১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

‘ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করার পর হাত-পা বেঁধে ফেলেছি’

- ছবি : নয়া দিগন্ত

‘আমি খুন করার জন্য বাসায় প্রবেশ করিনি, টার্গেট ছিল স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা। আমাকে চিনে ফেলায় টেবিলের এক পাশে থাকা ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেছি। এরপর প্লাষ্টিকের রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেছি। এরপর রক্তমাখা জামা-কাপড় পরিবর্তন করে তা ব্যাগে ভরে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই।’

আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এভাবে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ছেলের স্ত্রীর ভাইয়ের হাতে খুন হওয়া সাজেদা আক্তার (৫৮) হত্যা মামলার আসামি মাদরাসা শিক্ষক তারিফুল ইসলাম (৩০)।

শুক্রবার বিকেলে মুখ্য হাকিম মাহমুদুল হকের আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক এই জবানবন্দি দেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মিরসরাই পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বন্ধন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ভাড়া বাসায় এ হত্যার ঘটনা ঘটে। পরে বিকেলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় ওই নারীর বড় ছেলের স্ত্রীর ভাই তারিফুলকে আটক করে।

তারিফুল মিরসরাই সদর ইউনিয়নের পাত্তার পুকুর সৈয়দপুর গ্রামের সোহরাওয়ার্দি ভূঁইয়া বাড়ির দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে। হত্যার ঘটনায় নিহতের মেয়ে আছিয়া চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সাজেদা আক্তার মিরসরাই উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লাল মোহম্মদ চৌধুরী বাড়ির এম মামুন চৌধুরী প্রকাশ খান সাহেবের স্ত্রী।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি তারিফুল জানান, ‘বৃহস্পতিবার সকালে বন্ধু শাহদাতের মোটরসাইকেলে ওই বাসায় যান। পরে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা চুরি করতে মূলত ওই বাসায় ঢুকেন। ঢুকার পর বোনের শাশুড়ির কাছে আলমিরার চাবি চাইলে দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে সাজেদা নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ সময় টেবিলের একপাশে থাকা একটি ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে এবং প্লাষ্টিকের রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে আলমারি থেকে একটি নেকলেস ও নগদ ৪৩ হাজার টাকা নিয়ে জামা পরিবর্তন করে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তিনি তার কর্মস্থল জোরারগঞ্জ নজির আহম্মদ দাখিল মাদরাসায় চলে যান। সেখানে ব্যাগ রেখে পুনরায় ঘটনাস্থলে সমবেদনা জানাতে আসেন। এক ঘণ্টার মধ্যে পুরো কিলিং মিশন শেষ করেন।’

নিহত সাজেদার মেয়ে আছিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তারিফকে আমরা নিজের ভাইয়ের মতো জানতাম। আমার বাবার বাড়িতে নতুন ঘর নির্মাণ ও প্রবাস থেকে আসা আমার ছোট ভাই আমজাদের বিয়ের জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অথচ তিনি আমার মাকে হত্যা করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘লাগলে ২০ লাখ টাকা চাইতি, আমরা দিতাম। কিন্তু এভাবে আমার মাকে খুন করলি কেন? আমরা হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

এ দিকে, সবার পরিচিত একজন মাদরাসা সুপার ও মসজিদের খতিবের এমন কর্মকাণ্ড কেউ মেনে নিতে পারছে না। অনেকে বলেন, যিনি সবসময় মানুষকে নছিহত করতেন, তিনি সামান্য স্বর্ণালঙ্কার ও টাকার লোভে পড়ে এমন জগন্য কাজ কী করে করতে পারলো!

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরসরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের জানান, শুক্রবার বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে বাসার আলমিরা থেকে নগদ ৪৩ হাজার টাকা, একটি সিটিগোল্ডের সীতা হার (মূল্য অনুমান-১৫ হাজার টাকা), একটি ১ ভরি সোনার চেইন (মূল্য অনুমান- ১ লাখ টাকা), এক জোড়া ৫ আনা ওজনের স্বর্ণের কানের দুলসহ (মূল্য ৩০ হাজার টাকা) মোট প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকার মামামাল লুট করেন। চিনে ফেলায় তারিফ বোনের শাশুড়ি সাজেদা আক্তারকে গলাকেটে হত্যা করেন।

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) দীপ্তেশ রায় জানান, হত্যার ঘটনায় নিহতের মেয়ে আছিয়া চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে খুনের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement