১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মোদিবিরোধী বিক্ষোভে কেন এত জ্বলে উঠলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া?

রোববার হরতাল পালনের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌরসভা ভবনে আগুন। - ছবি : বিবিসি

গত তিন দিনের সহিংস বিক্ষোভে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংঘর্ষের শুরু, কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই তা সবচেয়ে ব্যাপক সহিংস রূপ পেয়েছে।

যে ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা গেছে তার মধ্যে আটজনই এই জেলার। সেখানে রোববার সারা শহরের বহু সরকারি দফতর, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ঠিক কি ঘটেছিল যার ফলে সেখানে এতটা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হলো?

যে ধরনের হামলা হয়েছে
অন্য অনেক জেলা শহরের মতো একটি সড়ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। সড়কটির নাম টি-এ রোড।

শহরের যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তার সব কিছুই এই সড়কের দুই ধারে অবস্থিত।

স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা গেছে, টি-এ রোডের দুই ধারে জেলা সদরের পৌরসভা, শিল্পকলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, পৌর মিলনায়তন, ভূমি অফিস, প্রেস ক্লাব ছাড়াও আরো বেশ কিছু সরকারি ভবনে একে একে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বেলা ১১টা থেকে চলতে থাকে তাণ্ডব।

একটি ট্রেনে হামলা করা হয়, যেটি এর আগের দিন পুড়িয়ে দেয়া রেল স্টেশন পার হচ্ছিল।

রোববারের সহিংসতার সূত্রপাত ঠিক কি?
জেলার এক শ’ বছরের পুরনো জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসায় শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে হামলা করা হয়েছে বলে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরাও এরকম একটি হামলার কথা উল্লেখ করে বলছেন, এতে সেখানে আরো বেশি ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মুফতি এনামুল হক অভিযোগ করেছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক শ’ বছরের পুরনো একটা মাদরাসা আছে জামিয়া ইসলামি ইউনুসিয়া মাদরাসা। সেখানে যখন ছাত্রলীগের মিছিল থেকে আক্রমণ করা হয়, তখন এই কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ মানুষ ক্ষেপে যায়।

তবে এত ঢালাও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের দায় অস্বীকার করেছেন তিনি।

‘হেফাজতে ইসলামের মূল কর্মসূচি ছিল মোদির আগমন নিয়ে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় এমপির দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষজন আঙুল তুলছে যে, ওনার ইঙ্গিতে এসব হয়েছে। ভাঙচুরের জন্য হেফাজতে ইসলাম জড়িত না। যারা আগের দিন মাদরাসায় আক্রমণ করেছে তারাই আমাদের নামে বদনাম ছড়ানোর জন্য এসব হামলা চালিয়েছে।’

সংসদ সদস্যের যা বক্তব্য
শহরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের দায় যেমন নিচ্ছে না হেফাজতে ইসলাম, তেমনি যে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সংগঠনটি অভিযোগ তুলেছে তিনিও পাল্টা অভিযোগ করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের অধীনে রয়েছে সদর এলাকা। এই আসনের সংসদ সদস্য ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীর নেতৃত্বেই শনিবার সন্ধ্যার মিছিলটি বের হয়েছিল।

তিনি বলছেন, সেই মিছিল মাদরাসা এলাকায় কোনোমতেই প্রবেশ করেনি।

তিনি বলছেন, ‘তাদের এসব অভিযোগের আদৌ কোনো সতত্যা নেই। মিছিল একটা হয়েছিল। আগের দিন বঙ্গবন্ধুর মূর‍্যাল ভেঙেছে, প্রশাসন ও পুলিশের কার্যালয়ে হামলা করেছে, রেল স্টেশন পুড়িয়েছে, এসব কারণে আমরা একটা প্রতিবাদ মিছিল করেছিলাম। এই মাদরাসার এলাকায় প্রবেশ করেনি। আমি একেবারে চ্যালেঞ্জ করে বলছি। তাদেরকে (হেফাজতে ইসলাম) আমি বলবো মিথ্যার আশ্রয় যেন তারা না নেন।’

তবে তিনি বলছেন, ‘উচ্ছৃঙ্খল কোনো একটি গোষ্ঠী যাদের দূরভিসন্ধি আছে, তারা হয়তোবা মিছিলের পেছন থেকে ঢুকে থাকতে পারে। তবে সেটা আমার জানার কথা না। কারণ আমি শরীর খারাপ থাকায় মিছিল শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে যাই।’

ঠিক রোববারই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, হামলার ধরন দেখে মনে হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা এই পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত। যাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে জামায়াত শিবির।

এত ধ্বংসযজ্ঞ তাহলে কোন তৃতীয় পক্ষ চালাল তার জবাব মিলছে না কারো কাছেই। সেনিয়ে কথা বলার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে বেশ হামলার শিকার হয়েছে জেলার পুলিশ।

রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইলে হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে তাদের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছে দিনভর। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement