২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কমলনগরে বন্যা-পরবর্তী ভয়াবহ জলাবদ্ধতা : ৩০ শতাংশ এলাকা এখনো পানির নিচে

কমলনগরে বন্যা-পরবর্তী ভয়াবহ জলাবদ্ধতা : ৩০ শতাংশ এলাকা এখনো পানির নিচে - ছবি : নয়া দিগন্ত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের বন্যা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। এখানে বন্যা-পরবর্তী ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারণে এখনো পানির নিচে ৩০ শতাংশ এলাকা। খুবই ধীরে ধীরে নামছে পানি। বন্যার পানি প্রতিদিন কোথাও এক ইঞ্চি, কোথাও দুই ইঞ্চি, আবার কোথাও তিন ইঞ্চি কমছে। এখনো পানিবন্দি প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি না থাকলেও কমলনগরে বন্যা পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি হয়নি। এর কারণ হিসেবে ভুলুয়া নদীর ভরাট ও বেদখলের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা ও রামগতি উপজেলার চরবাদাম, চরআলগী এবং চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের গ্রামগুলোর পানি নামার একটি মাত্র পথ হলো ভুলুয়া নদী। এক সময়ের খরস্রোতা এই ভূলুয়া নদীর নাব্যতা হ্রাস ও একশ্রেণির প্রভাবশালী চক্রের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখল স্থাপনার কারণে এটি এখন খালে পরিণত হয়েছে। একপর্যায়ে মওসুমের পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একইসাথে পানি প্রবাহের শাখা খালগুলোও ভরাট ও অনেক স্থানে বেদখল হয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টির জমা পানিও আবদ্ধ হয়ে আছে। বাড়ি-ঘর থেকে পানি নামছে ধীরগতিতে।

শনিবার চরকাদিরা ইউনিয়নের চরবসু গ্রামের সরেজমিন ভয়াবহ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে, পানিবন্দি বাড়ি থেকে কলাগাছের তৈরি ভেলায় করে বাড়ি যাতায়াত করছেন অনেকে। এলাকার অধিকাংশ সড়কের কোথায়ও হাঁটু সমান বা কোথাও হাঁটুর নিচে পানি। আবার কোথায়ও রয়েছে বুক সমান পানি। বেশির ভাগ বসতঘরে এখনো পানি। তবে কিছু কিছু বসতঘর থেকে পানি নামলেও সেগুলো এখনো বসবাস উপযোগী হয়নি। এ কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজন এখনই বাড়ি ফিরতে পারছেন না।

চরবসু এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসমত আরা বেগমকে দেখা গেছে, একটি ভেলায় চেপে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত করছেন। তার বাড়ির আঙিনায় এখনো হাঁটুপানি। ঘরের মেঝেতে পানি। রান্নাঘরের কাঁচা ভিটা পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে।

আউলিয়ানগর এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক মাসের বেশি হয় আমরা ঘরের বাইরে আশ্রয় নিয়ে আছি। ঘরে ঢুকার মতো অবস্থা এখনো হয়নি। কবে নিজের বসতঘরে ফিরব তা বলতে পারছি না।’

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ভূলুয়া নদীসহ খালগুলোতে অবৈধভাবে স্থাপিত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা স্লুইসগেইট খুলে দেয়া হয়েছে। তবে এলাকার পানি নামছে ধীরগতিতে। এতে লোকজনের কষ্ট যেমন বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও।

তিনি আরো বলেন, বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ দেয়া অব্যাহত রয়েছে। একইসাথে সাধ্যমত দেয়া হয় গবাদিপশুর খাদ্যও। চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চালু করা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় তাদের প্রতিদিন দু’বেলা রান্না করা খাবার দেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement