২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় ১০০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত

কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় ১০০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত - ছবি : বাসস

ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় ভেসে ওঠতে শুরু করেছে ক্ষতের চিহ্ন। বন্যার ভয়াবহতা প্রায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জানা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকার কুমিল্লার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করা হয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। পানি কমায় কেউ কেউ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। আবার অনেকে এখনো রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় কুমিল্লার হাজার হাজার ঘর-বাড়ি। নষ্ট হয়ে যায় বইপত্র। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামপর্যায়ে যাদের বইপত্র নষ্ট হয়ে গেছে, স্কুলগুলোকে তালিকা প্রণয়নের জন্য বলা হয়েছে। তালিকা হাতে পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে পাঠদান স্বাভাবিক করা হবে।

এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) জানিয়েছে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লা অঞ্চলে ৩৩৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩১৪টিতে এখনই ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে না। এ অঞ্চলে বর্তমানে বাকি ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলমান আছে।

তানভির আহমেদ নামে এক মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী বলেন, বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। বইপত্র কিছুই রক্ষা করা যায়নি। এক সপ্তাহ আত্মীয়র বাড়িতে ছিলাম। পানি কমার পর বাড়িতে গিয়ে দেখি, সব বইখাতা ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে চলমান বন্যায় জেলায় ৬৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ক্ষতির মুখে পড়া এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম সংস্কার বা মেরামতের আগে চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আদর্শ সদর উপজেলায় ২৬টি, লাকসামে ৬৯টি, চৌদ্দগ্রামে ১০৫ টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৮৩টি, বুড়িচংয়ে ৯৫টি, নাঙ্গলকোটে ৮৯টি, মনোহরগঞ্জে ৯৬টি, লালমাই ১৪টি বরুড়া ১৮টি তিতাস ২১টি ও মুরাদনগরে ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা অভিভাবক মোবারক হোসেন বলেন, বন্যায় আমাদের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি গবাদিপশু সব শেষ হয়ে গেছে। বন্যায় ছেলেমেয়েদের বইপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে, ওরাও পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। স্কুল খুললে সরকার যদি নতুন করে বই দেয়, তবে ছেলে মেয়েরা আবার পড়াশোনা করতে পারবে।

ব্রাক্ষণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় স্কুলভবন ডুবে ছিল। শ্রেণী কক্ষগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফয়জুন্নেছা সীমা বলেন, কয়েক দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় সিলেবাস অনুযায়ী পাঠ কার্যক্রম থেকে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করব ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে, কতটুকু পারা যাবে জানি না।

কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: সফিউল আলম বলেন, মাঠে কোমরপানি পানি ছিল। শ্রেণী কক্ষেও উঠেছে পানি। বন্যার্ত মানুষেরা স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তথ্য ও মেরামতের বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখেছি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের আসবাবপত্র, ওয়াশ ব্লক, মাঠ যথাসময়ে সংস্কার ও মেরামত করা না হলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement