সাঈদীবিহীন চট্টগ্রামেরদ ঐতিহাসিক তাফসীর মাহফিল যেমন ছিল
- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:২৩
দীর্ঘ ১৭ বছর পর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলকে ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। পাঁচ দিনব্যাপী এই মাহফিলে ১৫ থেকে ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমাগম হয়। এখন চলছে মাহফিলের আয়োজক ও বক্তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনা। ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত হলেও, এই মাহফিলের মধ্য দিয়ে জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রামে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে পুরো পাঁচ দিনজুড়ে প্রায় সব বক্তার মুখেই ছিল আল্লামা সাঈদী প্রসঙ্গ।
অনেকেই আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। আবার আল্লামা সাঈদীর প্রসঙ্গ এলেই অঝোরে কান্না করতে দেখা গেছে উপস্থিত মুসল্লিদের। ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’ স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা।
ইসলামী ব্যাংকের নজু মিয়া হাট শাখার কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘এবারের মাহফিল সবদিক দিয়ে সফল ছিল, শূন্যতা ছিল শুধু আল্লামা সাঈদীর। এই তাফসির মাহফিলে যদি আরেকবার দেখতে পেতাম কোরআনের পাখিকে। যদি আমাদের আল্লামার দরাজ কণ্ঠে নাহমুাদুহু বলে আওয়াজ শুনতে পেতাম।’ এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
গত ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে ৩১ জানুয়ারি রাতে মাহফিল শেষ হয়। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলা এই মাহফিলে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এছাড়াও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন, চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, মহানগর জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ আরো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা অতিথি ছিলেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে চট্টগ্রামের প্যারেড মাঠে এই তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে আসছে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রাম। এ আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। তবে ২০০৬ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বাধার মুখে এই মাহফিল বন্ধ থাকে। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই মাহফিল ঘিরে তাই ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নামে।
সরজমিনে দেখা যায়, প্যারেড মাঠ ছাড়িয়ে জনতার ঢল বিস্তৃত ছিল কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। নগরের জামাল খান মোড় থেকে চকবাজার হয়ে কাতালগঞ্জ, চট্টেশ্বরী মোড়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, সিরাজুদ্দৌলা রোড, চন্দনপুরা, সাব এরিয়া, আন্দরকিল্লা, কাপাসগোলা, বহদ্দারহাট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় ধর্মপ্রাণ মানুষ ওয়াজ শুনেছেন। নারীদের জন্য চকবাজারের আশাপাশের এলাকায় ১ লাখ ৩০ হাজার নারীর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬টি বড় প্যান্ডেল ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
শেষের দিন চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। অনেক মানুষ প্যান্ডেল তো দূরের কথা বাকলিয়া এক্সেস রোড থেকেই ঢুকতে পারেননি। শেষ দিন সন্ধ্যা হতেই রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যেখানে প্রজেক্টর আছে বা মাইক আছে সেখানেই বসে পড়েছিল মানুষ। আশপাশের কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন সমাজ কল্যাণ পরিষদের স্বেচ্ছাসেবকরা।
জানা গেছে প্রায় ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় মাহফিল সুসম্পন্ন হয়। যানজট এড়াতে এবং জনসাধারণের অসুবিধা এড়াতে রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে মাহফিল শেষ করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. আ ক ম আব্দুল কাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘২০২৫ সালের চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দানের তাফসির মাহফিলের ইতিবাচক দিক হলো, এই মাহফিলের অধিকাংশ বক্তাই ছিলেন যুবক। আর ৮০ শতাংশ উপস্থিত মুসল্লির বয়স ৪৫ বছরের নিচে।’
মাহফিলের আরেক শ্রোতা এরশাদ রোমান বলেন, তাফসির মাহফিলের প্রধান মুফাসসিরের আলোচনা ছিলো প্রাঞ্জল ভাষায় অত্যদন্ত সাবলীল ও গোছানো, বাস্তবধর্মী ও তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়। আগামী বছর ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে পাঁচ দিনের পাঁচ দিনই বাদ মাগরিব বা বাদ ঈশা থেকে আলোচনায় পাবে এটাই ছিল বীর চট্টলাবাসীর প্রত্যাশা। প্রজেক্টের ব্যবস্থা উপস্থিতির তুলনায় কম ছিলো। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বক্তব্য বেশি ছিলো।’
অন্যদিকে চসিক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন মাহফিলে তার বক্তৃতায় বলেন, ‘আজ এই মাহফিলে এসে আমার খুব মনে পড়ছে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীর কথা। তিনি এই চট্টগ্রামে প্রতিবছর তাফসির মাহফিলে কোরআনের তাফসির করতেন। আমরা এই এলাকায় বড় হয়েছি। আমাদের ষৈষব-কৈশোর এখানে কেটেছে। আমরা সেসময় আল্লামা সাঈদীর মাহফিল শুনতাম।
২০১৮ সালের কাশিমপুর কারাগারের স্মৃতি তুলে ধরে ডা. শাহাদাত আরো বলেন, কারাগারের ভেতরে একটি ডেন্টাল হসপিটাল গড়ে তুলেছিলেন মীর কাসেম আলী সাহেব। আমি সেটা দেখে অবাক হয়েছিলাম। কারাগারে থেকেও জামায়াত নেতারা মানবকল্যাণের কথা ভেবেছেন। তিনি আরো বলেন, গত ১৬ বছরে আলেম সমাজকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। জামায়াত নেতাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।
মাহফিলের আয়োজক সংগঠন ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার বলেন, এই মাহফিল চট্টলাবাসীর জন্য আল্লাহর রহমত। এখানে দল-মত নির্বিশেষে সবাই এসেছেন। আমরা রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে দাওয়াত দেইনি। মানুষের ডিমান্ড অনুসারে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এই মাহফিল যদি উপস্থিত মানুষের একজনেরও নাজাতের উছিলা হয়, সেটাই আমাদের সন্তুষ্টি। এটাই আমাদের অ্যাজেন্ডা, উদ্দেশ্য। এর বাইরে আর কোনো উদ্দেশ্য নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা