২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ফোরলেন প্রকল্পের কাজ ফেলে পালিয়েছে ভারতীয়রা

ফোরলেন প্রকল্পের কাজ ফেলে পালিয়েছে ভারতীয়রা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর থেকে বন্ধ রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ-আখাউড়া নির্মাণাধীন মহাসড়কের ফোরলেন প্রকল্পের কাজ।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের পর ফোরলেন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ রেখে পালিয়ে যায় প্রকল্পে কর্মরত ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরাও। এতে চট্টগ্রাম-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে যান চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে। খানাখন্দে ভরপুর নির্মানাধীন মহাসড়কে মারত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিভিন্ন মাল ও যাত্রীবাহী যানবাহন। এতে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা।

এদিকে, প্রকল্পের কাজ আবার কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের পর ভারতীয় নমনীয় ঋণ এলওসির অধীনে ২০১৮ সালে তিনটি প্যাকেজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত দু’লেন থেকে মহাসড়কটি চারলেনে উন্নয়ন কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। প্রকল্পটির কাজ শুরুর পর গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পটির কাজ অনেকটাই থমকে যায়। পরে বালু সঙ্কটের কারণে আরো ছয় মাস বিলম্ব হয় প্রকল্পের নির্মাণ কাজের। এরই মধ্যে গত ২০২২ সালে প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছিল। এর মধ্যে প্যাকেজ-১-এর অধীনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জের গোল চত্বর থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত একপাশের দুই লেনের কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। প্যাকেজ-২-এর অধীনে বিশ্বরোড থেকে ধরখার পর্যন্ত এক পাশের কাজ অনেকাংশেই শেষ হয়েছে।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বাইপাস, ঘাটুরা বিরাসার, পৈরতলা, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় মহাসড়কের একপাশে খানাখন্দ থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। আর এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন, চালক এবং যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

স্থানীয়রা জানান, আখাউড়া-আশুগঞ্জ সড়কটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের কাজ বন্ধ থাকায় যানবাহনের চালক, যাত্রী এবং স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। খানাখন্দ সড়কের কারণে প্রতিদিনই ঘাটুরা, বিরাসার, পৈরতলা, পুনিয়াউট, রাধিকা এলাকায় যানজট লেগে থাকে। এতে করে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

অন্যদিকে, সড়কের তীব্র ধুলার কারণে আশপাশের বাসা বাড়িঘর বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছে সড়কের পাশের দোকানপার্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

মহাসড়কের গাড়ি চালকরা জানান, নির্মাণাধীন সড়কটি দিয়ে যানবাহন চালাতে গিয়ে তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে থাকার পাশাপাশি যানবাহনের নাট-বল্টু, চাকা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে আখাউড়া-আশুগঞ্জ ফোরলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো: শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত চারলেন প্রকল্পটি তিনটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন হচ্ছিল। তিনটি প্যাকেজেরই ঠিকাদার ছিলেন ভারতের এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভারতীয়রা তাদের হাইকমিশনে নিরাপত্তার কথা বলে সবাই দেশে চলে গেছেন। তারা কবে ফিরবে এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি। শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। কবে চালু হবে আমরা তা এখন বলতে পারছি না। চলমান দু’টি প্যাকেজের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন শ’ ভারতীয় লোক কাজ করতো। বর্তমানে তাদের মধ্যে একজনও বাংলাদেশে নেই।

মো: শামীম আহমেদ আরো জানান, আমাদের প্যাকেজ-১-এর আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত মহাসড়কের ৬২ শতাংশ এবং বিশ্বরোড থেকে ধরখার বাজার পর্যন্ত ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার বর্তমানে মেরামতের দায়িত্বও তাদের ছিল। যেহেতু তারা নেই, তাই রাস্তা মেরামত করার মতো জনবল বা যন্ত্রপাতি আমাদের হাতে নেই। আমরা রাজস্ব খাত থেকে টাকা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে ওপর থেকে।

এছাড়া গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর নির্মাণাধীন প্রকল্পটির ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পর প্রকল্পের মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। আমরা চুরি ঠেকানোর জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়েও চুরি ঠেকাতে পারছি না। তিনি এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার ফোরলেন প্রকল্পটিতে একটি উড়াল সেতুসহ ১৬টি ব্রিজ-কালভার্ট রয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement