২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিশ্বের সবচেয়ে দামি সূর্যডিম আমের চাষ মিরসরাইয়ে

বিশ্বের সবচেয়ে দামি সূর্যডিম আমের চাষ মিরসরাইয়ে - ছবি : নয়া দিগন্ত

দেশী আমের পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে দামি সূর্যডিম ও ব্যানানাসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নত জাতের বিদেশী আমের চাষ হচ্ছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আম বাগানও বাড়ছে। একসময় রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকার আমের অপেক্ষায় থাকতেন এখানকার মানুষ। আম চাষের পরিধি বাড়ায় আগামী কয়েক বছর পর মিরসরাইয়ে উৎপাদিত আম দিয়ে এখানকার চাহিদার পুরোটাই মেটানো যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

৮-১০ বছর আগে থেকে মিরসরাইয়ে আম চাষ শুরু হয়। অনেকে প্রথমে শখের বসে চাষ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ হচ্ছে। এখানকার আম রাসায়নিক ও ভেজালমুক্ত হওয়ায় চাহিদাও অনেক। অনেক বাগান মালিক অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে আম বিক্রি করছেন। দেশী জাতের ছাড়াও এখানে বিদেশী জাতের আম চাষ করা হচ্ছে। বিদেশী জাতের আমগুলো হলো সবচেয়ে দামি জাপানের সূর্যডিম/মিয়াজাকি, ক্যাপ্টেন, কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো, ইন্দোনেশিয়ার ব্রুনাই কিং, কিং অব চাকাপাত, আলফেনসো, ডক মাই, হানিডিউ, আপেল ম্যাংগো, আলফানচুন ও থাই ব্যানানা। পাশাপাশি দেশী জাতের আমেরও চাষ হচ্ছে যেমন আম্রপালি, বারি ৪, বারি ১১, গৌড়মতি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, কাটিমন, রামগই, খিরশিহপাত ও ফজলি আম।

জোহরা এগ্রো ফার্মস অ্যান্ড নার্সারির স্বত্বাধিকারী ওমর শরীফ বলেন, আমি দুই বছর আগে আমার বাগানে ১০০টি জাপানি জাত সূর্যডিমের চারা লাগাই। এ বছর বেশ কিছু গাছে ফলন হয়েছে। আশা করছি আগামী বছর আরো বেশি ফলন হবে। এ ছাড়াও বিদেশী জাতের কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো, ইন্দোনেশিয়ান ব্রুনাই কিং, কিং অব চাকাপাত, আলফেনসো, আলফানচুন, থাই ব্যানানা আম ও দেশী জাতের বারি ৪, বারি ১১, কাটিমন, রামগই, খিরশিহপাত, আম্রপালি রয়েছে। এ বছর প্রায় ছয় লাখ টাকা আম বিক্রি করতে পারব বলে আশাবাদী।

উপজেলার সোনাপাহাড় এলাকায় ছয় একর জায়গায় আম বাগান করেছেন ফিরোজ খান। ইউনাইটেড এগ্রো নামের এ বাগানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতের আমের চাষ করা হয়েছে। ফিরোজ খান বলেন, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ডিজি আসাদুল্লাহ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাউল আলম, সারা বছর ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মেহেদী মাসুদসহ একটি টিম আমার বাগান পরিদর্শন করেছেন।

সাহেরখালীর মান্নান এগ্রোর আবদুল মান্নান বলেন, আমার বাগানে দেশী জাতের বিভিন্ন আমের পাশাপাশি বিদেশী সূর্যডিম ও ব্যানানা ম্যাংগো রয়েছে। আমার দেখাদেখি সাহেরখালীতে অনেকে আমের বাগান করেছে। আমি সবাইকে বাগান করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

উপজেলার আমের বাগান সমৃদ্ধ এলাকা করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগর এলাকায়। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মঈন উদ্দিনের হিলসডেল মাল্টিফার্ম বাগান রয়েছে। সেখানে আম্রপালি, ল্যাংড়া ও হাঁড়িভাঙাসহ বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে। এবারো এ বাগান থেকে কয়েক লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা উপ-কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ছোট বড় ৮০টি আম বাগান রয়েছে। বিভিন্ন বাগানের মালিককে আমাদের অফিস থেকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তারই ধারাবাহিকতায় মিরসরাইয়ে ক্রমেই আমের বাগান বাড়ছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, দেশী জাতের আমের পাশাপাশি মিরসরাইয়ে বিদেশী জাতের আমের বাগানও বাড়ছে। সবচেয়ে দামি ও পুষ্টিগুণে ভরা মিয়াজাকি আমও এখানে রয়েছে। পাহাড়ি ও সমতল মিলিয়ে এ এলাকা আম চাষের জন্য উপযোগী। তিনি আরো বলেন, বিদেশী জাতের এ আম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হওয়ায় দেশের বাইরে রফতানি করার সুযোগও আছে। ঠিকমতো পরিচর্যা করে ফলন ফলাতে পারলে স্থানীয়ভাবে বাজারমূল্যও ভালো পাওয়া যাবে। এতে চাষিরাও লাভবান হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement