১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দাগনভূঞায় বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির মাছ

- ছবি : নয়া দিগন্ত

এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিল পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু আর গোলা ভরা ধান। কালের বিবর্তনে এই ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় নদী ও খালে দেশীয় প্রজাতির মাছ গুলো প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। উপজেলার চাহিদা মেটাতে এখন অন্য জেলার মাছে বাজার দখল করেছে।

নদীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও দূষিত পানি নদীতে প্রবেশ করায় মা মাছগুলো নদীতে ডিম ছাড়তে পারছে না। আর পুকুর ও উন্মুক্ত জলাশয়সমূহে করেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে মা মাছ নিধন ও নানা ধরনের কীটনাশককের যথেচ্ছ ব্যবহারকে মাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। আর এসব জলাশয়ে পর্যাপ্ত মাছ ধরে জীবিকার জোগাড় না হওয়ায় মৎস্যজীবীরাও বদলে ফেলেছেন তাদের পেশা।

দাগনভুঞা উপজেলা মৎস্য অফিসের সূত্র মতে, ‘দাগনভূঞা উপজেলার খাল-বিল, পুকুর, নদী ও প্লাবনভূমি রয়েছে মোট ৮ হাজার ৭৫৭টি। এসব জলাশয় সমূহে মোট ৮ হাজার ৪৯১ টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এ উপজেলায় ৭ হাজার ৮১৫ জন মৎস্যচাষী ও ৮০৯ জন জেলে এসব মাছ চাষাবাদ করে থাকেন। কিন্তু মাছের উৎপাদন ঘাটতি ও নানাবিদ কারণে প্রতিনিয়ত মাছ চাষ ছাড়ছেন খামারিরা আর জেলেরা ছাড়ছেন পেশা।

মৎস্যজীবী শেখ ফরিদ নয়া দিগন্তকে জানান, ‘আগে নদ-নদী, খাল-বিলে দেশীয় মাছ ধরে খেতাম। এসব জলাশয়ে কই, পুটি, ছোট রুপচাঁদা, খইয়া, তিতনি, টাকি, শৈল, মাগুর, শিং, ভেটকি, বেতরঙ্গি, গেচ্ছা, তারা বাইম, বাইলা, গুলশা, ছোট চিংড়ি, কাচকি, চক্কুনি, কাইয়া, চিতল, হইল্লা, পাবদা, আমলইয়া, বোয়াল, হইল্লা ও গজার মাছ-সহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন এসব মাছ তেমন জালে ধরা পড়ে না। নানা কারণে এসব মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দেশীয় মাছের এসব প্রজাতি রক্ষা করতে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।’

দাগনভূঞা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কায়েস রিপন নয়া দিগন্তকে জানান, ‘এখন বাজারে তেমন দেশী মাছ দেখি না, বর্ষাকালে কিছু ছোট মাছ উঠে কিন্তু বছরের অন্য সময়ে দেশী মাছ বাজারে পাওয়া যায় না। যেসব মাছ মাঝে মধ্যে পাওয়া যায় তার মূল্য অনেক বেশি। যা সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে।’

এ বিষয়ে দাগনভুঞা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা সাহার কাছে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় দাগনভুঞা উপজেলার ওমরপুর তালতলায় ছোট ফেনী নদীতে ঘের দিয়ে একটি অভয়াশ্রম তৈরী করেছি এবং সিন্দুরপুর ইউনিয়নে বিল নার্সারীতে রেনু সংরক্ষণ করা হচ্ছে যা বিলে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এছাড়া বিলুপ্ত মাছ রক্ষায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট যদি উক্ত মাছসমূহের পোনা দেয় তখন মৎস্য অধিদফতর আমাদের তা বিতরণ করলে আমরা চাষিদের তা বিতরণ করবো।’

এছাড়া জলাশয়ে কীটনাশক প্রয়োগ, নদীতে নানা ব্লক অপসারণ, নদীতে দূষিত বর্জ্যের পানি প্রবেশ বন্ধ, কারেন্ট জালের বিস্তার বন্ধকরণ বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে বিলুপ্তির হাত থেকে দেশীয় মাছ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement