১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কোমায় থাকা ছেলের মুখে মা ডাক শোনার অপেক্ষায় মাহিনূর বেগম

কোমায় থাকা ছেলের মুখে মা ডাক শোনার অপেক্ষায় মাহিনূর বেগম - ছবি : সংগৃহীত

কোমায় থাকা ছেলে হাসানের মুখে মা ডাক শোনার অপেক্ষায় আছেন মাহিনূর বেগম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন হাসান। দীর্ঘ এক মাস চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন তিনি। পরে নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের এইচডিওতে।

জানা যায়, গত ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে হাসপাতালেই দিন কাটছে ২২ বছর বয়সী মো: হাসানের। তার সাথে হাসপাতালে নির্ঘুম দিন কাটছে চল্লিশোর্ধ্ব মা মাহিনূর বেগমের। ছেলের মুখে কোনো কথা নেই। কোমায় থাকা ছেলের মুখে কবে মা ডাক শুনবেন সে অপেক্ষায় দিন কাটছে তার।

আহত হাসান অনেক কষ্টে হালিশহর গরীবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পারিবারিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পড়ালেখার ইতি টানতে হয়েছে তাকে।

এরপর কাজ শুরু করেন গ্যারেজে। আর মা কাজ নেন গার্মেন্টসে। অনেক কষ্টে ছোট দুই বোন ও হাসানকে লালন-পালন করেছেন মা। একা সংসার সামলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও করিয়েছেন তিনি।

ডাক্তারের বরাত দিয়ে আহত হাসানের মা মাহিনূর বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসান কোমায় আছে। মাঝে মাঝে কোমা থেকে জাগে, কিন্তু কোনো কথা বলে না। শুধু চোখ খুলে তাকায়।

হাসপাতালের করিডোরে অপেক্ষায় দিন কাটছে মাদরাসাপড়ুয়া ১৭ বছর বয়সী বোন সুমাইয়া ইয়াছমিন সূবর্ণার। তিনি হাসপাতালে আছেন এক মাস ১৭ দিন ধরে।

সূবর্ণা বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। সেই থেকে বাবার স্নেহ ভালোবাসায় আমাদের বড় করেছেন ভাইয়া। পড়ালেখা করিয়েছেন। কখনো বাবার অভাব বুঝতে দেননি। যখন যা চেয়েছি সাথে সাথে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মন খারাপের দিনে এক সাথে ঘুরতে নিয়ে যেতেন ভাইয়া। ভাইয়ার এ অবস্থা দেখে মা প্রায়ই বেহুঁশ হয়ে পড়েন। তাই মাকে একা রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। মায়ের সাথেই আজ প্রায় সাড়ে তিন মাস হাসপাতালের করিডোরে দিন কাটছে আমাদের।’

আরেক বোন সুলতানা আখতার জয়নব। বয়স ১৯ বছর। তার বিয়ে ঠিক হয়েছে মামাতো ভাইয়ের সাথে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের হালি শহরের একটি কাওমী মাদরাসায় পড়ছেন। বর্তমানে মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন।

জয়নব বলেন, ‘ভাইয়া নিজে পড়ালেখা না করে আমাদের পড়িয়েছেন। অনেক কষ্টে আমাদের মানুষ করেছেন। ভাইয়ার সুস্থতার জন্য মহান রবের কাছে প্রতিনিয়তই দোয়া করছি। ভাইকে নিয়ে অনেক আশা ছিল আমাদের দু’বোনের। কিন্তু আজ ভাই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে’, বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

গত ৪ আগস্ট আহত হওয়ার পর হাসানকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়। দীর্ঘ এক মাস আইসিইউতেই ছিলেন হাসান। পরে নেয়া হয় সিএমএইচে। বর্তমানে তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসানের মা।

হাসানের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্ণ চরে। বাবা মোহাম্মদ সেলিম গ্রামেই ছোট একটি চায়ের দোকান করতেন। ২০০৮ সালে এক দুর্ঘটনায় হাসান তার বাবাকে হারান। এরপর শুরু হয় পারিবারিক টানাপোড়েন। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন হাসান।

গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে যোগ দেন হাসান ও তার বন্ধু শহিদুল ইসলাম সৈকত। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শহিদুল ইসলাম সৈকত বলেন, ৪ আগস্ট পূর্বঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিই আমরা দু’বন্ধু। দুপুর ২টার দিকে আমাদের অবস্থান ছিল টাইগারপাসের সিআরবি রোডে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পাশে পুলিশ, অপর পাশে আওয়ামী লীগের লোকজন অবস্থান করছিল। পুলিশ তখন টিয়ারশেল ছুঁড়ে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় যখন পুরোটা অন্ধকার তখন অপর দিক থেকে গুলি এসে লাগে হাসানের মাথায়। গুলি এক পাশে লেগে অপর পাশে বেরিয়ে যায়। তখন আমি তাকে সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

তিনি বলেন, হাসান আইসিইউতে থাকার শুরু থেকেই আমি তার সাথে ছিলাম। অনেকে সহযোগিতা করেছে। ঢাকা থেকে সমন্বয়ক সারজিস ভাই এসেছেন। তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন। তারা এক লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, গুলি লেগে হাসানের মাথা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু মগজও বেরিয়ে গেছে। চিকিৎসার খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে।

একমাত্র ছেলের এই অবস্থায় দিশেহারা হাসানের মা মাহেনূর বেগম। তিনি বলেন, এখন শুধু আল্লাহকে ডাকছি। জানি না এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা। ১৬ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে যে কষ্ট পেয়েছি, সেটা তিন সন্তানকে দিয়ে লাঘব করার চেষ্টা করেছি। এখন আবার সেই কষ্ট।

তিনি বলেন, ছেলেটাকে এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছি। গত বছর ছোট্ট একটা কাজে যোগ দিয়েছে। আমি এতদিন চাকরি করেছি। মেয়েরা বড় হয়েছে। ভাবছি এবার অবসর নেব। এখন এই অবস্থায় আমি একেবারে দিশেহারা। কী করব, কী হবে বুঝতে পারছি না।

আহত হাসান চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর নয়া বাজারে পরিবার নিয়ে ভাড়াবাসায় থাকতেন। এখন পুরো পরিবারের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement
ইসরাইলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ‘মার্কিন আস্থা ক্ষুণ্ণ করবে’ গাজায় সাহায্য ও ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানের আহ্বান জি-২০ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উঠছে গাজীপুরে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, বন্ধ যান চলাচল জাতিসঙ্ঘের আলোচনায় কৃষকদের জন্য জলবায়ু তহবিলের অংশ দাবি কক্সবাজারে সাবেক প্রতিমন্ত্রী গাজীর এপিএস গ্রেফতার ভারতে পালানোর সময় গাজীপুর মহানগর আ’লীগ নেতা আটক টেকনাফে ৩১ নারী-পুরুষ উদ্ধার, আটক ২ অপহরণকারী উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন সাদপন্থীরা আদানির সাথে আ’লীগ সরকারের করা চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ

সকল