আকাশে বিমান, আতঙ্ক টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে
- গোলাম আজম খান, কক্সবাজার অফিস
- ১৩ জুন ২০২৪, ১৮:৫৬, আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ১৯:০২
নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে গুলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের ভারী গোলা ও মর্টার শেলের শব্দে শাহপরীর দ্বীপ এবং সেন্টমার্টিন কেঁপে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে অনেক ক্যাম্প বিদ্রোহী আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমারের আকাশসীমায় উড়ছে যুদ্ধবিমান। নাফ নদীতে টহল দিচ্ছে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। টেকনাফের নাফনদীর সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কাছে টানা ২ দিন ধরে দেখা মিলছে বড় ধরনের একটি জাহাজ। আর সেই জাহাজ ও মিয়ানমারের স্থলভাগে বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চলছে গোলাগুলি। এ সময় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এমন পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
বুধবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে সীমান্তের ওপারের গোলাগুলির শব্দে নির্ঘুম রাত কাটান বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা।
সাবারাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসনাইন বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে ফের মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্তের এপারে টেকনাফ সাবারাং শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় কম্পন সৃষ্টি হয়েছে।
সীমান্তে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারে ফের সংঘর্ষ এপারের মানুষজনের মাঝে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। আমরা জেনেছি, ওপারে যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে, ফলে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে- তাই সীমান্তরক্ষীরা সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বুধবার দুপুরে নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে মিয়ানমারের জলসীমায় সে দেশের যুদ্ধ জাহাজ এসেছে। জাহাজটি রাতেও মৌলভীপাড়ার সীমান্তের ওপারে দেখা গেছে। এরপর রাত থেকে শুরু হওয়া মর্টারশেলের বিকট গোলার শব্দ থামেনি। পুরো রাতজুড়ে শাহপরীর সীমান্ত দ্বীপটিতে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে।
এদিকে গুলির শব্দে কাঁপছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনও। মিয়ানমারের আকাশসীমায় উড়ছে যুদ্ধবিমান। এতে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে আছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সারারাত মিয়ানমার থেকে ফের মর্টার শেল ও গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না।
মিয়ানমার সীমান্ত থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাতায়তকারি নৌযান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের কারণে ১০ দিন বন্ধ থাকার পর বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় শুরু হয়েছে ট্রলার চলাচল। তবে বৃহস্পতিবার পণ্যবাহী কোনো ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়েনি বলে জানিয়েছেলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডারডেইল এলাকার সাগর উপকূলের পয়েন্ট দিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলার যোগে এসব মানুষ ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও মো: আদনান চৌধুরী।
আদনান চৌধুরী বলেন, দুপুর ১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে ৩টি ট্রলার যোগে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় অন্তত তিন শতাধিক মানুষ টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়। বিকেল ৩টার দিকে ট্রলারগুলো টেকনাফের মুন্ডারডেইল সাগর উপকূলে পৌঁছে। কিন্তু সাগরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এসব ট্রলার থেকে লোকজনকে সরাসরি কূলে উঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। পরে কূল থেকে কয়েকটি ডিঙ্গি নৌকা উপকূলের কিছু দূরে সাগরে অবস্থানকারি ট্রলারগুলোর কাছে পাঠানো হয়। পরে বড় ট্রলার থেকে এসব মানুষকে ডিঙ্গি নৌকায় তুলে কূলে নিয়ে আসা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, গত ১০ দিন দ্বীপে আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় দ্বীপের খাদ্য পণ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এখন বিকল্পভাবে ট্রলার চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলছে। যে ট্রলারগুলো গেছে ওইসব ট্রলার নিয়ে টেকনাফে থাকা মানুষ ফিরে আসবে।
টানা ১০ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ নিয়ে ইউএনও আদনান জানান, বৃহস্পতিবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের সাগরের বিকল্প পথে যাত্রী পারাপার শুরু হলেও পণ্যবাহী কোনো ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে টেকনাফ ছাড়েনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: ইয়ামিন হোসেন বলেন, মূলত কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে বড় জাহাজ যোগে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে যাবেন। এটা ব্যবসায়ী এবং জাহাজ মালিকরা মিলে করবেন। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন। এছাড়া এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে যে ট্রলারে যাত্রী আসা-যাওয়া করছে ওখানে কিছু পণ্য নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে খাদ্য সংকট হবে না।
তবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলাচলের বিকল্প রুট খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকালে খাবার ও পণ্যবাহী দুটি জাহাজ টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারে ফিরছেন দুই শতাধিক মানুষ
কয়েকদিন যোগাযোগ বন্ধ থাকার পর বিকল্প পথে তিনটি ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে ফিরছে দুই শতাধিক হোটেলকর্মী, শ্রমিক ও বিভিন্ন কাজে গিয়ে আটকে পড়া দুই শতাধিক মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুর ১টার দিকে সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট থেকে ট্রলার তিনটি টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আদনান চৌধুরী।
তিনি জানান, তিনটি ট্রলারে করে সেখানে ঈদের ছুটি বা বিভিন্ন কাজে গিয়ে আটকে পড়া দুই শতাধিক মানুষকে নিয়ে রওনা হয়েছে। ট্রলারগুলো মূলত বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফে পৌঁছাবে।