০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`

আজ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ

আজ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ - ছবি : সংগৃহীত

আজ থেকে সেন্টমার্টিনে যেকোনো প্রকার পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আজ থেকে নয় মাস কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না। পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও বন্ধ থাকবে।

সরকারি বিধি নিষেধের অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে স্থানীয় প্রশাসন। এর আগে ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে নিবন্ধনের নিয়ম চালু করে পর্যটক যাতায়াত সীমিত করা হয়।

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুজিবুল হকের নেতৃত্বে সম্প্রতি পরিবেশবাদীদের ১০ সদস্যের একটি দল সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে এসেছেন। তারা জানান, পর্যটক সীমিত করায় দ্বীপে যত্রতত্র ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার, নানাভাবে পরিবেশ দূষণ এবং নির্বিচারে প্রবাল-কোরাল-পাথর উত্তোলন কমে এসেছে।

অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক বলেন, সেন্টমার্টিনে যে অবৈধ হোটেল-রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা প্রশাসনের কারো অজানা নয়।

তারপরও আশার বাণী হচ্ছে গত ডিসেম্বর থেকে পর্যটক সীমিতকরণের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে একদিকে যেমন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে গেছে। দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অনেকটা দূষণমুক্ত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা একটা পরিচ্ছন্ন দ্বীপ পাচ্ছেন, যা সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবাদীদের একটা বড় সাফল্য।

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধের পর দ্বীপ নিয়ে কী পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়।

জানা যায়, পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকার সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে পরিবেশ অধিদফতর। এই কর্মসূচিতে দ্বীপটিকে কয়েকভাগে বিভক্ত করে প্লাস্টিক বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে অভিযান চালানো হবে। এর বাইরে পর্যটক নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং একই সময়ে জীববৈচিত্র রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করার পরিকল্পনাও রয়েছে প্রশাসনের।

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: জমির উদ্দিন বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এরপর কেউ সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন কিনা, তা নজরদারিতে রাখা হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে ২ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানেই সেন্টমার্টিনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ সুরক্ষায় যে কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দাদের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এ সময় ভ্রমণের আগে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ট্রাভেল পাস নিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে হয়েছে পর্যটকদের। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সেন্টমার্টিনের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার আগে দ্বীপের বাসিন্দা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, পরিবেশকর্মীসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে ২৩০টি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। দ্বীপবাসীর কল্যাণে তাদের অবদান কতটুকু তা খতিয়ে দেখতে হবে। পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দ্বীপের মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

আগে পর্যটকবাহী ১২টির বেশি জাহাজ সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে ভিড়লে শক্তিশালী পাখার ঘূর্ণিপাকে সমুদ্রতলের বালু নীল জলের স্বচ্ছ পানিতে মিশে ঘোলাটে আকার ধারণ করতো। এসব বালু ও পলিথিনসহ বর্জ্যে মারা যেত প্রবাল-শৈবাল। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকের কারণে দ্বীপের কিছু প্রভাবশালী লাভবান হলেও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হয় না। অতিরিক্ত পর্যটকের উপস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে উল্টো তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
সাধারণত জুন, জুলাই, আগস্ট-এই তিন মাসে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় পর্যটক ও সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা সেন্টমার্টিনে তেমন যান না।

এই সময়টাতে প্রভাবশালীরা দ্বীপের ভ্রমণ নিষিদ্ধ এলাকায় রিসোর্টসহ নানা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আসছেন। এসব স্থাপনায় ব্যবহৃত হয় সৈকত থেকে তুলে আনা পাথর। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এবার যাতে পর্যটক না থাকার সময়ে কেউ এ ধরনের স্থাপনা তৈরি করতে না পারেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

পরিবেশ অধিদফতর সূত্র জানায়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতর ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী, সেন্টমার্টিনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০২০ সালের আগস্টে সেখানে প্রথম পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সরকারের তরফ থেকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) একটি সমীক্ষা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা শেষে জানায়, দ্বীপটিতে কোনোভাবেই পর্যটকদের রাতে থাকার অনুমতি দেয়া ঠিক হবে না।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
পরমাণু স্থাপনায় হামলা ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ দিকে নেবে : ইরান যানবাহন নিয়ন্ত্রণে যে নির্দেশনা দিলেন জিএমপি কমিশনার কোনো অনুদানই আমার মায়ের সমান নয় : শহীদ শাহিনুরের মেয়ে মোরেলগঞ্জে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার আরিচা-কাজিরহাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ফেরি চলাচল শুরু বইমেলা উপলক্ষে ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রবেশে বিধি নিষেধ থাকছে না ইসরাইলি স্পাইওয়্যার প্রতিষ্ঠানের নজরদারিতে ১০০ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী বান্দরবানে গভীর রাতে আ’লীগের ঝটিকা মাশাল মিছিল, পুলিশের অভিযান তাইওয়ানের সরকারি কর্মচারীদের জন্য ডিপসিক ব্যবহার নিষিদ্ধ বিজয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ডাসারে হাত-পা বাঁধা চা বিক্রেতার লাশ উদ্ধার

সকল