লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত ৫
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:১০
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের আজ বুধবার ভোরে একটি ফিলিং স্টেশনে বাসে গ্যাস নিতে যেয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দু'জন নিহত হয়েছেন। মৃতরা হচ্ছেন পৌরসভার সাহাপুর এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে আবুল কালাম (২২) ও রামগতির চরসীতা এলাকার সাহাবুদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসেন (৩৯)। গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। আহতদের ঢাকা ও নোয়াখালীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার ভোর ৪টার দিকে শহরের মুক্তিগঞ্জ এলাকায় গ্রীন লীফ ফিলিং স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দু'মাস আগেও এ স্টেশনে অন্য একটি বাসে একই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই সময় তিনজন মারা যান। আহত হন ২০ জন। গ্যাস সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্মমানের হওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করছে জেলা প্রশাসন। দু'জনের মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার ও পুলিশ সুপার আকতার হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে আল মদিনা পরিবহন নামে একটি বাস গ্রীন লাইফ ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে যায়। বাসে গ্যাস দেয়ার সময় হঠাৎ সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে চারদিক ধোয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলে স্টেশনে থাকা সিএনজিচালকরা ছুটাছুটি করে। এসময় পাম্পের পাশে থাকা রং মিস্ত্রি আবুল কালাম ঘটনাস্থলে মারা যান। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে নোয়াখালী নেয়ার পথে মারা যান বাসচালক রুবেল হোসেন। এসময় আবুল হোসেন, নাইম উদ্দিন ও হোসেন আহমেদ নামে আরো তিনজন গুরুতর আহত হয়। নিহত রংমিস্ত্রির লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে সদর, পরে ঢাকা ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে নাইম ও আবুল হোসেনের অবস্থায় আশঙ্কাজনক।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার ও পুলিশ সুপার আক্তার হোসেনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে আহত এবং নিহত দু'জনের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়ার কথা আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
স্থানীয় বাসিন্দা নিশান ও সিএনজিচালক সেলিম উদ্দিন গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বলেন, ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানায়, একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। দু'মাসের ব্যবধানে একই স্টেশনে বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেনা গ্যাস পাম্প কর্তৃপক্ষ। তাই তদন্ত করে পাম্প মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহবান জানান বিক্ষুদ্ধ চালকরা। তবে গ্যাস পাম্প কর্তৃপক্ষ বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার যাচাই-বাছাই করে গ্যাস দেয়া হচ্ছে। কোনো অনিয়মের সুযোগ নাই।
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রনজিত কুমার বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। এর মধ্যে একজন মারা যান। তিনজন আহত হন। তবে বাসের গ্যাস সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্মমানের হওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়নাল আবেদিন বলেন, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ঘটনাস্থলে একজন মারা যান। আহত ৩জনের মধ্যে ২ জনের অবস্থায় আশংকাজনক। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
এদিকে পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন বলেন, এর আগের ঘটনার তদন্ত মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিন্মমানের সিলিন্ডারের সত্যতা মিলছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারটি মেয়াদ উত্তীর্ণও নিম্মমানের হওয়ায় এ দুূর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করছে জেলা প্রশাসন। উক্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হচ্ছে। আহত এবং নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ অক্টোবর রাতে এ গ্যাস পাম্পে মেঘনা পরিবহন নামে একটি বাসে গ্যাস নেয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে সদর উপজেলার চরমনসার বটুমিয়ার ছেলে সুমন হোসেন , বাঞ্চানগর এলাকার সুজামিয়ার ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া ও হৃদয় হোসেনসহ তিনজন মারা যায় । এসময় আহত হয় ২০ জন। এ নিয়ে গত দু'মাসে এ গ্যাস পাম্পে দুটি দুর্ঘটনা পাঁচজনের প্রাণহানি এবং ২৩ জন আহত হন।
সূত্র : বাসস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা