পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
- এইচ এম হুমায়ুন কবির কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
- ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৩৬
অগণিত দেশী-বিদেশী পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। পৌষের শুরুতে শীত যেমন জেঁকে বসতে শুরু করেছে, তেমনি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠতে শুরু করছে কুয়াকাটা পর্যটন সৈকতের সব স্পট। পর্যটন স্পটগুলোতে গমন উপযোগী যানবাহন এবং রাস্তাঘাটেও লেগেছে রঙের ছোঁয়া। সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে দুই কিলোমিটার জুড়ে পর্যটকে ঠাসা রয়েছে। কেউ গোসল করছেন কনকনে শীত উপেক্ষা করে। কেউ বা ঘুরে দেখছেন নৈসর্গিক দৃশ্য। কুয়াকাটার আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের দৃশ্য, কুয়াকাটা ইকোপার্ক, রাখাইন মার্কেট, ছায়াঘেরা নারিকেল কুঞ্জ, লেম্বুর চরের শুঁটকি পল্লী, কুয়াকাটা সংলগ্ন মিশ্রীপাড়ায় অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধমূর্তি, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার সবুজ বন, মম্বীপাড়ার সৎসঙ্গের মন্দির, ঝাউবাগান, লেম্ফুর চর বনাঞ্চল, গঙ্গামতির লেকপাড়Ñ সর্বত্র পর্যটকের ভিড় রয়েছে। শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, সীমা বৌদ্ধবিহারসহ দর্শনীয় স্পটগুলো ঘুরে দেখছেন আগতরা। কুয়াকাটার সব আবাসিক হোটেলে পর্যটকে রয়েছে পরিপূর্ণ। কোথাও কোনো সিট খালি নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিসেম্বর মাসের ছুটিতে সপরিবারে আসা পর্যটকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। হোটেল-মোটেল মালিকরাও চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। বিকেলের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলতেই পর্যটকরা ভিড় করছেন সৈকতের বেলাভূমে।
সূর্যাস্তের বিরল দৃশ্য অবলোকনের জন্য ভিড় করছেন আগত পর্যটক-দর্শনার্থী। পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে শীতের শুরুতেই পর্যটকদের আগমন শুরু হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেই চলছে পর্যটকদের বিনোদন। মূল সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও সৈকত ঘিরে নেয়া হচ্ছে না কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। পর্যটকদের বিশ্রাম কিংবা বসে সময় কাটানোরও নেই কোনো ব্যবস্থা। কুয়াকাটা পৌরসভা ও পর্যটন কর্তৃপক্ষ পর্যটনের উন্নয়নে নিচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ। কুয়াকাটায় পর্যটকদের আগমন শুরু হলেও মূল সৈকতে এসেই থেমে যাচ্ছে পর্যটকদের সব উচ্ছ্বাস। মেঘ, রৌদ্রময় বিস্তীর্ণ সৈকত ও সমুদ্রের মৃদু ঢেউয়ের পরশ তাদের ক্লান্তময় ভ্রমণের কিছুটা শান্তির পরশ বুলালেও বেশির ভাগ সময় তাদের হোটেলবন্দী থাকতে হচ্ছে। রাতের কুয়াকাটা এখনো অন্ধকারই থেকে গেল পর্যটকদের কাছে। বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি দোলনার মতো যখন দুলে দুলে তীরে আসতে থাকে তখন পুব আকাশে সূর্যের হালকা রক্তিম বৃত্তটি ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে। তখন প্রথম সূর্যোদয়ের আলোতে আলোকিত হয়ে পাল্টে যায় কুয়াকাটার সমুদ্রের নীলাভ জল বর্ণ। লাল বর্ণ সূর্যটা অল্পক্ষণের মধ্যেই পূর্ণ বৃত্তে রূপ নেয়। এই নতুন সূর্য পুব আকাশে নিয়ে আসে এক অপরূপ শোভা। আকাশে সদ্য ওঠা সূর্য, নিচে সমুদ্রের নীল জলরাশি, বেলাভূমি আর ঘন সবুজ ঝাউবনের সমন্বয়ে কুয়াকাটা সৈকত ফিরে পায় অপরূপ সৌন্দর্য। যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় সূর্যাস্তের অপরূপ ও নয়নাভিরাম এবং মন ভোলানো দৃশ্য।
কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটক উম্মে কবির হাবিবা জানান, কুয়াকাটা সত্যিই অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা। যেন সবকিছুই ছবির মতো সাজানো গোছানো। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়নে এই সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে গেছে। তিনি বলেন, কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া ইকোপার্ক এলাকায় পরিবার নিয়ে প্রবেশ করা সত্যিই বিপজ্জনক। ভাঙা ও এবড়ো খেবড়ো রাস্তা। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছগুলো পরিচর্যার অভাবে যেন মাটির সাথে মিশে তাদের ক্লান্তি জানান দিচ্ছে পর্যটকদের কাছে। একইভাবে মূল সৈকত এখনো অপরিষ্কার। সৈকতের জিরো পয়েন্ট ও পর্যটনস্পটগুলো যেন পর্যটকদের কাছে আরেক দুর্ভোগ। এ ছাড়া ও কুয়াকাটার সৌন্দর্যই কুয়াকাটা ভ্রমণের স্মৃতিকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবে মননে এবং তা একসময় নিজের অজান্তেই নিজেকে প্রকৃতির কাছে টেনে আনবে।
রাজশাহী থেকে কুয়াকাটা ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী তোফায়েল জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় কুয়াকাটায় সারা দেশের পর্যটকদের সব সময় ভিড় বাড়ছে। তা ছাড়া এখানে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। তাই এখনই সময় কুয়াকাটাকে ঢেলে সাজানোর। এই শীত মৌসুমেই কুয়াকাটা ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া উচিত। তা ছাড়া মূল সৈকত প্রটেকশন করার জন্য সিসি ব্লক ফেলে নারিকেল বাগান ও ঝাউ বাগান এলাকা রক্ষারও এখনই সময়। কেননা বর্ষা হলেই তো ভাঙন শুরু হয়।
কুয়াকাটার স্থায়ী বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া জানান, কুয়াকাটা ভ্রমণে এসে পর্যটকরা ঝিনুক-শামুক রাখাইনদের তৈরি রকমারি প্রসাধনী কিনতে পারতেন সৈকত লাগোয়া দোকানগুলো থেকে। কিন্তু সেই দোকানগুলো উচ্ছেদ করায় পর্যটকরা এসব প্রসাধনী ক্রয় করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কুয়াকাটার একাধিক মোটেল ও হোটেলের ম্যানেজার জানান, কুয়াকাটাকে ঘিরে সরকারের মাস্টারপ্লান রয়েছে। কিন্তু এ মাস্টারপ্লানে কী কী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড রয়েছে তা এখনো জানতে পারছে না কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। সরকার শত শত ব্যবসায়ীকে সৈকত এলাকা থেকে উচ্ছেদ করলেও মূল সৈকতে এখনো কোনো পরিকল্পনা লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমনকি পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্তরাও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। বর্ষায় মূল সৈকত সাগরের ভাঙনে ক্রমেই ছোট হচ্ছে। কিন্তু সৈকত রক্ষায় কিছু বালুভর্তি ব্যাগ ফেলা হলেও উন্নয়ন বলতে ওই পর্যন্তই।
কুয়াকাটা পৌরমেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, কুয়াকাটা পৌরসভার পক্ষ থেকে কুয়াকাটা সৈকত পরিষ্কার রাখার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে কুয়াকাটাকে ঘিরে সরকারের মাস্টারপ্লান থাকলেও পৌরসভার পক্ষ থেকে রাস্তাঘাট পরিষ্কার ও পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে বিচকে আরো আলোকিত করার জন্য লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মুনিবুর রহমান জানান, কুয়াকাটার নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকনে পর্যটক-দর্শনার্থীরা কোনো ধরনের বিপত্তি ঘটালে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি স্থানীয় মানুষসহ সব ব্যবসায়ীকে পর্যটকবান্ধব হওয়ার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা