কবরে নামাতে গিয়ে দেখা গেল নবজাতক বেঁচে আছে!
- মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
- ০২ জুন ২০২৪, ২০:১৮
সাত মাস আগে বিয়ে হয় মো: ইউনুস আলীর সাথে জেসমিন আক্তারের। বিয়ের একমাস পর জেসমিন গর্ভবতী হয়। আনন্দের সীমা নেই এ দম্পতির সংসারে। এরপর কয়েকবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ্য রয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক।
শনিবার (১ জুন) সকালে হটাৎ রক্তক্ষরণ হলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আল্ট্রা করলে রিপোর্টও ভালো আসে। কিন্তু বিকেলে পুনরায় আল্টা করলে রিপোর্ট ভালো নয়, নবজাতক মারা গেছে বলে জানান চিকিৎসক।
এরপর ডেলিভারির প্রস্তুতি নেন এবং রাত পৌনে ৯টার দিকে নবজাতক ভুমিষ্ট হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি কার্টুনে করে বাড়ি নিয়ে জানাজা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টুন খুললে নবজাতক কান্না শুরু করেন। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মারা যাওয়া! সেই নবজতক এখনো বেঁচে আছে। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে মো: ইউনুস আলী। তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের পেটে ব্যাথা অনুভব ও রক্তক্ষরণ হলে শনিবার সকালে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন আয়েশার কাছে নেন। প্রথমে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে বাচ্চা ভালো আছে বলে জানান চিকিৎসক। তবে রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর দূর্বলতা কাটানোর জন্য গ্লুকোজ স্যালাইন দেন। এরপর তার পেট ব্যাথা আরো বেড়ে যায়। বিকেলে পুনরায় আল্ট্রা করার পর চিকিৎসক জানান বাচ্চা মারা গেছে।
মো: ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, ‘সকালে বাচ্চা সুস্থ্য আছেন বলে জানান ডা. শারমীন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যাথা শুরু হয়। পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কাটুনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে কার্টুনে করে বাচ্চাকে কাফন দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেহেতু ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চা পরিবার ও বাড়ির সবাই কার্টুন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেয়ার জন্য কাটুন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালে ফোন করলে তারা বলেন, পাটিতে রাখেন বাচ্চা মারা যাবে! তখন আমি তাদের বকাঝকা করে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চমেক হাসপাতালের ছয় তলায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তারা আমার বাচ্চাকে মৃত বলে ৫ মাস ১৯ দিন বয়সে ডেলিভারি করে। বাচ্চা এখনো অপরিপক্ক। তারা কি ডাক্তার? নাকি অন্যকিছু। জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টুনে করে নিয়ে যেতে বলে। বেঁচে থাকলেও আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। এর জন্য ডাক্তার শারমীন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী।
৯ নম্বর মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরহাদ আনোয়ার জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে লোকজনের ভীড় দেখে ভেতরে যাই। এরপর দেখি ভুমিষ্ট হওয়া নবজাতক জীবিত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিভাবে মৃত বলল আমি বুঝতেছি না।
এ বিষয়ে জানতে মিঠাছরা হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন আয়েশার মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার এক মিনিট নড়াছড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসে। একপর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি বাড়ি নিয়ে যায় আমরা বলতে পারব না।
সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, নবজাতক মারা গেছে তাদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানি না। যদি মারা যেত আমরা ড্রেথ সাটিফিকেট দেব, রেজিস্টারে এন্ট্রি করব।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এই ধরনের ঘটনা আমি অবগত নই। এখন শুনলাম। সাধারণত পাঁচ-ছয় মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ট হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা