতে পেশ করা হলে যে দু’জন আইনজীবী তার হয়ে প্রশ্ন করেছেন তারা দু’জনেই দাবি করেছেন ওই ব্যক্তি বাংলাদেশী নাগরিক এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আইনজীবী সন্দীপ শেরখানে দাবি করেছেন, শরিফুল ইসলাম বিগত বহু বছর ধরে মুম্বাইতে নিজের পরিবারের সাথেই বসবাস করছেন। ফলে মাত্র কয়েক মাস আগেই তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছেন – এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
শরিফুলের পরিচয়, পরিচয়পত্র, এমনকি ভারতে ‘বাংলাদেশ-বিরোধী’ রাজনীতি নিয়েও তর্ক-বিতর্ক চলছে। অনেকেই পুলিশের এত তড়িঘড়ি করে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে বর্ণনা করাকে সন্দেহের চোখেও দেখছেন।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা