১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মিয়ানমার থেকে অস্ত্র ঢুকছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

মিয়ানমার থেকে অস্ত্র ঢুকছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে - ছবি : নয়া দিগন্ত

উখিয়া টেকনাফ সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান বেড়েছে। এসব মাদক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। আর আগ্নেয়াস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে যাচ্ছে।

মাদক, অস্ত্র চোরাচালান ও অপহরণের মতো ঘটনায় জড়িত স্থানীয়দের পাশাপাশি রোহিঙ্গারা। স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সমন্বয়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।

সম্প্রতি উখিয়ার পাটুয়ারটেক থেকে সাত লাখ ইয়াবা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাব জানায়, বোধবার গভীররাতে দুর্গম লাল পাহাড়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার আস্তানায় অভিযান চালায় র‌্যাব। বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, গ্রেনেডসহ নানা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ সময় আরসার বাংলাদেশ কমান্ডার মোহাম্মদ শাহানুর প্রকাশ মাস্টার সলিম (৩৮) ও তার সহযোগী মোহাম্মদ রিয়াজকে (২৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। হাকিমপাড়া ক্যাম্পের পশ্চিমে দুর্গম লাল পাহাড়ে বেশ কয়েক ঘণ্টার অভিযানে র‌্যাবের সাথে আরসার গোলাগুলি হয়। পরে আরসার আস্তানা থেকে পাঁচটি গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশি তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি এলজিসহ বিপুল গোলাবারুদ ও কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, তাদের কাছে গোপন সংবাদ ছিল অস্ত্র ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে অস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশে এনে সন্ত্রাসীদের কাছে হস্তান্তরের জন্য সংঘবদ্ধ হয়েছে। এর সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার উখিয়ার মাদারবুনিয়া এলাকার গহীন পাহাড়ে দুর্ধর্ষ ডাকাত মোস্তাকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় মোস্তাক, রবি আলম, কাশেম এবং মোস্তাকের স্ত্রীকে দুটি এলজি, ৭৭ রাউন্ড গুলি এবং ২৪টি গুলির খোসাসহ গ্রেফতার করা হয়। তাদের সহযোগী বেলাল টেকনাফ থেকে পালিয়ে নিজ এলাকা মহেশখালী যাওয়ার সময় গ্রেফতার হয়।

বেলালের দেয়া তথ্যমতে টেকনাফের শাপলাপুর এলাকায় সমুদ্র তীরবর্তী ঝাউবাগানের মধ্যে বালুর নিচে রাখা একটি বিদেশী জি থ্রি রাইফেল, একটি ম্যাগাজিন ও ১৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, গ্রেফতাররা সংঘবদ্ধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। তারা মিয়ানমার থেকে ভারী অস্ত্রগুলো এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এরমধ্যে জার্মানির তৈরি জি থ্রি রাইফেল ও রকেট সেলের মতো ভারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। জব্দ করা বেশির ভাগ অস্ত্রই বিদেশী।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিম সুপার মো: মাহফুজুল ইসলাম বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পাঁচ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোস্তাক একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে চার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী রবির বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও একাধিক অস্ত্র মামলা আছে। এ ঘটনায় উখিয়া ও টেকনাফ থানায় অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে। আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একইসাথে অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

কীভাবে এসব ভারী অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো: মাহফুজুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠন সক্রিয় আছে। মূলত ক্যাম্পে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য মিয়ানমার থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে অবৈধপথে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে তারা। এজন্য মাঝেমধ্যে ক্যাম্পে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। আমরা তাদের ধরতে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছি। যাতে তারা ক্যাম্পে সক্রিয় হতে না পারে, সেজন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। গত ২৮ এপ্রিল ভোররাতে উখিয়া কুতুপালং-২ ওয়েস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৯ ব্লকে অভিযান চালিয়ে দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গুলিসহ পাঁচ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে এপিবিএন পুলিশ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে আরসা ও অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, গ্রেফতাররা বেশির ভাগই রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারের জন্য আরসার সদস্যরা নানা অপরাধে জড়ায়। এরমধ্যে মুক্তিপণের জন্য অপহরণসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও রয়েছে। তথ্য পেলেই আমরা অভিযান চালিয়ে তাদের দমন করি। ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে মাস্টারসলিম। থাকেন উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পে। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছে। সসাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আরসা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ায় তাকে আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার সহযোগী রিয়াজের বিরুদ্ধেও একটি হত্যা মামলা রয়েছে। ৮ এপিবিএন বলছে, চলতি বছরের পাঁচ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে হ্যান্ড গ্রেনেডসহ ৪৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ৩৫ মামলায় ৪২ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। শুধু মে মাসে ক্যাম্পগুলোতে ১৭টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এরমধ্যে আরসা বিরোধী চার রোহিঙ্গা নেতাও আছেন।

ক্যাম্পে দায়িত্বরত ৮-এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, ভারী অস্ত্র উদ্ধারের পর ক্যাম্পে টহল জোরদার করেছি আমরা। সীমান্ত পেরিয়ে যাতে কোনো অস্ত্র ওসন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে সেজন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছি।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্বিতীয় দফা অভিশংসনের মুখে ইউন সুক মহিপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত আহত বেল্লাল স্বপ্ন দেখেন নতুন বাংলাদেশের আ’লীগ পাক বাহিনীর জুলুমের পুনরাবৃত্তি করেছে : শফিকুল আলম নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী নিহত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বিএনপির শ্রদ্ধা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস নিয়ে দূষণে শীর্ষে ঢাকা ‘মধ্যপ্রাচ্যকে নিজেদের অনুকূলে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল’ শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা, তাপমাত্রা নামলো ৮ ডিগ্রিতে তালিবান মন্ত্রীর হত্যাকাণ্ডে আইএস-এর সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগ ভারতীয় সংবিধান লঙ্ঘন করে মোদী সরকার খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে : ড. মাসুদ

সকল