১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১১ রজব ১৪৪৬
`

চাঁদপুরে অর্ধেকে নেমে গেছে সবজির দাম, দুশ্চিন্তায় কৃষক

- ছবি : ইউএনবি

পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত চাঁদপুরের সব হাটবাজারে বেশিভাগ শাকসবজির দাম তিন থেকে চার সপ্তাহ আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে স্বস্তি এলেও ফসল চাষের খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাচীনতম পাল বাজারের পাইকারি আড়তে শীতকালীন শাকসবজির সমাহার।

বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা জানান, দৈনিক কয়েক টন শাকসবজি আড়তে আসছে।

প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাকসবজি নিয়ে শহরের ১০ নম্বর ঘাটে ভিড়ছে নৌকা ও ট্রলার। এসব নৌ-যান চাঁদপুর, হাইমচর ও মতলব উত্তরের প্রায় ৩০টি চরাঞ্চল থেকে তরতাজা শাকসবজি নিয়ে এ বাজারে আসে।

সেসব পণ্য ঘাটে নামানোর পর বাজারের ২০ থেকে ২৫টি পাইকারি আড়তে নেয়া হয়। এরপর পাইকারি মূল্যে সেখান থেকে কিনে নিয়ে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তা বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ব্যস্ততম বিপনীবাগ বাজার, পাল বাজারের খুচরা বাজার, নতুন বাজার, পুরান বাজার, ওয়ারলেস বাজার, মিশন রোডের চৌরাস্তা বাজার, শহরতলীর আনন্দবাজার, বাবুরহাট, শাহতলী ও মহামায়া বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিভাগ শাকসবজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কম দামে সবজি পেয়ে ক্রেতারাও খুশি।

এসব বাজারে বর্তমানে নতুন আলু প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, অথচ ১০ থেকে ১৫ দিন আগেও তা বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি। এছাড়া পেঁপে ৩০ টাকা কেজি, ভালো মানের টমেটো ৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, মূলা ২০ টাকা কেজি, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা প্রতি পিস যা ৮ থেকে ১০ দিন আগে বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, বাঁধাকপি ৩০ টাকা পিস, যা ৮ থেকে ১০ দিন আগে বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, ব্রকলি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, কাঁচা কলার হালি ৩০ টাকা, করলা ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি, লাউ (মাঝারি সাইজ) ৪০ টাকা পিস, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি, ধনেপাতা ৪০ টাকা কেজি, লেবুর হালি ১৫ থেকে ২০ টাকা, ধুন্দল ও শসা ৩০ টাকা কেজি এবং খিরার কেজি বর্তমানে ২০ টাকা।

এছাড়া লালশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, কুমড়া শাক, মূলা শাক, কলমি শাক, কলাই শাকসহ সব ধরনের শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১০ থেকে ১৫ দিন আগেও এগুলোর দাম ছিল ৫০ টাকার আশপাশে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, শহরের সব বাজারেই আজকাল শাকসবজির আমদানি বেড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে নৌ ও সড়ক পথে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি আসছে, তাই দাম পড়ে গেছে। ফলে ব্যবসা চালাতে তাদের মূলধনও কম লাগছে।

এদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে চাষ করা পেঁয়াজ-রসুন বাজারে ঢোকার সাথে সাথে এগুলোর দামও পড়ে গেছে। কিছুদিন আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১১০ টাকা, আর এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। ২১০ টাকার রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরে এবার এক হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ-রসুনের চাষ হয়েছে। এখান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল এবার ১০ হাজার টন যা গতবারের তুলনায় বেশি।

স্থানীয় পর্যায়ে পেঁয়াজ-রসুনসহ সব ধরনের পণ্য উৎপাদন করতে পারলে বিদেশের ওপর আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমবে। এতে পণ্যের দাম কমায় ক্রেতারা যেমন উপকৃত হবেন, কৃষকরাও সার্বিকভাবে লাভবান হবেন বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোবারক হোসেনের।

তিনি বলেন, আগামী মার্চের শেষের দিকে ব্যাপক পরিমাণে নতুন পেঁয়াজ-রসুন বাজারে আসা শুরু হবে। তখন দাম আরো নিম্নমুখী হবে। এছাড়া, জেলার উঁচুভূমি, নদীর পাড় ও বিভিন্ন চরে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রচুর শীতকালীন শাকসবজি উৎপন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, শাকসবজির দাম কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। শীতের শুরুতেই ফসলের দাম পড়ে যাওয়ায় চাষের খরচ তারা তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

কৃষকদের দাবি, যে হারে (শাকসবজির) দাম কমছে, তাতে লাভ তোলা তো পরের কথা, শেষপর্যন্ত চাষের খরচ উঠবে কি না জানি না। এ বছর ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। আবার বন্যায় অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় ন্যায্য দাম না পেলে আগামীতে আলুসহ অন্যান্য শাকসবজির উৎপাদনে আমরা আগ্রহ হারাব।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement