উখিয়ার সীমান্তে ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার
- হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)
- ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:২৮, আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:২৯
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে এক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ফারিরবিল সীমান্ত এলাকা থেকে এসব ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) পালংখালী বিওপির টহলদল মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে পরিত্যাক্ত অবস্থায় মালিকবিহীন এক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। মাদককারবারিদের শনাক্তকরণ কার্যক্রমও চলমান রয়েছে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জনতার আস্থা হারিয়েছে পুলিশ।
৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে কার্যত ইয়াবা যোগানের প্রধান মোকাম উখিয়া ও টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযান অনেকটা থমকে আছে। এ সুযোগে পালিয়ে থাকা বড় বড় ইয়াবাকারবারিরা স্ব-মূর্তিতে এলাকায় ফিরে এসে প্রকাশ্যে আবার এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক শক্তিশালী হয়ে ওঠা ইয়াবাকারবারি চক্রটি বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারাই মূলত ইয়াবার বিস্তার করছে বাংলাদেশে। প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনো রোহিঙ্গা ইয়াবা ও অস্ত্রসহ প্রশাসনের কাছে ধরা পড়ছে। উখিয়া-টেকনাফের বিশাল পাহাড়ি এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প হওয়ায় সহজেই ধরা পড়ে না ইয়াবা মজুদকারী ও কারবারিরা। তবে কিছু পাচারকারী ও মাদককারবারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অধরায় রয়ে গেছে রাঘববোয়ালরা। এই কারণেই বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবাকারবার এমনটা জানিয়েছেন সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সেনা নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার আগে সেখানে রোহিঙ্গাদের অনেকেই ছিলেন ইয়াবা ডন। সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার পর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তাদের সেই সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেছে।
স্থানীয়রা জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইয়াবা (মাদকের) ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ৩৪টি ক্যাম্পে ইয়াবাসহ মাদক বিক্রির চিহ্নিত আখড়া আছে পাঁচ শতাধিক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরেও রোহিঙ্গারা ইয়াবা বহন করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু’দেশের একাধিক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এদের নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ইয়াবা পাচারের সাথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের চিহ্নিত সিন্ডিকেটগুলোও তাদের আশ্রয়দাতা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। তাদের কারণে ইয়াবার আগ্রাসন প্রতিটি ঘরে রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। নষ্ট হয়ে পড়েছে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি শৃঙ্খলা।
জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে বেশিভাগ ইয়াবা আনা হয় বাকিতে। বাংলাদেশে আনার পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা না পড়লে সেগুলো বিক্রি করে নগদ ও হুন্ডির মাধ্যমে বিক্রিত অর্থ মিয়ানমারে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছানো হয়। ইয়াবা কারবার যারা বিনিয়োগ করে, ইয়াবাকারবারিদের আশ্রয় দেয় তাদের বেশিভাগ বিভিন্ন সংস্থার কাছে অনেকটা চিহ্নিত বলে জানা যায়।
৫ আগস্টের পর পুরো কক্সবাজার জেলায় পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান থেকে নিজেদের অনেকটা গুটিয়ে নেন। পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে পুরো কক্সবাজার জেলায় সব ধরনের পুলিশের সবাইকে গণবদলি করা হয়। বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা পুলিশ সদস্যরা এ অঞ্চলে একেবারেই নতুন। তারা এখানকার পরিবেশ, সংস্কৃতি, ভাষা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। গণবদলির প্রায় দু’মাস পার হতে চললেও এখনো তারা এলাকা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারছেন না। আবার অনেক চিহ্নিত মাদককারবারি পলাতক।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক আইনশৃঙ্খলা অনেকটা ভালো আছে। মাদকসহ যেকোনো অপরাধ নির্মূলে সচেষ্ট রয়েছে।
উখিয়া সদর রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান ইয়াবা বিস্তারে কিশোর ও যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, ইয়াবার আগ্রাসন এখন প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে, পাড়া-গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাপক আকারে রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়ার পর থেকে ইয়াবার পাচার, ব্যবসা, সেবন, বেচাকেনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে।