২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২০ শাবান ১৪৪৬
`

উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রশাসন থেকে হাসিনার দোসরদের বাদ দিন : সালাউদ্দিন আহমেদ

ফেনী শহরের মিজান ময়দানে বিএনপির জনসভায় প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘সরকারের যেসব উপদেষ্টারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর তাদের বাদ দিতে হবে’ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমলাতন্ত্রসহ প্রশাসনের সব স্তরে দোসররা বসে আছে। তাদের দ্রুত বাদ দেন।’

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফেনী শহরের মিজান ময়দানে বিএনপির জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিচার এবং দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সভার আয়োজন করে ফেনী জেলা বিএনপি।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রে যেভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে তার বিরুদ্ধে দ্রুত রুখে দাঁড়াতে হবে। বিএনপি সারাদেশে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উদাসীন হলে চলবে না। যেভাবে পারেন দ্রব্যমূল্যের সরবরাহ বাড়ান। রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে হবে। বেশি সংস্কার সংস্কার করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি উঠাবেন। মানুষ সংস্কারের চেয়ে সংসার বেশি বোঝে। মানুষকে স্বস্তি দিন।’

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস পালানোর ইতিহাস। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে শেখ মুজিব পালিয়ে গেছে। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা বিমানে করে পালিয়েছে। হাজার মাইল দূর থেকে শেখ হাসিনা ও তার দোসররা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির আওয়াজ করছে। ষড়যন্ত্র করছে। মনে রাখতে হবে, দিল্লি অনেক দূর। এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে বসবাস করছে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস অনেক। গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্রের কবর রচনা করে শেখ মুজিব বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে একদলীয় শাসন কায়েম করেন। তিনি চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা স্থায়ী হয়নি। তার মেয়েও আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন। বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে খুন, গুম, গ্রেফতার, অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। আমরা জানতাম শেখ হাসিনার পতন হবে, কবে-কীভাবে কত রক্তপাতের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার উৎখাত হবে সেটি জানতাম না। হাজার হাজার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট পালাতে বাধ্য হলো। নতুন বাংলাদেশে যে আকাঙ্খা নিয়ে আমাদের সন্তানরা শহীদ হয়েছে সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বাগ্রে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাসিনা এখন জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত বিশ্ব খুনি। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ঘৃনিত ফ্যাসিস্ট শাসক। হাসিনাকে দেশের মানুষ আর সনদ দিতে হবে না। বিশ্ব তাকে সেই সনদ দিয়েছে। এখন দরকার আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আদালতে হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত করা। বিএনপি ও গুম-খুনের শিকার হওয়া মানুষ বিচার চেয়ে মামলা দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, তার শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গণহত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ এ দায় এড়াতে পারে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন সেটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ। অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন।’

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সালাউদ্দিন আরো বলেন, ‘নির্বাচনমুখী সংস্কার করুন। এটি করতে মে-জুন মাসের বেশি সময় লাগে না। কোনো বাহানায় নির্বাচন বিলম্বিত করবেন না। যারা অনুপাতভিত্তিক নির্বাচন চায় তাদের অনুপাত জ্ঞান নাই। কোন কোন দল স্থানীয় নির্বাচনের দাবি করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এসব নির্বাচন শেষ করতে এক বছর সময় লাগবে। এক বছর বেশি সময় নিয়ে বিলম্বিত করার মতলবটা কী জনগণ জানতে চায়।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সহ-গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, সদস্য আবদুল লতিফ জনি, অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জালাল উদ্দিন মজুমদার, শাহানা আক্তার শানু, আবু তালেব ও মশিউর রহমান বিপ্লব।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, যুগ্ম-আহ্বায়ক এয়াকুব নবী ও আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারির যৌথ পরিচালনায় আরো বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক এম এ খালেক ও গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক, পৌর আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বাবুল, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঞা, সদর উপজেলা আহ্বায়ক ফজলুর রহমান বকুল, সদস্য সচিব আমান উদ্দিন কায়সার সাব্বির, ছাগলনাইয়া উপজেলা আহ্বায়ক নুর আহম্মদ মজুমদার, পরশুরাম উপজেলা আহ্বায়ক আবদুল হালিম, ফুলগাজী উপজেলা সদস্য সচিব আবুল হোসেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন খন্দকার ও সদস্য সচিব নঈম উল্যাহ চৌধুরী বরাত, ছাত্রদল সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন, মহিলা দল সভাপতি জুলেখা আক্তার ডেইজি প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement