লাকসামে চাঞ্চল্যকর সাইমন হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি গ্রেফতার
- মোহাম্মদ মিজানুর রশিদ, লাকসাম (কুমিল্লা)
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:০৫
লাকসাম চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস সাইমন (১৭) হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামিদের গ্রেফতার করেছে লাকসাম থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) আটক আসামিদের আদালতে প্রেরণ করলে আসামিরা বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী প্রদান করে।
গ্রেফতাররা হলো মনোহরগঞ্জ উপজেলার আমিনুল ইসলামের ছেলে আব্দুল ওয়াদুদ প্রকাশ মানিক এবং অপর আসামি লাকসাম পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও এলাকার মরহুম নুর মিয়ার ছেলে সানাউল্লাহ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে হাসপাতাল ভবনের পশ্চিমে পাশে অবস্থিত পরিত্যক্ত কোয়ার্টারের ভেতর খাটের ওপর মরহুম মো: শাহজাহান প্রকাশ সাইমনের (১৭) লাশ সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়, লাশ গলা সামনের অংশ হতে বাম কাঁধের অংশ অর্থাৎ ঘাড় পর্যন্ত কাটা ছিল। কাটা অংশ দিয়ে পঁচা রক্ত, পানি বের হচ্ছিল, নাক-মুখ দিয়ে পঁচা রক্ত, পানি গড়িয়ে পড়ছিল এবং মাথার পেছনে কাটা দাগ ছিল।
ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে লাশ মো: শাহজাহান প্রকাশ সাইমনের (১৭) বাবা-আবদুল হান্নান, সাং-কাশিপুর, ৩ নম্বর ওয়ার্ড, পো: বিপুলাসার, ১১ নম্বর বিপুলাসার ইউনিয়ন, থানা-মনোহরগঞ্জ, জেলা-কুমিল্লা লাকসাম খানায় একটি মামলা করেন।
কুমিল্লার পুলিশ সুপারের বিশেষ নির্দেশনায় পুলিশ সুপারের (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও সহ-পুলিশ সুপার (লাকসাম সার্কেল) এবং অফিসার ইনচার্জ, লাকসাম থানাসহ ফোর্সের সমন্বয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন পূর্বক আসামি গ্রেফতারের লক্ষ্যে একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তি, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৮ তারিখ ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন লোহারব্রীজ এলাকা হতে মামলার আসামি ১। আঃ ওয়াদুদ প্রঃ মানিক (২৪), পিতা-আমিনুল ইসলাম প্রঃ দুলাল, মাতা-কুলছুম আক্তার, সাং-গনিপুর (৪নং ওয়ার্ড চেয়ারম্যান বাড়ী), থানা মনোহরগঞ্জ, জেলা-কুমিল্লাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামিকে সাথে নিয়ে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর আসামি মোঃ সানাউল্লাহ (২৪), পিতা-মরহুম নুরু মিয়া, মাতা-মরহুম রোকেয়া বেগম, সাং-পশ্চিমগাঁও (পুরান বাজার), ৬নং ওয়ার্ড, থানা-লাকসাম, জেলা-কুমিল্লাকে লাকসাম পুরান বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং ভিকটিমের অটোরিক্সা ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামি আব্দুল ওয়াদুদ প্রকাশ মানিক'কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, গ্রেফতারকৃত অপর আসামি সানাউল্লাহ এবং সে পূর্ব পরিচিত এবং তাদের মধ্যে নিয়মিত দেখা সাক্ষ্যৎ ও যোগাযোগ ছিল। ঘটনার কিছুদিন আগে আসামি সানাউল্লাহ মানিকের কাছে জানায় যে, ভিকটিম সাইমনের সাথে মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে তার ঝগড়া হয় এবং সাইমন সানাউল্লাহের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। মানিক এবং সানাউল্লাহ ভিকটিম সাইমনকে শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী মানিক ভিকটিম সাইমনের অটোবিকশায় ৫০০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে বিপুলাসার বাজার হতে লাকসাম সরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে রওয়া দেয়। দুপুরের দিকে সাইমনকে মানিক লাকসাম সরকারি হাসপাতালে গেইটে রেখে হাসপাতালের ভিতরে যায় সানাউল্লাহকে খোঁজার জন্য। মানিক হাসপাতালে ভিতরে গিয়ে সানাউল্লার সাথে দেখা করে মানিক গেইটের বাইরে এসে সাইমনকে হাসপাতালের ভেতরে যাওয়ার জন্য বলে। সাইমন মানিকের কথায় হাসপাতলের ভেতরে আসে এই সময় মানিক সাইমনকে জানায় যে সে মূলত একটি মেয়ের সন্ধানে আসছে এবং তার কিছুটা সময় লাগবে। কিছুক্ষণ পর সানাউল্লাহ তাদের সামনে আসে এবং তাদেরকে হাসাপাতালের ভেতরে অবস্থিত পুরাতন গাড়ির ওপর বসতে বলে। এই বলে সানাউল্লাহ হাসপাতালের বাইরে যায় এবং একটুপর ফিরে এসে মানিক এবং ভিকটিম সাইমনকে গাঁজা খাওয়ার অফার দেয় এবং পরবর্তীতে সব মিটমাট করে নেয়ার কথা বলে। ভিকটিম সানাউল্লার কথায় আশ্বস্ত হয়ে তাদের সাথে হাসপাতালে ভেতরে অবস্থিত পরিত্যক্ত কোয়ার্টারের দিকে যায়। তারপরে একে একে মানিক, ভিকটিম এবং সানাউল্লাহ পিছনের ভাঙ্গা জানালা দিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে এবং তারা তিনজন কোয়ার্টারের ভেতরে থাকা চৌকিতে বসে। সানাউল্লাহ উচ্চস্বরে সাইমনকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং তার মোবাইল ও অটোর চাবি দেয়ার জন্য বলে। সানাউল্লাহ এবং ভিকটিমের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হলে মানিক ভিকটিমের কাছ থেকে মোবাইল এবং অটোর চাবি নিয়ে নেয়। সাইমন রুম থেকে বের হওয়ার জন্য পেছনের জানালার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে, সানাউল্লাহ ভিকটিমকে কিল-ঘুষি লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে সাইমন সানাউল্লাহকে পেছন থেকে চেপে ধরে, এই অবস্থায় মানিক সজোরে একটি কাঠের লাঠি দিয়ে সাইমনের মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে। সাইমন চিৎকার শুরু করে এবং মেঝেতে বসে পড়লে সানাউল্লাহ পকেট থেকে ব্লেড বের করে সাইমনের গলায় পোছ মারে। ঘটনার আকস্মিকতায় মানিক পেছনের জানালা দিয়ে বের হয়ে যায় এবং দ্রুত নিজের কাপড়-ছোপড় খুলে ফেলে এবং পরনে শুধু একটি হাফফ্যান্ট (ফুটবল খেলার জার্সি) রাখে তার মূল উদ্দেশে ছিল মূলত নিজের পরিচয় লুকানো যাতে করে সিসিটিভি ফুটেজে ম্যাচ করানো না যায়। গেইটের বাইরে এসে মানিক সাইমনের অটোর লক খুলে নিজে চালিয়ে লাকসাম উত্তরকূল রোডে একটি মিশুক গ্যারেজে ৩৪ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা