মহেশখালীতে ১৫ বছর ধরে শরীফ বাদশার রামরাজত্ব
সংবাদ সম্মেলন কান্না করে বিচার চাইলেন ভুক্তভোগীরা- গোলাম আজম খান, কক্সবাজার অফিস
- ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:৫৬
আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরে দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলবাজি, ইয়াবা ও অস্ত্র চোরাচালান ও নিরীহ লোকজনের ওপর জুলুম-নির্যাতনের স্টিমার রোলার চালিয়েছেন মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা।
তার ও লালিত বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে চোখ, হাতসহ অঙ্গ হারিয়েছেন কয়েকজন। কিন্তু কোনো ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারনি। তার দাপট ও টাকা খেয়ে থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে শরীফ বাদশার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের আইনজীবী শাহরিয়ার মাহমুদ তুহিন বলেছেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের দোসর শরীফ বাদশা জাতীয় তালিকাভুক্ত ইয়াবা মাফিয়া ডন, অস্ত্র চারাচালানকারী, প্যারাবন নিধনকারী ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসের গড়ফাদার। ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেকসহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নিশান, ভাই আবদুল গফুর, ফরিদ মিয়া ও মাওলানা নুরুল হক মিলে পুরো এলাকাকে ১৫ বছর ধরে ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে রেখেছেন। নিজে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি।
নিজে ও বাহিনীর সদস্যদের মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ভয়ংকর আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এনে ব্যবসা করেছেন। এর ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা মাদককারবারি তালিকায় মহেশখালী উপজেলার শীর্ষে শরীফ বাদশার নাম আসে। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির সাথে শরীফ বাদশার নানা কালো ব্যবসা রয়েছে।
আইনজীবী শাহরিয়ার মাহমুদ তুহিন জানিয়েছেন, জমি দখলকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল শরীফ বাদশার নেতৃত্বে তার বাহিনীর লোকজন স্থানীয় মোস্তাক আহমদ ও তার অন্ত্বঃস্বত্ত্বা স্ত্রী মিনহার বেগমকে লবণমাঠে হত্যার উদ্দেশে গুলি করে। এতে চিরতরে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন মিনহার বেগম।
ফকিরাকাটার মকছুদ মিয়ার উপর হত্যার উদ্দেশে মারাত্মক হামলা করা হয়। এছাড়া আরো বেশ কয়েকজনকে হামলা করে নৃসংস আঘাত করেন। কিন্তু এসব কোনো ঘটনায় থানা পুলিশ শরীফ বাদশার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। উল্টো থানার ওসি তার পক্ষ হয়ে ভুক্তভোগীদের হুমকি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত হয়ে নিজ ও স্বামীর ওপর করা নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে কান্নায় ভেঙে ভুক্তভোগী মিনহার বেগম। তিনি বলেন, শরীফ বাদশা নিজে তাকে গুলি করেছেন। গুলিতে তার চোখ চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছেন। গরিব হওয়ায় যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারেনি। তার স্বামী মোস্তাক আহমদকেও নির্মমভাবে আঘাত করা হয়। কিন্তু থানা পুলিশ শরীফ বাদশার বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। আওয়ামী সরকার পতন হলেও এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শরীফ বাদশা ও তার লোকজন। তাই এখনো বাড়ি যেতে পারেনি মিনহার বেগমের পরিবার। অর্থাভাবে তারা এখন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, অন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিজের অনাগত সন্তান জন্ম নিলে আদরের সন্তানকে দেখতে পারবেন না তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আরেক ভুক্তভোগী মকছুদ আহমদ বলেন, আমাদের লবণ মাঠের জমি দখল করে শরীফ বাদশা ও তার লোকজন। এতে বাধা দিতে গেলে মকছুদ আহমদের ওপর গুলি বর্ষণসহ নানাভাবে আঘাত করা হয়। এতে তিনি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে অন্ধ হয়ে গেছেন।
সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত আরেক ভুক্তভোগী হেলাল উদ্দীন বলেন, শরীফ বাদশা ও তার লোকজন মিলে তাকে মারাত্মভাবে কোপায় এতে তার হাত চিরতরে পঙ্গু গেছেন।
এসব ভুক্তভোগীরা শরীফ বাদশা ও তার সহযোগিতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। একইসাথে তার দোসর থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতি দাবি করেছেন।
অন্যদিকে সম্প্রতি টেকনাফ থেকে একটি ভারি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। এই ঘটনায় বেলাল নামের এক পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার বেলাল আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, ওই ভয়ংকর অস্ত্র শরীফ বাদশার জন্য আনা হয়েছিল। এরপরও ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টেকনাফ থানার এসআই ইসমাইল হোসেন রহস্যজনক কারণে শরীফ বাদশাকে গ্রেফতার করছে না বলে জানান আইনজীবী শাহরিয়ার মাহমুদ তুহিন।
আয়োজিত শরীফ বাদশা ও তার বাহিনীর হাতে নির্যাতিতসহ অন্তত ২০ জন ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা