সারাদিন অপেক্ষার পরও লাশ ফেরত দেয়নি আরাকান আর্মি
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
- ১৩ মে ২০২৪, ১১:৫০
উখিয়ার পাশ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরএসও’র সোর্স ভেবে বাংলাদেশী যুবককে হত্যার পর সারাদিন পার হলেও লাশ ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)।
রোববার সকাল ৮টার দিকে শূন্য লাইন থেকে ক এক কিলোমিটার মিয়ানমার অভ্যন্তরে আরাকান ঘাট নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার সীমান্তে ৪৮ নম্বর পিলারের ওপারে বেনডুলা বাজারে দেশী পণ্য বিক্রি করে ফিরে আসার সময় এই ঘটনার শিকার হন আবুল কালাম।
নিহত আবুল কালাম (২৮) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বামহাতির ছড়া গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে। তার দুটি সন্তান রয়েছে।
কালামের লাশ ফেরত না দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন।
রোববার দুপুর থেকে লাশ ফেরত দেয়ার কথা বলে তিন দফায় নিহত আবুল কালামের পরিবারকে সীমান্তের ৪৮ নম্বর পিলারের কাছাকাছি আরাকান ঘাট নামক স্থানে বসিয়ে রাখেন আরাকান আর্মির সদস্যরা।
বিষয়টি স্বীকার করে লাশের জন্য অপেক্ষমান মৃত আবুল কালামের ভাই আবু তাহের ও স্ত্রী আরিফা মনি বলেন, লাশ ফেরত পেতে রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সীমান্তে অপেক্ষা করি। তবে লাশ ফেরত দেবে বলে আরাকান আর্মি কয়েক দফা ঘুরায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লাশ না দিয়েই তাদের ফেরত পাঠায় আরাকান আর্মি। পরে রাত ৮টায় খালি হাতে বাড়িতে ফিরে আসি।
নিহতের স্ত্রী জানান, তার স্বামী রোববার ভোর সাড়ে ৩টায় অন্যান্যদের সাথে নিয়ে সীমান্তে যায়। সকালে খবর পায় আরাকান আর্মির গুলিতে স্বামী নিহত হয়েছেন। স্বামী হারিয়ে আরিফা মনি এখন বাকরুদ্ধ।
তিনি জানান, তার স্বামী কোনো বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে পরিচিত ছিল না। গরিব মানুষ কাজ করে সংসার চালাই। শ্রমিক হিসেবে ব্যবসায়ীদের সাথে কাজ করতেন তার স্বামী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো জানায়, আরাকান আর্মির গুলিতে নিহত আবুল কালাম বাংললাদেশ থেকে মুরগীর ডিমের একটি খাচিসহ কিছু পণ্য দিয়ে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে বেনডুলা বাজারে যান। ফেরার পথে আরাকান ঘাট নামক স্থানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা তাকে আটক করে। সেই সময় তার দলে ছিল পাঁচজন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের মধ্যে একজন জানান, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা আবুল কালামকে মিয়ানমারের অপর বিদ্রোহী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সোর্স মনে করে ওঁৎ পেতে থাকে। সে কারণে কোনো কথাবার্তা না বলেই তাকে কাছে ডেকে নিয়ে কপাল বরাবর গুলি করে। ফলে ঘটনাস্থলেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। সাথে সাথে মারা যান। পরে তাকে সারাদিন পলিথিনে ডেকে রাখা হয়। সন্ধ্যার সময় কাঠের বাক্সে রেখে দেয়।
আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশীকে হত্যার পর সীমান্তে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরও নিহতের পরিবার সারাদিন লাশ ফেরত নেয়ার জন্যে তারা সীমান্তে অবস্থান করে।
স্থানীয়রা অনেকেই ধারণা করছেন, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরএসও’র সোর্স সন্দেহে আবুল কালামকে হত্যা করা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, এ ঘটনার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সড়কে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে বিজিবি তাদের টহল জোরদদার করেছে।
এ ব্যাপারে বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, বামহাতির ছড়া এলাকার যুবক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যার বিষয়টি জেনেছি। তার লাশ এখনো মিয়ানমারের অংশে। রোববার সারাদিন নিহতের পরিবার অপেক্ষা করে খালি হাতে রাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। তবে লাশ ফেরত আনার ব্যাপারে জোর তৎপরতা চলছে বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা