২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

জনদুর্ভোগ কমাতে আগে স্থানীয় নির্বাচন চাইলেন জামায়াত আমির

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অভিভাবকশূন্য উল্লেখ করে জনদুর্ভোগ কমাতে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি জুলুম-চাঁদাবাজি বন্ধেরও আহ্বান জানান।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিশাল পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আপনি যখন একটি পণ্যবাহী গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করেন তখন এর বোঝা গিয়ে পড়ে ১৮ কোটি মানুষের ঘাড়ে। একজন ভিক্ষা করা মানুষ, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ওপরও পড়ে। জুলুম, চাঁদাবাজি বন্ধ করেন। সাড়ে ১৫ বছর ঘরে বন্দী ছিলেন ঘর থেকে বের হতে পারেন নাই। বর্তমান পরিস্থিতিকে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত হিসেবে মনে করুন। আল্লাহ তাহলে আপনাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে দেবে, দেশবাসীও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো পৌরসভা ওয়ার্ডে মেয়র কাউন্সিলর নেই, একজন প্রশাসক দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা নির্বাচিত নন তাই জনগণের কোনো দায় তাদের ওপর নেই। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলো এখন অভিভাবকশূন্য, জনদুর্ভোগ নির্মূলের জন্য আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন হলেই জনগণের এই দুর্ভোগ কাটবে।’

‘তারপর অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনও দিতে হবে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগে জনগণ চায় মৌলিক কিছু সংস্কার।’

জামায়াত আমির বলেন, ‘কোনো কোনো দলের নেতারা বলেন সংস্কার বড় কথা নয়, মানুষ কিভাবে খেয়ে-পড়ে বাঁচবে সেটাই বড় কথা। আমি বলছি, মানুষের খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার জন্য সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশীশক্তি প্রদর্শন বন্ধের জন্যই সংস্কার প্রয়োজন, ১৮ বছরের ওপরে প্রত্যেকে যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারে তার জন্য সংস্কার প্রয়োজন, প্রবাসীরা যারা জুলাই বিপ্লবের অন্যতম কারিগর তাদের ভোটের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্যই সংস্কার প্রয়োজন।’

‘এই সংস্কারগুলো করার জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকু সময়ের পরেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। গড়িমসি করে সময় নষ্ট করাও কাম্য নয়। আমরা জানি এক মাসের মধ্যে সংস্কার সম্ভব নয়, তাই আমরা বলেছি যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে,’ বলেন তিনি।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘পেশীশক্তির প্রদর্শন বন্ধের জন্য আরেকটা মৌলিক দাবি আমরা প্রকাশ করেছি, সেটি হচ্ছে ভোটের আনুপাতিক হারে নির্বাচন। যেই দল যত পারসেন্ট ভোট পাবে সেই দল সংসদে ততটা আসন পাবে। এতে করে প্রত্যেক দলের মেধাবী নেতাদের আসন নিশ্চিত হবে।’

‘অনেক ছোট দল আছে যাদের মধ্যে অনেক মেধাবী ও দেশপ্রেমিক নেতা আছেন, এতে করে তারাও সংসদে যেতে পারবে। কেউ ৪২ পার্সেন্ট ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন আর কেউ ৪১ পার্সেন্ট ভোট পেয়ে হেরে যাবেন, ওই হেরে যাওয়া লোকের ভোটাররা বলতে পারবে না যে আমার ভোট নষ্ট হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই নির্বাচন চালু হলে কোনো গডফাদাররা নির্বাচনে আসবে না। কারণ সে জানে না সে কত নম্বরে আছে। আপনারা বলবেন, তাহলে এলাকার উন্নয়ন কে দেখবে? এলাকার উন্নয়ন দেখবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এটা তাদের কাজ। এটা এমপিদের কাজ না। এমপিদের কাজ আইন প্রণয়ন করা। দুনিয়ার সকল দেশে উন্নয়নের কাজ করে স্থানীয় সরকার। আর আমাদের দেশে তাদেরকে বঞ্চিত করে এটা নিয়ে নেয় এমপি ও মন্ত্রীরা। এটা অন্যায়, এটা সংবিধানবিরোধী।’

অনুষ্ঠানে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট মো: মাসুদুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার পরিচালনায় পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এ টি এম মাসুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল উদ্দিন, সাবেক চাঁদপুর জেলা আমির মাওলানা আবদুর রহিম পাটওয়ারী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মুহাদ্দিস আবু নসর আশরাফী, শহর আমির অ্যাডভোকেট মো: শাহজাহান খান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন, ফরিদগঞ্জ আমির ইউনুস হেলাল, শাহরাস্তি আমির মোস্তাফা কামাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা কলিম উল্লাহ, কচুয়া উপজেলা আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহের মিসবাহ, পৌরসভা আমির আবুল হাসানাত, ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি মোহররম আলী, জেলা সভাপতি ইব্রাহীম খলিল।

পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন সদর উপজেলা আমির মাওলানা আফসার উদ্দিন মিয়াজীসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

হাজীগঞ্জে জনতার ঢল
দুপুর থেকেই বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে প্রবেশ করে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। হাজীগঞ্জ শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সমাবেশের আমেজ।


আরো সংবাদ



premium cement