২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ শাবান ১৪৪৬
`

কক্সবাজার বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষ : যুবক নিহত, আহত ১৫

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বিমান বাহিনীর সদস্যরা। - ছবি : নয়া দিগন্ত।

কক্সবাজার শহরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য স্থানীয়দের উচ্ছেদ চেষ্টাকে কেন্দ্র করে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় এক যুবক নিহত ও ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টার দিকে বিমানবন্দর সংলগ্ন কক্সবাজার পৌরসভার সমিতি পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শিহাব কবির নাহিদ (৩০) একই এলাকার নাছির উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তবে আহতদের নাম ও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ নিয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে না পারলেও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনায় একজন নিহত এবং পাঁচজন চিকিৎসাধীন থাকার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের পুলিশ বক্সের কর্তব্যরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।

ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। উভয়পক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কক্সবাজারে বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের হামলার কথা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। দুপুরে আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিমান ঘাঁটির পাশের সমিতি পাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে আইএসপিআর জানায়, বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট হতে একজন স্থানীয় লোকের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতি পাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারী লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের উপর ইট পাটকেল ছুড়ে। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন যার মধ্যে বিমান বাহিনীর চারজন সদস্য (একজন অফিসার ও তিনজন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যগণ কর্তৃক বিমান বাহিনীর Rules of Engagement অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়, তবে স্থানীয় জনসাধারণের উপর কোনো প্রকার তাজা গুলি ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছিল যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি। এমতাবস্থায়, একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলির খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, ওই খোসাটি ফাঁকা গুলির (Blank Cartridge) যা প্রাণঘাতি নয় এবং শুধুমাত্র শব্দ তৈরি করে। যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।

এছাড়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ওই ঘটনা প্রকাশে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারের নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে- যা সত্য নয়। ওই ঘাঁটির নাম ০২ ডিসেম্বর ২০২১ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনে পরিবর্তন করে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয় যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement