৭ দিনেও উদ্ধার হয়নি আরাকান আর্মির হাতে আটক ১০ জেলে
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৬
টেকনাফে আরাকান আর্মির হাতে আটক ১০ জেলে সাত দিনেও উদ্ধার না হওয়ায় উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে দিন পার করছেন জেলে পরিবারের স্বজনরা। এখনো তাদের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় চিন্তিত তারা।
এদিকে দফায় দফায় এমন আটক ও অপহরণের ঘটনায় ভয় বাড়ছে জেলেদের মনে। মাছ ধরা এখন রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের নৌকার মাঝি জেলে মোহাম্মদ হাসানের স্ত্রী নুর নাহার বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীসহ শাহপরীর দ্বীপের চার জেলে কয়েক দিন আগে আরাকান আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছে। আটকের একদিন পর ফোন করে বলেছে, আমরা ভালো আছি। আরাকান আর্মি আমাদের রান্না করে খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তারা কয়েক দিনের মধ্যে ছেড়ে দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনেছেন, সেজন্য ছেড়ে দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) বিষয়টি জানানোর জন্য বলেছেন।
নুর নাহার আরো বলেন, ‘বিজিবিকে জানানো হয়েছে। এখন আর কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছি না। আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকা অবস্থায় যে নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল, সেই নম্বরে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। দিন যতই বাড়ছে আমাদের চিন্তার মাত্রা ততই বাড়ছে।’
টেকনাফের ২৬ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি বদরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকের-৬ রোহিঙ্গা জেলে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নাফনদীর শাহপরীরদ্বীপের মোহনায় মাছ ধরতে যায়। এ সময় তারা ভুলে মিয়ানমার সীমান্তে মাছ ধরছিল। তখন আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের আটক করে নিয়ে যান। প্রায় সাত দিন পার হলেও আটক জেলেদের এখনো ছেড়ে দেয়নি।’
টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের দক্ষিণ নৌ-ঘাটের সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, ‘সাত দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত জেলেদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের আরাকান আর্মি। এ নিয়ে জেলে পরিবারগুলো খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এখন নাফ নদীতে মাছ শিকারে যেতে ভয় পাচ্ছেন জেলেরা। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবহিত করেছি।’
স্থানীয় জেলেরা জানায়, ‘কয়েক দিন পর পর এভাবে অস্ত্রের মুখে জেলেদেরকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা মাছ শিকার করে পরিবার চালাই। এখন ভয়ে নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। পরিস্থিতি এমন হলে বউ বাচ্চাদেরকে কীভাবে খাওয়াবো। একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরাকান আর্মির হাতে আটক জেলেদের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছেন। আশা করছি, আটক জেলেরা বাড়ি ফেরত আসতে পারবেন। গত শনিবার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নাফনদীর শাহপরীর দ্বীপের মোহনায় মাছ ধরতে যায় ১০ জেলে। যেখানে চার জেলে এবং ছয়জন রোহিঙ্গা ছিল। মাছ ধরার একপর্যায়ে তারা ভুল করে মিয়ানমার সীমান্তে ঢুকে পড়ে। তারপর তাদের আটক করে আরাকান আর্মি।’
আটকদের মধ্যে স্থানীয় জেলেরা হলেন টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা নৌকার মাঝি মোহাম্মদ হাসান (৩০), আব্দুর রকিব (২০), মোহাম্মদ হহাসান (১৬)। এছাড়া রোহিঙ্গা জেলেরা হলেন টেকনাফ হ্নীলা ২৬ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন (২৭), কবির আহাম্মদ (৩৬), আমান উল্লাহ (৫৪), মোহাম্মদ হোসাইন (২৫), হামিদ হোসাইন ও নুর হোসেন (৩৯)।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ অক্টোবর শাহপরীরদ্বীপ জেটিঘাট থেকে ছয়টি ট্রলার নিয়ে ৫৮ জন জেলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। ৯ অক্টোবর তাদের অপহরণ করে মিয়ানমার নৌবাহিনী।
এ সময় তারা একটি ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালালে তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হন। যার মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে জেলেদের দেশে ফেরত আনা হয়। এছাড়া গত বছরের ১৫ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইনে অনুপ্রবেশ করা আরাকান আর্মির হাতে আটক বাংলাদেশী ১৬ জেলেকে বিজিবির মাধ্যমে ফেরত আনা হয়েছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা