বজ্রপাতে দেশের বিভিন্নস্থানে ১৯ জনের মৃত্যু
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জুন ২০২১, ১৫:৩৮, আপডেট: ০৬ জুন ২০২১, ২৩:৪৮
বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে বজ্রপাতে সিরাজগঞ্জে চারজন ও ফেনীতে দুই ভাই বোন মারা গেছে। একইসাথে নোয়াখালীর হাতিয়ায়, পটুয়াখালী সদর ও মির্জাগঞ্জ, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও বরিশালের উজিরপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রোববার বজ্রপাতে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। নয়া দিগন্তের ব্যুরো, অফিস ও সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট নিচে তুলে ধরা হলো-
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামে বজ্রপাতে এক কিশোরী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘর থেকে বের হয়ে আরেক ঘরে যাওয়ার পথে বাড়ির উঠানেই তারা বজ্রপাতের শিকার হন। নিহতরা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্র জানায়, রোববার সকাল ১০টার দিকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল। একইসময় বজ্রপাতও হচ্ছিল। আলমপুর গ্রামের অনু ফরাজী বাড়ির মোহাম্মদ সোলেমান প্রকাশের মেয়ে সাজেদা আক্তার সাথী (১৫) ও চরসাহাভিকারী গ্রামের মোহাম্মদ বাহার মিয়ার ছেলে আলামিন (৬) ঘর থেকে বের হয়ে আরেক ঘরে যাওয়ার পথে বাড়ির উঠানেই লুটিয়ে পড়েন।
সাথী স্থানীয় কাটাখিলা সামাদিয়া দাখিল মাদরাসার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও আলামিন তার ফুফাতো ভাই। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন বাবুল ঘটনার সত্যতা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, একই পরিবারের দুই শিশু-কিশোরের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
নাগরপুরে বজ্রপাতে কৃষকসহ ২ জনের মৃত্যু
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে বজ্রপাতে পৃথক স্থানে কৃষকসহ দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে প্রচণ্ড বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভাদ্রা ইউনিয়নের গাংবিহালী এলাকার বক্তার খানের ছেলে আলমাস (৫৪) ক্ষেতে ধান কাটা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। অপরজন বেকড়া ইউনিয়নের বেকড়া মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত পলান মিয়ার ছেলে সোনা মিয়া (৫০) বাড়ির উঠানে বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেন। নাগরপুর থানা ওসি (তদন্ত) বাহালুল খান বাহার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু
এ দিকে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বজ্রপাতে মো: সাজ্জাদ হোসেন তারেক (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার বাবা মোশারফ হোসেন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের পূর্ব ডোমখালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সাজ্জাদ কমরআলী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।
ওই এলাকার বাসিন্দা মো: আরিফুল ইসলাম বলেন, পূর্ব ডোমখালী এলাকার জামাল ভূঁইয়া বাড়ির মোশারফ ও তার ছেলে সাজ্জাদ বাড়ির অদূরে মাঠে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে সাজ্জাদ ঘটনাস্থলে মারা যান। বাবা মোশারফকে আহত অবস্থায় উদ্ধার হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাহেরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটি খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা।
পুঠিয়ায় বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু
রাজশাহীর পুঠিয়ায় জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে শাকিল আহস্মদ (২৭) নামের একজন মারা গেছেন। রোবরার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা হয়। তিনি উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের শুকপাড়া গ্রামের শহরত আলীর ছেলে।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমী রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শাকিল তার জমিতে কাজ করছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রাঘাতে জমিতেই তার মৃত্যু হয়।
নোয়াখালীতে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে বজ্রপাতের শিকার হয়ে আবদুল মান্নান খোকন (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার ৮ নম্বর সোনাদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মাইজচড়া গ্রামে তার মৃত্যু হয়। খোকন ওই এলাকার মোল্লাবাড়ীর মৃত মৌলভী সৈয়দ আহমদের ছেলে। তিনি পাঁচ সন্তানের বাবা।
বিকেলে কৃষক খোকন তার বাড়ির উত্তর পাশের একটি মাঠে গরু আনতে যান। ওই সময় বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই খোকনের মৃত্যু হয়।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পটুয়াখালীতে ঝড়ে গাছচাপা ও বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু
পটুয়াখালীতে ঝড় ও বজ্রপাতে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া গ্রামের মৃত মোনসের হাওলাদারের ছেলে মজিবার হাওলাদার (৩০) বজ্রপাতে মারা গেছেছেন। মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের সেরজন আলী হাওলাদারের ছেলে আব্দুল জলিলের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিষ কুমার জানান, গলাচিপা উপজেলার পশ্চিমপাড় ডাকুয়া এলাকায় ঝড়ে গাছচাপা পড়ে জলিল খান (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
অপর দিকে সদর উপজেলার মাদারবুনিয়ায় দু’টি ও মরিচবুনিয়ায় দু’টি গরু, গলাচিপার আমখোলায় একটি মহিষ ও একটি গরুসহ ছয়টি রাজহাঁস মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রোববার দুপুরে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতে জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুপুরে পর থেকেই শহরের সব এলকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। এতে জনজীবনে ব্যাপক বিরূপ্রভাব পড়েছে। জেলায় দেড় ঘণ্টায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে জেলা আবহাওয়া অফিস।
পটুয়াখালী ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রকৌশলী মো: আবুল কালাম আজাদ জানান, শহরের বিভিন্ন এলাকায় তিনটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। এ ছাড়া অনেক এলাকায় বিদ্যুৎতের তারের ওপর গাছ পড়ে আছে। পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেড় ঘণ্টায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৪৮ কিলোমিটার।
মির্জাগঞ্জে বজ্রপাতে মো: আবদুল জলিল নামে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেলে বৃষ্টির সাথে বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত মো: সেরজন আলী হাওলাদারের ছেলে মো: আবদুল জলিল (৪৫) বাড়ির পাশে আউশের বীজ রোপন করতে যান। এ সময়ে বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে পাবিরাবিক সূত্রে জানা গেছে।
ঘিওরে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বৈলট গ্রামে বজ্রপাতে শাহীন নামের এক যুবককের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় ক্ষেত থেকে ধান নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় শাহীন বজ্রপাতের ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার বাবা মুক্তার আলী খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত শাহীন মহাদেবপুর ইউনিয়ন সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন। কৃষক মুক্তার আলীর দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে শাহীন ছিলেন বড়।
সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু
সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে উল্লাপাড়া উপজেলার বাঙ্গালা ও উধুনিয়া ও শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ও নরিনা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- শাহজাদপুরের কায়েমপুর ইউনিয়নের চর আঙ্গারু গ্রামের আমানত হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৬), নরিনা ইউনিয়নের বাতিয়া গ্রামের আলহাজ বাবুর্চি (৫০), সলঙ্গা ইউনিয়নের আঙ্গারু বাঘমারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের আগদিঘল গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে স্কুলছাত্র ফরিদুল ইসলাম (১৫)।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের চর আঙ্গারু গ্রামে ধান কাটার সময় আমানত হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৬) ও নারিনা ইউনিয়নের বাতিয়া গ্রামের মৃত ভোলা পন্ডিতের ছেলে পন্ডিত বাবুর্চি (৬০) নিজ বাড়ির সামনে রোববার বিকেলে প্রচণ্ড ঝড়ের সময় বজ্রপাতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কায়েমপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বর আবুল কালাম আজাদ জানান, ঝড়ের সময় আব্দুল্লাহ মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মারা যান।
মাদারীপুর নারী মারা গেছেন
মাদারীপুরের শিবচরে বাদাম তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে আয়েশা বেগম (৫০) নামের এক নারী মারা গেছেন। বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের বালুরটেকে এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আয়েশা একই এলাকার ছোরফান হাওলাদারের স্ত্রী।
উজিরপুরে যুবকের মৃত্যু
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রামে বজ্রপাতে নান্টু বালী (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই এলাকার ইউনুস বালীর ছেলে।
রোববার বিকেলে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শওকত হোসেন নান্টু বালীর স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে একাধিক বজ্রপাত হয়। এ সময় নান্টু বালী নিজ ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে স্মার্ট ফোনে ভিডিও দেখছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে নান্টু বালী ও তার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিবেশী মো: সুমন গুরুতর আহত হন। পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই নান্টু বালীর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত সুমনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সিরাজদিখানে বজ্রপাতে কলেজছাত্রের মৃত্যু, আহত তিন
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে অপুর্ব বর্মন (১৭) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়য় অপু বর্মন (২১), পরিচয় বর্মন (১৬) ও পৃথক স্থানে রুনু খান নামে একজন নারী আহত হয়েছেন। মৃত অপুর্ব বর্মন উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নের শেখরনগর জেলে পাড়া গ্রামের স্বপন বর্মনের ছেলে ও আলী আজগর অ্যান্ড আব্দুল্লাহ কলেজের এইচএসসির পরীক্ষার্থী। পরিচয় ও অপু বর্মনের বাড়ী একই গ্রামে অপর আহত রুনু খান (৬৫) উপজেলার বাসাইল ইউনিয়নের ডাকাতি পাড়া গ্রামের সোহরাব খানের মেয়ে। রোববার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার শেখরননগর মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে দুই যুবক ও ডাকাতিয়া পাড়া গ্রামে বাহিরে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শেখরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম ও শেখরনগর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো: নাসির শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা