উখিয়ায় পানিবন্দী মানুষের কষ্টের শেষ নেই
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
- ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:৫২
উখিয়ায় তিন দিন ধরে ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে অর্ধশত গ্রাম তলিয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২৫ হাজার মানুষ। বহু কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেঙে গ্রামীণ সড়ক লণ্ডভণ্ড কালভার্ট বিধ্বস্ত গাছপালা এবং পানের বরজ নষ্ট ও চিংড়ি ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, কক্সবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। ভারী বৃষ্টিতে পুরো কক্সবাজার জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়নের লম্বরী পাড়া, ঘাটঘরপাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, মনখালী, হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবনিয়া, খেওয়াছড়ি, বৌ বাজার, কুলালপাড়া, মরিচ্যা পাগলির বিল, রাজাপালং ইউনিয়নের হাজির পাড়া, কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া, তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজিরকুল, রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা, পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, গয়ালমারা, খোন্দকারপাড়া, পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী, রহমতেরবিল, বালুখালী তৈলখোলা, আঞ্জুমানপাড়া, ফারিরবিলসহ অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চতুর্দিকে থৈ থৈ করছে পানি।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, রুমখা চৌধধুরী পাড়া, বউ বাজার, পাগলিরবিল, বড়বিল, মনির মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। সবজি ক্ষেতসহ আমন মৌসুমের ধানের চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় মৎস্য চাষীরা জানান, মৎস্য ঘেরে ও পুকুরে পানি ঢুকে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সৈয়দ আলম জানান, সমুদ্র উপকূলীয় ডেইল পাড়া, লম্বরি পাড়া, সোনাইছড়িসহ কয়েক শ’ পরিবার পানিতে আটকা পড়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বিভিন্ন ইউনিয়নের পানিতে প্লাবিত হওয়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফেসবুকে এক জরুরি বার্তায়, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগণকে নিরাপদ স্থানে কিংবা পার্শ্ববর্তী সাইক্লোসেন্টারে আশ্রয় নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন জানান, প্রবল পানির স্রোতে ধান চাষ, সবজি ক্ষেত, ও পানের বরজ নষ্ট হয়েছে।
গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ কাঁচা রাস্তা ও কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এটিএম কাউসার। তবে তাৎক্ষণিক ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমর্মকর্তা আরো জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেনের নির্দেশনায় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল ও সিপিপি সদস্যরা প্লাবিত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন।
জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন জানান, জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়নি।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলা রাখা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোকে হট মিলসহ শুকনো খাবার বিতরণসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন।