০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১, ৩ শাবান ১৪৪৬
`

দেশের মাটিতে প্রতিটি গণহত্যার বিচার করা হবে : জামায়াত আমির

ফেনীতে মতবিনিময় সভায় জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান - ছবি : নয়া দিগন্ত

দেশের মাটিতে প্রতিটি গণহত্যার বিচার করা হবে মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দুনিয়ায়ও বিচার হতে হবে। প্রত্যেকটি গণহত্যার বিচার বাংলার মাটিতে চাই। প্রত্যেকটি শহীদের হত্যাকারীর বিচার চাই। সে যত বড় ব্যক্তি হোক তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে। নিরপরাধ মানুষকে যারা হত্যা করেছে, বিচারের নামে তামাশা করেছে, দুনিয়ায় তাদের সেই বিচারের অপেক্ষায় আছি।’

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

এ সময় শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান। জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীমের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি আবু তাহের মোহাম্মদ মাছুম, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি আবু হানিফ হেলাল, শহীদ বোরহান উদ্দিন মাসুমের ছোট ভাই মনজুর হাসান।

সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি কারাবন্দি এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করে জামায়াত আমির বলেন, ‘আগ্রাসন-আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, ন্যায় ও আল্লাহর দ্বীনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন আজহারুল ইসলাম। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ শেখ হাসিনা মনের মতো করে জারি করেছেন। যাদের ফাঁসি দিয়েছেন, ইনশাআল্লাহ হাসরের দিন তারা হাসবেন। সে দিন আপনি (শেখ হাসিনা) এবং আপনার খুনিচক্রের বিচার আল্লাহর হাতে তুলে দেব। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে দিন। গড়িমসি করবেন না। যেই জাতি রক্ত দিয়ে জাতিকে মুক্তি দিয়েছে, সেই জাতি প্রয়োজনে আবারো রক্ত দিবে। তবুও ফ্যাসিবাদকে বরদাশত করবে না।’

এছাড়া সভায় কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য দ্বীন মোহাম্মদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা: ফখরুদ্দীন মানিক, সাবেক জেলা আমির এ কে এম সামছুদ্দীন, নায়েবে আমির আবু ইউসুফ ও মাওলানা মাহমুদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দল মজলুম দল। ফেনীতেও চোখের সামনে শুধু জামায়াতে ইসলামী করার অপরাধে দোকানপাট লুটপাট করার পর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর অফিসে আগুন দেয়া হয়েছে। ঘরে বসবাস করতে দেয়া হয়নি। মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে। অসংখ্য মামলা দিয়ে হাজার হাজার ভাই-বোনকে দফায় দফায় জেলে পাঠানো হয়েছে। অফিসগুলো তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দলের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। সরকার পতনের মুহূর্তে দিশেহারা হয়ে দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। একে একে ১১ জন শীর্ষ নেতাসহ অসংখ্য সহকর্মীকে হত্যা করেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উপরও একই কাজ করা হয়েছে।’

চাঁদাবাজি-দখলবাজি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসলে অপকর্ম ছেড়ে দিন। অপকর্ম অব্যাহত রাখলে শহীদদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আহতদের প্রতি বিদ্রুপ হবে। একজনের চাঁদা ও দখলবানিজ্য থেকে মুক্তি হয়ে আরেকজনের হাতে তুলে দিবে এজন্য শহীদরা রক্ত দেয়নি। সবক্ষেত্রে ন্যায়বিচার চাই। কোনো বৈষম্য ও দুর্নীতি চাই না, আমরা সাম্যের বাংলাদেশ চাই, মানবিক বাংলাদেশ চাই। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ একমাত্র আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব।’

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের যথাযথ মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘শহীদ-আহতদের প্রতি সম্মান দেখানো সবার দায়িত্ব। এখন ক্রেডিট নেয়ার সময় নয়। শহীদরা জাতীয় সম্পদ, তারা কোনো দলের সম্পদ নয়। তারা ১৮ কোটি মানুষের মাথার তাজ। যেখানেই খবর পেয়েছি শহীদ পরিবারের পাশে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে ছুটে যেতে চেষ্টা করেছি। শহীদরা আমাদের চিরঋণী করেছেন। তাদের প্রতি যদি দায়িত্ব পালন না করি তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। আজীবন শ্রদ্ধার আসনে রেখে ঋণ পরিশোধের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। শহীদদের সর্বোচ্চ মর্যাদায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রও যেন তাদের উপযুক্ত সম্মান দেয় এজন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলবো, সকল কিছু বাদ দিয়ে আহতদের চিকিৎসার দিকে হাত দিন। শহীদ পরিবারগুলো হাহাকার করছে, এখন বড়ই প্রয়োজন সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। সুচিকিৎসার অভাবে আহতদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকারের সবচাইতে বড় অগ্রাধিকার এটি হওয়া উচিত।’

ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ৫ আগস্ট থেকে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে। এই ফ্যাসিবাদ এমনি এমনি বিদায় নেয়নি। শুধু ফেনীতেই ১৩ জন শহীদ আর অসংখ্য আহতদের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে এই পরিবর্তন পেয়েছি। এই পরিবর্তনের পর আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে কোথায় যেতে চাই, পরিবর্তনের নায়কদের সাথে কী আচরণ করতে চাই তার পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।’

বিকালে তিনি দাগনভূঞা পৌরসভার আতাতুর্ক সরকারি মডেল হাই স্কুল মাঠে পথসভায় তিনি বক্তব্য দেন। ডা: শফিকুর রহমান আগামী দিনে ফেনী-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা: মো: ফখরুদ্দিন মানিক ও দাগনভূঞা উপজেলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শূরা সদস্য মেজবাহ উদ্দিন সাঈদের সমর্থনে সর্বস্তরের জনগণকে পাশে থাকার আহ্বান জানান। এ সময় জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নান, দাগনভূঞা উপজেলা আমির গাজী ছালেহ উদ্দিন, সোনাগাজী উপজেলা আমির মোহাম্মদ মোস্তফা, দাগনভূঞা পৌর আমির কামরুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।


আরো সংবাদ



premium cement
মানুষের কল্যাণের জন্যই বিএনপির রাজনীতি : ডা: শাহাদাত হোসেন গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা জড়িত : এইচআরডব্লিউ বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যুদ্ধ-পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা সরকারের সাথে নির্বাচন নিয়ে কমিশনের আলোচনা কেন নয় শাওনের পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন প্রেস সচিব চান্দিনায় সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধের মৃত্যু অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি সংস্কারে প্রয়োজন দেশপ্রেম ও সততা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে : প্রেস সচিব নির্বাচনের জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে : ইসি সানাউল্লাহ বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ : ৩ দিনে ক্ষতি দেড় কোটি টাকা

সকল