১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
৫০ কিলোমিটার উপকূলীয় সীমান্ত অরক্ষিত

বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

একের পর এক ঘাঁটি দখলে মরিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধ থামছেই না। ফলে রাখাইনে সহিংসতা থেমে নেই। এতে করে বন্ধ হচ্ছে না বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের স্রোতও। নাফ নদ সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল থাকলেও উপকূলীয় এলাকা অরক্ষিত। ১০০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে অর্ধেক উপকূলীয়। রোহিঙ্গারা এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নেই। উপকূলেও দৃশ্যমান টহল নেই। ফলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের খুরের মুখ থেকে শিলখালী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি নৌ পুলিশ, থানা পুলিশ মাঠে নিস্ক্রিয় হওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠছে স্থানীয় দালালরা।

সীমান্তে দায়িত্বে থাকা বিজিবির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এত বড় সীমান্ত আসলে পুঙ্খানুপুঙ্খ টহল দেয়া কঠিন। তার ওপর টাকার বিনিময়ে স্থানীয় দালালরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে। বর্তমানে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি যাচ্ছে। তবে আমরা সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করেছি।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা দালালদের তালিকা তৈরি করে তাদের ধরছি। গত মঙ্গলবারেও ১০ জন দালাল আটক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা নাফ নদে টহলে কড়াকড়ি করেছি। উপকূল এলাকায়ও টহল জোরদার করব।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অপ্রতুল। তাই সুযোগ বুঝে স্থল ও জলপথ দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। রাতের আঁধারে সাঁতরেও তারা বাংলাদেশে আসছে। তবে এটাও সত্য যে, বেশির ভাগই দালালদের মাধ্যমে এপারে ঢুকছে।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা জয়নাল বলেন, দালালরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে নৌকায় রোহিঙ্গাদের এপারে জলসীমায় নিয়ে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল নেই এমন জায়গায় তাদের নামিয়ে দেয়। এর পর তীরে ঝাউবনে লুকিয়ে রাখে। সেখান থেকে গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয়। দালালদের সাথে কিছু মাছ ধরার নৌকাও জড়িত রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা ২০ হাজার থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের এ দেশে নিয়ে আসে। এ কাজে যুক্ত রোহিঙ্গাসহ বেশ কিছু দালাল সক্রিয় রয়েছে।
হ্নীলা সীমান্তের মাওলানা কলিম উল্লাহ জানান, সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয়রাও রোহিঙ্গা ঠেকাতে সোচ্ছার হতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় তারা খুব সহজেই ঢুকে পড়ছে।

তিনি বলেন, টেকনাফে স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বহু গুণ। ফলে স্থানীয় মানুষের বেকারত্ব বাড়ছে। অনেকেই নিরুপায় হয়ে মাননব পাচার, মাদক ও অস্ত্র বহনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

টেকনাফের ব্যবসায়ী জানে আলম বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অনেকটা অরক্ষিত হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। তার ওপর দেশের কথা চিন্তা না করে অর্থের লোভে রোহিঙ্গা ঢোকাচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, বিজিবি-কোস্টগার্ডের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়দের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গা পারাপারে জড়িত দালালদের ধরতে অভিযান চলছে। নাফ নদের পাশাপাশি উপকূলেও টহল জোরদার করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement