করোনার কারণে মিরসরাইয়ে ক্ষতির মুখে ২ হাজার মৎস্য খামারী
- এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
- ১১ মে ২০২০, ১৩:০৩
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের মৎস্য জোন হিসেবে খ্যাত মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রকল্পে। মাছের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, খাদ্য, পরিবহন ও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ সরবরাহ করতে না পেরে ক্ষতি সম্মুক্ষিণ হচ্ছেন এখনকার ছোট বড় প্রায় সাত শতাধিক মৎস্য উৎপাদনকারী। এছাড়া উপজেলা জুড়ে আরো প্রায় ১৩ শ’ মৎস্য উৎপাদনকারী রয়েছে। কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তাদের। তবে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য উৎপাদনকারীদের সরকারের পক্ষ থেকে ৫% সুদে লোন সুবিধা দেবে বলে জানান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার ৭৫ ভাগ মৎস্য চাহিদা পূরণ করা হয় মুহুরী চরের কয়েক হাজার মৎস্য প্রকল্প থেকে। এক সময় যেসব যুবকরা বেকারত্বের অভিশাপে অভিশপ্ত ছিল আজ তারা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং কোটিপতি। এভাবে মৎস্য চাষের মাধ্যমে বদলে গেছে কয়েক শ’ বেকার যুবকের ভাগ্যের চাকা। মুখে হাসি ফুটেছে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের। সোনালী মাছে ভরে উঠছে এক একটি মৎস্য প্রকল্প। উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে মুহুরী প্রজেক্ট সেচ প্রকল্প। ১৯৮৪ সালে সরকার ফেনী নদীর মিরসরাই অংশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধ নির্মাণের পর প্রায় ৫০ হাজার একরেরও অধিক জমি জেগে উঠেছে উপকূলীয় বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। এই বাঁধ দিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে বাঁধের দক্ষিন পার্শ্বে যতদূর চোখ যাবে ততদূর পর্যন্ত হাজার হাজার একর চরের জমিতে দেখা যাবে মৎস্য প্রকল্প। উপজেলার ধুম, ওসমানপুর, ইছাখালী, মঘাদিয়া ও সাহেরখালী ইউনিয়নে এসব মৎস্য প্রকল্প অবস্থিত। এছাড়া উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রকল্প ও পুকুরে মাছ চাষ করা হয়।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম জেলার পুরস্কার প্রাপ্ত সেরা মৎস্য উৎপাদনকারী আনোয়ার এগ্রো কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে লকডাউনের কারণে মাছের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রিও আগের থেকে কমে গেছে। যা বিক্রি করছি ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। আগে এক মণ পাবদা মাছ ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ১১/১২ হাজার টাকায়। প্রতিমন মাছে ৫/৬ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমি প্রায় দেড় শ’ একর প্রকল্পে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। তার মধ্যে কিছু সমন্বিত প্রকল্প রয়েছে। যথা সময়ে মাছ বিক্রি করতে না পারায় বড় ধরনের লোকসান হবে আমার। সরকার মৎস্য উৎপাদনকারীদের প্রনোদনা না দিলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বো আমরা।
মুহুরী প্রকল্পে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জনক হিসেবে পরিচিত মোঃ কামরুল হোসেন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর মাছের ফিড ও মেডিসিনের মূল্য বৃদ্ধি তার উপর গত দুই মাস ধরে করোনার কারণে মাছ বিক্রি কমে যাওয়ায় ক্ষতির আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছি আমরা। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমাদের কষ্ট হবে। এছাড়া মাঝে মাঝে মাছের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পথে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়।
আরেক মৎস্য উৎপাদনকারী হাজ্বী শাহ আলম জানান, গত দুই মাস আড়তগুলোতে মাছের চাহিদা কমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত মাছ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। আমরা শেষ হয়ে গেছি।
শুধু আনোয়ার, কামরুল ও শাহ আলম নয়, তাদের মত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন আরো প্রায় দুই হাজার মৎস্য উৎপাদনকারী। এভাবে চলতে থাকলে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে তাদের।
এসব প্রকল্পে রুই, কাতলা, মৃগেল, মনোসেক্স তেলাপিয়া, পাংগার, সিং, মাগুর, পাবদা সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়।
তবে বাজার থেকে আগের তুলনায় কম দামে মাছ কিনতে পারছে না সাধারণ ক্রেতা। একাধিক ক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, লকডাউনের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। মৎস্য উৎপাদনকারীরা কম দাম পাচ্ছে, খুচরা সাধারণ ক্রেতারা বেশি দামে মাছ ক্রয় করছে। মাঝে লাভবান আড়তদার ও মধ্য স্বত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, করোনার প্রভাবে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। মানুষও আগের মত ঘর থেকে বের হয় না। বাজারে সাধারণ ক্রেতা সমাগম না থাকায় এর প্রভাব খুচরা বাজার থেকে আড়ৎ এবং মৎস্য প্রকল্পগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে উপজেলাব্যাপী ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য উৎপাদনকারীদের তালিকা করছি। প্রায় ৪৫০ জনের নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উপজেলায় দুই হাজারেরও বেশি মৎস্য উৎপাদনকারী রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে অন্যদের তালিকাভুক্ত করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা