মিরসরাইয়ে বাণিজ্যিক আম চাষে আগ্রহ বাড়ছে যুবকদের
- এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
- ০২ জুলাই ২০২০, ১৩:১৭, আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০, ১৩:১৯
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে আম বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে শখের বসেও আমের বাগান করছেন। ইতোমধ্যে অনেক বাগানের আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। কেউ কেউ বিক্রিও করেছেন। কেমিক্যাল ও সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত হওয়ায় এলাকার বাগানে উৎপাদিত আমের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। অনাবাদি জমি, উচুঁ ও পাহাড়ের ঢালুতে আমের বাগান করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভায় ছোট বড় প্রায় ৮০টি বাগান রয়েছে। তার মধ্যে ৩০-৩৫টি বাণিজ্যিক বাগান রয়েছে। এসব বাগান থেকে বিগত কয়েক বছর যাবৎ আম বিক্রি করছেন বাগান মালিকরা।
উপজেলার সাহেরখালীতে নিজেদের পারিবারিক দেড় বিঘা জমিতে সমন্বিত খামার শুরু করেছেন স্নাতক পাশ করা আবদুল মান্নান। অন্যের অধিনে চাকুরি না করে নিজের ভাগ্য নিজেই পরিবর্তনের শপথ নিয়ে ২০১৬ সালে যুব উন্নয়ন অধিদফতর চট্টগ্রাম থেকে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর অধিদফতর থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা ও বন্ধু-বান্ধব থেকে ধার নিয়ে বাগান শুরু করেন। হিমসাগর, ল্যাংড়া, হাড়ি ভাঙ্গা, ফজলী, আম্রপালিসহ ১৫ জাতের আমের চারা রোপন করেন। আমের পাশাপাশি বাগানে অন্যান্য ফল ও সবজি চাষ করে আয় করছেন তিনি। এ বছর তার বাগান থেকে দুই লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
দেশী-বিদেশী আমের সমাহার রয়েছে মিরসরাই নার্সারীর স্বত্বাধিকারী মোঃ ওমর শরীফের বাগানে। বারি-১১, কাটিমন, চিয়াংমাই, সূর্য ডিম, আলপানচু, কিং আপ চাকাপাত, মরিয়ম, ফজলি, আসিনা, গৌড়মতি, আম্রপালি, বারি-৪ রামগই, হাড়িভাঙ্গা, কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো ও বারো মাসি। আম ছাড়াও তার বাগানে রয়েছে পেয়ারা, মাল্টা, লিচু, থাই জাম্বুরা, চপদা, শরিফা, লটকন, বেল ও আমলকি। পাহাড়ে অবস্থিত এই বাগানে কেউ একবার গেলে বার বার যেতে মন চাইবে।
বাগান মালিক মোঃ ওমর শরীফ বলেন, বিগত তিন বছর ধরে আমার বাগানে আমের ফলন আসছে। এখনো বাগানে মাত্র ৩০ ভাগ গাছে ফলন হচ্ছে। গত বছর দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকার বিক্রি করেছি। এ বছর তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রি করতে পারবো বলে আমি আশাবাদী। আমার বাগানের আম বাজারে নেয়ার প্রয়োজন হয় না। গাছে থাকতে ভোক্তারা আগে বুকিং দিয়ে রাখে। বাগানের গুরুত্বপূর্ণ জাতগুলো হলো ব্যানানা ম্যাংগো। দেখতে লম্বাটে, কোনো কোনো আমে বোটার পাশে খয়েরি আভা দেখা যায়। পাকলে সম্পূর্ণ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। সুমিষ্টি স্বাদযুক্ত, বড় আকারের, প্রতিটি ফলের ওজন ৪৫০-৫০০ গ্রাম। এই জাতের আম এই অঞ্চলে আর কোথাও নেই।
তিনি আরো বলেন, আমার বাগানের গাছগুলোতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করি না।
উপজেলার অন্যতম আম বাগান করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগরে। অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী মঈন উদ্দিনের গড়ে তোলা হিলস ডেল মাল্টি ফার্মের এই বাগান থেকে বিগত কয়েক বছর ধরে আম বিক্রি করে আসছেন।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রিয়াদ মাহমুদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে গত বছরের তুলনায় ফলন একেবারে কম। আমরা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়েছি। হিম সাগর, ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি আম রয়েছে আমাদের বাগানে। এ বছর এক লাখ ২০ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছি।
ওয়াহেদপুরের আজিজ উদ্দিন খানসাব কয়েক বছর ধরে বাগানের আম বিক্রি করছেন। বাড়ির পূর্বপাশে পাহাড়ে অবস্থিত এই বাগানে বেশির ভাগ আম্রপালি রোপন করা হয়েছে। এ বছর উপজেলার নিজামপুর বাজারে এনে আমগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে মিরসরাই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, মিরসরাইয়ে আমের বাগান বাড়ছে। উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ৮০টি আম বাগান রয়েছে। তার মধ্যে ৩০-৩৫টি বাগানে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ করা হয়। আমাদের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের নিয়মিত সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা