কক্সবাজারের সাবেক ডিসি, জজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৫
বাদির স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতি করে নিজের নাম কেটে দেয়ার মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো: রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। একইসাথে এ কাজে তাকে সহায়তা করার অভিযোগে কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ চারজনের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
অন্য আসামিরা হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো: জাফর আহমদ।
কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসী আব্দুল মজিদ এ নির্দেশ দেন।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বাদির স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতি করে নাম কেটে দেয়ার অভিযোগ আসামীদের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো: সিরাজ উল্লাহ বলেন, দুদকের দেয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত গত বৃহস্পতিবার আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: রিয়াজ উদ্দিন গত ১ জুলাই কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক-পরোয়ানা জারির আবেদন জানান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো: সাদিকুল ইসলাম তালুকদার।
কিন্তু মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক মো: রুহুল আমিনের নাম বাদ দেয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন বাদি কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। ওই মামলার তদন্ত শেষে গত ১ জুলাই আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। নথি জালিয়াতির ঘটনায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করায় সাবেক জেলা প্রশাসক ও জেলা জজ ছাড়াও আসামি করা হয়েছে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো: জাফর আহমদকে।
একই সাথে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা দু’জন হলেন দুদকের কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমান।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদির আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার আরজির সব কাগজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রুহুল আমিনসহ ২৮ জনের নামসহ আবেদনটি ওই দিন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের (অনুসন্ধান ও তদন্ত) পরিচালক বরাবর পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। আবেদনটি দুদকে পাঠানোর জন্য ২০ নভেম্বর সকাল ১০টায় আদালতের কর্মচারী (এমএলএস) সৈয়দ আকবরকে কক্সবাজার ডাকঘরে পাঠানো হয়।
ডাকঘরে পৌঁছানোর আগে তাকে আবার আদালতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর খামটি স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলামের কাছে পাঠানো হয়। এরপর নানা কৌশলে কাগজপত্র থেকে জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনের নাম বাদ দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে দুদক জানায়, ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ মোট আসামি ছিলেন ২৮ জন। পরে তিনটি পৃষ্টায় পরিবর্তন করে ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনকে বাদ দিয়ে ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: জাফর আলমকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। আসামি ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জন করা হয়, এতে বাদির জাল স্বাক্ষর করা হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখায় ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়। বাদির জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা