ঘূর্ণিঝড় রেমাল: চট্টগ্রাম বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ
শক্তিশালী টাগ ও স্যালভেজ ইউনিট প্রস্তুত- নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২৬ মে ২০২৪, ২০:২৪
ঘূর্ণিঝড় রেমাল ধেয়ে আসার খবরে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে রোববার চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের জেটিগুলো জাহাজশূন্য করার পাশাপাশি জাহাজে পণ্য উঠা-নামাসহ সব ধরনের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়েছে। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা এলার্ট-ফোর। বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ এবং বহির্নোঙ্গর হতে ৪৯টি মাদার ভেসেল গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে কয়েকশ’ লাইটার জাহাজসহ ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলো। পাশাপাশি বিমান উঠা-নামা (ফ্লাইট অপারেশন) বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। সিডিউল বাতিল হয়েছে ১৩টি আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বেলা ১টা নাগাদ জেটি ও বহির্নোঙ্গর হতে সকল বাণিজ্যিক জাহাজ গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া আভ্যন্তরীন নৌযানগুলোকে (লাইটার জাহাজ) কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট হতে শাহ আমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ছিল উত্তাল। মাঝারি আকারের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়ে। সাথে বাতাসের তীব্রতাও বাড়ছিল। সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব দেখা না গেলেও দুপুরের পর আবহাওয়া কিছুটা গুমোট হয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরাতে থাকে।
৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারির পর চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা, কাট্টলী, আকমল আলী সড়ক ও হালিশহরের জেলেপল্লিসহ উপকুলবর্তী উপজেলাগুলোকে মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চবক-এর সাইক্লোন ডিজেস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড পোস্ট সাইক্লোন রিহেবিলিটেশন প্ল্যান-১৯৯২ অনুযায়ী আবহাওয়া অধিদফতর ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারি করলে প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা অ্যালার্ট-১ জারি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদফতর ৪ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারি করলে বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি করে। বিপদ সঙ্কেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য বন্দরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। বিপদ সঙ্কেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে আঘাত হানার আগে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারির পর চবক এর সাইক্লোন ডিজেস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড পোস্ট সাইক্লোন রিহেবিলিটেশন প্ল্যান-১৯৯২ অনুযায়ী চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে চার মাত্রার সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে কর্তৃপক্ষ। বন্দরের নিজস্ব এই সতর্কতা জারির পর চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি থেকে ১৩টি জাহাজ সকালের জোয়ারে বহির্নোঙ্গরে গভীর সাগরের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেটিতে থাকা বাকি জাহাজগুলোকেও সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল। এছাড়া বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে কক্সবাজারের উপকূলীয় সাগরের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। সকল সমুদ্রগামী জাহাজের ডাবল ইঞ্জিন চালুর নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বন্দরে জাহাজে পন্য-উঠানামা বন্ধ করা হয়েছে। জেটি থেকে সবগুলো জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে পাঠানো হয়েছে। ইকুইপমেন্টগুলো লক করে রাখা হচ্ছে। ঝড়ে দুর্ঘটনা এড়াতেই জাহাজগুলোকে জেটি থেকে সরিয়ে দেয়া হয় বলে তিনি জানান।
পাশাপাশি জরুরী নৌ দুর্ঘটনা মোকাবেলায় শক্তিশালী টাগ ও স্যালভেজ ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্দর নৌ বিভাগের সকল জাহাজ ১০০ শতাংশ জনবলসহ যেকোনো শিপিং সার্ভিসের জন্য নিরাপদ অবস্থানে সচল রাখা হয়েছে। বন্দরে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ বিকেলে নয়া দিগন্তকে জানান, আগামীকাল সকাল ৫টা পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য জলোচ্ছাসের হাত থেকে বিমান বন্দরের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সুরক্ষায় সেগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
নির্ধারিত ৮টি ডোমেস্টিক ও ৫টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সিডিউল বাতিল করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা