মিরসরাইয়ে ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় খাল খননে কৃষকদের বিক্ষোভ
- মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
- ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:১৩
মিরসরাইয়ে ক্ষতিপূরণ ছাড়া তিন ফসলি কৃষি জমির ওপর খাল খনন করায় বিক্ষোভ করেছেন শতাধিক কৃষক। এ সময় কৃষকদের সাথে সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের হাজিশ্বরাই ও জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে এ বিক্ষোভ করেন কৃষকরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) স্মলহোল্ডার অ্যাগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের হাজিশ্বরাই ও জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে ১.৫ কিলোমিটার বারোমাসী ছড়া খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়।
কৃষকদের অভিযোগ, কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ ছাড়া ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরদার এন্টারপ্রাইজ। কৃষকরা গত কয়েকদিন ধরে খাল কাটার বিরোধিতার পাশাপাশি বিক্ষোভ করে আসছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিন পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায়, বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) তমাল দাশ, বিএডিসি মিরসরাই (ক্ষুদ্রসেচ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, দুর্গাপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: শহিদ, দিদারুল আলম, দুর্গাপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, সদস্য মেজবাহ উদ্দিন।
গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বিএডিসি কৃষকদের কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে দেড় কিলোমিটার খাল খননের কাজ শুরু করেছে। আগে আমাদের জমিতে ছোট একটি ড্রেন ছিল। খননের ফলে এখন তা বড় খালে পরিণত হয়েছে। আমাদের জমির ওপর খাল কাটায় প্রায় দশ শতক জমি নষ্ট হয়ে গেছে। খাল কাটার পর পাড়ে রাখা মাটি একটি চক্র রাতের আঁধারে প্রতিরাতে নিয়ে বিক্রি করে ফেলে। ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ইউএনও মাঠে এসে কৃষকদের আশ্বস্ত করে গেছেন। ক্ষতিপূরণ না ফেলে আমরা বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলনে যাব।’
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিএডিসি কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ কিংবা কোনোরকম ক্ষতিপূরণ না দিয়ে খাল খনন করেছে। কৃষকরা গত এক মাস ধরে ক্ষোভে ফুঁসছেন। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দেয়ার জন্য আমরা ইউএনও এবং বিএডিসি কর্মকর্তাদের সরজমিন পরিদর্শনে নিয়ে আসি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
বিএডিসি চট্টগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী (নির্মাণ) তমাল দাশ বলেন, ‘উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামে বারোমাসী ছড়া খাল ১.৫ কিলোমিটার খননের জন্য সরদার এন্টারপ্রাইজ এ কাজটি পায়। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের পাওয়া কাজটি আগামী ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। ৩৩ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করে প্রায় ৬০০ মিটার খাল ইতোমধ্যে খনন করা হয়েছে। খাল খনন শুরু হওয়ার পর জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে খাল খননের বিরোধিতা করছেন। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) উপজেলার গোপিনাথপুর ও হাজিশ্বরাই গ্রামে কৃষি জমির ওপর দিয়ে ক্ষতিপূরণ ছাড়া খাল খননের বিষয়ে অভিযোগ করেছিল। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএডিসি প্রকৌশলীদের নিয়ে আমি সরজমিন পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য তাদের আবেদনসহ আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করব।