১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ফেনীতে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

- ছবি - বিবিসি

আকস্মিক বন্যায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি দেশের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। টেলিযোগাযোগসহ সব ধরনের যোগাযোগ থমকে যাওয়ায় বন্যাদুর্গত পরিবার ও স্বজনদের খোঁজখবর খবর না পেয়ে উদ্বেগে সময় কাটছে অনেকের।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ফেনী জেলা। এই জেলার বাসিন্দাদের স্মৃতিতে এমন বন্যার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই আকস্মিক বন্যায় পূর্ব প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগও পাননি অনেকে।

এমন বাস্তবতায় উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানাচ্ছেন, ফেনীতে থাকা পরিবারের সাথে দীর্ঘসময় ধরে কোনোরকম যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেননি।

কারো ক্ষেত্রে সময়টা কয়েক ঘণ্টা, কারো কয়েকদিন।

তেমনই একজন আদিত্য আরাফাত। একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে কর্মরত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে জানান, ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি তিনি। ফেনী সদরের নতুন রানীর হাটে তাদের বাড়ি।

‘ফেনী শহরের কাছে আমাদের গ্রামে কখনো বন্যা আসেনি। আমার বয়োজ্যষ্ঠ মা-বাবা জানে না কিভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে হয়। ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় আমি বাবা-মায়ের কণ্ঠস্বর শুনছি না,’ ফেসবুকে লিখেছেন আরাফাত।

শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার। জানালেন, তার বড় ভাইয়ের বাসা পাঁচ ছয় কিলোমিটার দূরে। তিনি কয়েকবার তাদের মা-বাবাকে আনতে গিয়ে ফেরত আসেন। সর্বশেষ, গত পরশু কথা হয় দুই ভাইয়ের।

‘বড় ভাইয়া বলল, বাবা মাকে উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এখন ওনার নাম্বারও বন্ধ,’ যোগ করেন আদিত্য আরাফাত।

তার বাবা পারকিনসনসে আক্রান্ত। মা শ্বাসকষ্টের রোগী। এমন দুর্যোগে তাই তাদের নিয়ে সন্তানের শঙ্কাটা আরো বেশি।

বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে, অন্যদিকে চার্জ না থাকায় ফোনগুলোও কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

যে কারণে ফেনীতে থাকা পরিবার বা প্রতিবেশী কারো সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঢাকার একজন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন, একান্নবর্তী পরিবারের ১২ সদস্য কী অবস্থায় আছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় কাটছে তার।

সর্বশেষ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বজনদের সাথে কথা হয় নোমানের।

রাতে উঠানে পানি এলেও বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তারা।

‘আমার পরিবার মনে করছে, ভিটা উঁচু, পানি উঠবে না। কিন্তু, ভোরে পানি বাড়তে শুরু করে। ফজরের পর থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পানি হাঁটু পরিমাণ হয়ে যায়,’ বলছিলেন আব্দুল্লাহ আল নোমান।

এরপর থেকে তিনি আর যোগাযোগ করতে পারেননি।

নোমান এবং আরাফাত দু’জনেই জানালেন তাদের জীবদ্দশায় নিজেদের এলাকায় এমন বন্যা তারা দেখেননি, শোনেওনি।

‘১৯৯৮ সালে শুধু একবার উঠান পর্যন্ত পানি আসছে। সেই জন্য আব্বা ভাবছে যতো পানিই হোক আমার ঘরে তো ওঠার কথা না,’ যোগ করেন নোমান।

টেলিযোগাযোগের কী হাল
বন্যার প্রাদুর্ভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হয়েছে ফেনী জেলাতেই।

টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের চিফ করপোরেট এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জেলাটিতে আমাদের ১১০টি সাইটের (যেসব স্থানে যন্ত্রপাতি স্থাপিত আছে) মধ্যে এক শ’টিরই পাওয়ার নেই।’

বিদ্যুৎ না থাকলেও নেটওয়ার্ক সচল রাখতে ১২ ঘণ্টার ব্যাকআপ থাকে বলে জানালেন তিনি।

কিন্তু দুই দিনের বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতিতে ব্যাকআপও ফুরিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, পোর্টেবল জেনারেটর দিয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনাগুলো সচল করার পরিকল্পনা করছেন তারা।

‘কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সেগুলোকে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।’

পানি একটু কমলেই পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবেন তারা।

বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলে সেবা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর পক্ষ থেকে একটি ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।

একইসাথে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে বলে জানালেন বিটিআরসি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো: আমিনুল হক।

ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের প্রধান, বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, কার্যক্রম সচল রাখার ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছেন।

বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চারটি মোবাইল সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানের ৬৫৬টি সাইটের মধ্যে ৫৯০টিই অচল হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের সমস্যার পাশাপাশি কয়েকটি জায়গায় ফাইবার অপটিক কেবল কাটা পড়েছে, অনেকগুলো সাইট পানির নিচে তলিয়ে আছে।

মুস্তাফিজুর রহমান জানান, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে সমন্বয় করতেও বেগ পেতে হচ্ছে।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত অপটিক্যাল কেবলটি সোনাগাজীর কাছে অবস্থিত এবং এটি লোকাল (স্থানীয়) ফাইবার। ফলে, জাতীয় পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও জানালেন বিটিআরসি'র মহাপরিচালক।

এখন পর্যন্ত কোনো টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

বাংলালিংকের তৈমুর রহমান জানান, পানি নেমে গেলে কিংবা বিকল্প উপায়ে জ্বালানি পাঠাতে পারলে তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যেই নেটওয়ার্ক স্থাপনাগুলো সচল করতে পারবেন তারা।

কেবল নেটওয়ার্ক সচল হলেই হবে না, বিদ্যুৎ সরবরাহের আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোনের যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ নেই।

শুক্রবার বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যার কারণে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সব বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র বন্ধ আছে।

জেলার গ্রাহক সংখ্যা চার লাখ ৪২ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ শ’টি সংযোগ সচল আছে।

টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় অবকাঠামো সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে।

তবে আক্রান্ত অন্য জেলাগুলোতে মোট আর্থিক ক্ষতি প্রায় সাত কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

বন্যায় প্রায় ১১ লাখ গ্রাহকের সংযোগ বন্ধ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ, এলো ৭ হাজার কোটি টাকা যেভাবে কাজ করবে রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ কমিশন ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসরাইলি কমান্ডারের পদত্যাগ ইউক্রেনকে রাশিয়ার আরো গভীরে হামলার অনুমতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র! পদত্যাগ করতে রাজি : অপেক্ষার পর বললেন মমতা মধু ব্যবসায় ভাগ্য খুলেছে মুফতি হাবিবুল্লাহ জোয়ারদারের সাপের বিষের বিবর্তন ঘটছে, ভয় ধরাচ্ছে বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার : প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা ভারতে এবার ৭ বছরের মুসলিম ছাত্রের টিফিন নিয়ে বিতর্ক বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা সিলেটে গৃহকর্মী শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

সকল