আলিফ হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি হেফাজতের
- আবুল বাশার, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম)
- ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২০:২৬
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার ও উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত নেতারা বলেছেন, ‘ইসকন শুধু উগ্রবাদী সংগঠন নয়। এটি রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন। তাদের কার্যক্রম দেখে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী নয়। বিদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে ইসকন। তাই এদেরকে নিষিদ্ধ করে সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।’
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) জুমার নামাজ শেষে হেফাজতের হাটহাজারী উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় হেফাজতের উপজেলা সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ আলী কাসেমীর সভাপতিত্বে উপজেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান সিকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আসাদুল্লাহ আসাদের যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম মেহেদী, মাওলানা শফিউল আলম, নূর মোহাম্মদ, মাওলানা হাফেজ আব্দুল মাবুদ, মোরশেদ আলম, মাওলানা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসমাইল, হাফেজ আমিনুল হক, মাওলানা জাহাঙ্গীর জাফরাবাদী, মাওলানা শাহজাহান হাবিবী, আবু তাহের রাজিব, মাওলানা হাফেজ মহিউদ্দিন, মো: রাশেদ, মাওলানা ফোরকান আলী, মাওলানা হাফেজ সাইফুল ইসলাম, মাওলানা মো: জিয়াউল হক প্রমুখ।
সমাবেশে হেফাজত নেতারা দাবি করে বলেন, ‘ইসকন একটি আন্তর্জাতিক উগ্রবাদী সংগঠন। তারা আদালতের কাজে বাধা দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে হত্যা করে তার প্রমাণ দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের দাবি, দ্রুততম সময়ে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আইনজীবীকে হত্যা করার দায়ে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। এ সময় দাবি আদায়ে আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন বক্তারা।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ওরফে চন্দনধর একজন সাম্প্রদায়িক, ভূমিদস্যু ও দেশদ্রোহী। হাটহাজারী মেখলে পুন্ড্ররিকধামে ধর্মীয় আচার শিখানোর নামে সে শিশু-কিশোরদের যৌন নির্যাতন চালানোর অসংখ্য প্রমাণ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া সেখানে পতিত ফ্যাসিস্টের লালিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আশ্রয় নিয়েছে মর্মে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ সময় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করা এবং হাটহাজারী মেখল ইউনিয়নে অবস্থিত পুন্ড্ররিকধামে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনার দাবি জানান বক্তারা।
এছাড়া চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার নিয়ে ভারতের নিন্দা প্রকাশের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে কাকে গ্রেফতার করবে, কাকে ছাড়বে এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে ভিন্ন কোনো রাষ্ট্র মাথা ঘামানোর অধিকার রাখে না। একজন রাষ্ট্রদ্রোহীর পক্ষে কথা বলে ভারত এ দেশে ঔপনিবেশবাদ কায়েম করতে চায়।’
হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলার সভাপতি মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আলী কাসেমী বলেন, ‘এ দেশে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজীর স্থাপন করেছি। অথচ ভারতে মুসলমানরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত। ভারত নিজের দোষ ঢাকতে এ দেশে সংখ্যালঘুর খেলা খেলতে চাইছে। বাংলার জমিনে এ খেলা কখনোই সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ।’
সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান সিকদার বলেন,‘বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার বিভিন্ন চক্রান্তের মাধ্যমে এ দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অনন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করে আবারো দেশে ঢোকার পায়তারা করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে তা হতে দেবো না।’
হেফাজত নেতারা আরো বলেন, ‘আমরা সবসময় শান্তির পক্ষে। আমরা চাই হিন্দু-মুসলমান মিলে সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ি। কিন্তু উগ্রবাদী ইসকন এই শান্তির পথে বার বার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিতে হলে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাই দিল্লিবিরোধী যুদ্ধের প্রথম শহীদ। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাইনা। তার রক্ত বৃথা যেতে দিবো না। আলিফয়ের শাহাদাতের মাধ্যমে যে দাবানল জ্বলে উঠেছে তা দিল্লি পর্যন্ত গড়াবে।’
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ডাকবাংলো থেকে বাসস্ট্যান্ড ও কলেজ গেট হয়ে হাটহাজারী মাদরাসার সামনে এসে দোয়ার মাধ্যমে সমাবেশ শেষ করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়।