২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

৪০ বছর ধরে অন্যের কবর খুঁড়ছেন মিরসরাইয়ের মোহাম্মদ আলী

৪০ বছর ধরে অন্যের কবর খুঁড়ছেন মিরসরাইয়ের মোহাম্মদ আলী - ছবি : সংগৃহীত

এক বছর বা দুই বছর নয়; দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরেই মৃত মানুষের জন্য তাদের শেষ ঠিকানা কবর খুঁড়ে চলছেন মোহাম্মদ আলী। প্রায় পাঁচ শতাধিক কবর খুঁড়েছেন এবং সেগুলোতে শুয়েছেনও। বয়স তার ৭০ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু তার মনোবল ও পরিশ্রম দেখে মনে হয় এখনো ২৫ বছরের টগবগে যুবক। পেশায় কৃষক। কৃষি কাজের পাশাপাশি এই মহৎ কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কোথাও মানুষ মারা যাওয়ার খবর তার কানে এলে শত ব্যস্ততা রেখে ছুটে যান কবর খুঁড়তে। এভাবে ৪০ বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে কবর খুঁড়ে চলছেন তিনি। মোহাম্মদ আলীর বাড়ি মিরসরাই উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা জিলতলী এলাকায়। তার বাবার নাম আবদুল গনি। কুমিল্লা থেকে ৫০ বছর আগে কয়লাতে এসে বাড়ি করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ আলী জানান, ৩০ বছর বয়স থেকে তিনি কবর খুঁড়েন। মানুষ মারা গেলে কবর খুঁড়ার ডাক পড়ে তার। সরঞ্জাম নিয়ে চলে যান কবর খুঁড়তে। মানুষ মারা যাওয়ার খবর তার কানে এলে শত কাজ রেখে ছুটে যান তিনি। তার এলাকা ও আশপাশের প্রায় ১৬টি কবরস্থানে ৪০ বছর ধরে প্রায় ৫ শতাধিক কবর খুঁড়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রথমে লাশ দেখে কবরের পরিমাপ করি। তারপর কবর তৈরির কাজ শুরু করি। পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হওয়ার পর শুয়ে দেখি ঠিক হয়েছে কি না। কবর খুঁড়ার জন্য নিজের টাকায় দু’টি খন্তা, দু’টি কোদাল, দু’টি তেরপাল, বালতি, বেলচা, দা, করাত কিনেছেন মো: আলী। তিনি সৈয়দপুর, ঝিলতলী, মরা কয়লা, শুভলছড়ি, গুজা ও পাশ্ববর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কবর খুঁড়ে থাকেন। এ জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না তিনি। অন্যের জমি বন্ধক রেখে চাষাবাদ করে চলে যাচ্ছে মো: আলীর সংসার। তিনি বলেন, আমি কঠোর পরিশ্রম করতে পারি। হয়তো এই কাজ করার কারণে আল্লাহর রহমতে শরীরে আমার কোনো রোগ-বালাই নেই। যতদিন বেঁচে থাকব এই কাজ করে যাবো ইনশা আল্লাহ।

এই বিষয়ে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, কবর খুঁড়া একটি মহৎ কাজ। এই কাজ সবাই করতে পারে না। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো এই কাজ করে থাকেন। মানুষ মারা গেলে নিজের শত কাজ রেখে ছুটে যান কবর খুঁড়তে। তাদের মধ্যে অন্যতম মো: আলী। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। গত বছর আমার ইউনিয়নে কবর খুঁড়ার কাজ করা প্রায় ১০ জনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেছি এবং ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রতিটি মসজিদে কবর খুঁড়ার সরঞ্জাম দিয়েছি। আমি মনে করি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অনেককে সম্মানিত করা হয়। কিন্তু মানুষ মারা গেলে যারা ছুটে যান তাদের কেউ খবর রাখে না। সকলের উচিত মো: আলীর মতো মানুষদের সম্মান করা।


আরো সংবাদ



premium cement